বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:প্রবাসী (পঞ্চদশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).pdf/১০৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

>bb এবং নিউরান্স উইকেও তদ্রুপ। জামেকাদ্বীপের সরকারী বিদ্যালয়গুলি অবৈতনিক। অষ্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসে প্রাথমিক ও উচ্চতর বিদ্যালয়গুলি অবৈতনিক ; ভিক্টোরিয়ার বিদ্যালয়ের শিক্ষা অবৈতনিক কুইন্সল্যাণ্ডে প্রাথমিক শিক্ষা তদ্রুপ , দক্ষিণ অষ্ট্রেলিয়ায় বিনাবেতনে লেখা পড়া শিথান হয়। নবজীলণ্ডে বিদ্যালয়ের শিক্ষা অবৈতনিক। দক্ষিণ আমেরিকার আগেণ্টাইন সাধারণতন্ত্রে প্রাথমিক শিক্ষা অবৈতনিক। বেলজিয়মে ত্রসেলস, ও লুভেন বিশ্ববিদ্যালয় দুটিতে বিনাবেতনে শিক্ষা দেওয়া হয় ; অবৈতনিক বেসরকারী ইস্কুলও অনেক আছে। দক্ষিণ আমেরিকার সালভাডর, পারাগুয়ে, হণ্ডুরাস, গোয়াটিমালা, ইকোয়েডর, কোলোম্বিয়া ও বোলিভিয়, এই সাধারণতন্ত্রগুলিতে প্রাথমিক শিক্ষা অবৈতনিক। চিলিতে এবং ব্ৰেজিলেও সৰ্ব্ববিধ শিক্ষা ঐরূপ। বুলগেরিয়াতেও তাই। ডেন্মার্কের সরকারী ইস্কুলগুলি দুএকটি মধ্যশ্রেণীর ইস্কুল ছাড়া, অবৈতনিক। ফ্রান্সের সমুদয় সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় অবৈতনিক। জাৰ্ম্মেন সাম্রাজ্যের প্রশিয়া ও অন্যান্য রাজ্যে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বেতন লওয়া উঠাইয়া দেওয়া হইয়াছে। হাইটদ্বীপ সাধারণতন্ত্র। ইহার অধিকাংশ অধিবাসী নিগ্রে। এখানে প্রাথমিক শিক্ষা অবৈতনিক । ইটালীর নিম্ন ও উচ্চ প্রাথমিক স্কুলসকলে বেতন লওয়া হয় না। জাপানের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলিতে বেতন লওয়া হয় না। ১৯০২ খৃষ্টাব্দে শতকরা কেবল ১৪ জন ছাত্রছাত্রী বেতন দিয়াছিল। এখন কাহাকেও দিতে হয় না। মেক্সিকোতে ছাত্র ও ছাত্রীদিগকে বেতন দিতে হয় না। মন্টিনিগ্রোতেও তাই। পেরুতে সরকারী পাঠশালাসকলে ৰেতন লওয়া হয় না। রুমেনিয়ায় শিক্ষা অবৈতনিক । সাণ্টে ডোমিঙ্গোর পাঠশালাসকলে বেতন লওয়া হয় না। সার্ডিয়াতেও তাই। স্পেনের স্থলসকলের অধিকাংশ বালকবালিকা বিনাবেতান শিক্ষা পায়। স্বইডেনে বালকবালিকার বিনাব্যয়ে প্রাথমিক শিক্ষা পায়। সুইজারল্যাণ্ডেও তাই । এই দেশে পাঠশালার ছেলেমেয়ের স্থল হইতে বিনামূল্যে পুস্তক, প্লেট, কাগজ, কলম, পেন্সিল পায়। অন্য অনেক দেশেও এইরূপ ব্যবস্থা আছে। তুরস্কেও বিন ব্যয়ে প্রবাসী—জ্যৈষ্ঠ, ১৩২২ [ ১৫শ ভাগ, ১ম খণ্ড প্রাথমিক শিক্ষা দেওয়া হয়। ভেনিজুয়েলার বন্দোবস্তও ঐ প্রকার। - অতএব দেখা যাইতেছে, পৃথিবীর প্রায় সমুদয় সভ্য দেশে অন্তত: প্রাথমিক শিক্ষা অবৈতনিক। ধনশালী দেশে যেমন, অপেক্ষাকৃত দরিদ্র দেশেও তেমনি। ভারতবর্ষে কেন সমুদয় বালকবালিকাকে বিনাব্যয়ে প্রাথমিক শিক্ষা পাইবার অধিকারী করা হইতেছে না ? যিনি যে উপায়ে পারেন গবর্ণমেণ্টকে এই প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করুন, এবং নিজেও জ্ঞান দান করুন। সম্পাদকের কৰ্ত্তব্য । সম্পাদকের কাজ ভাল করিয়া করিতে হইলে যেরূপ শিক্ষার প্রয়োজন, ভারতবর্ষে সেরূপ শিক্ষা দিবার বন্দোবস্ত কোথাও নাই। কেহ কেহ ভাল করিয়া সাধারণ শিক্ষা পাইয়া সম্পাদক হন ; কেহ কেহ তাহার উপর কোন যোগ্য সম্পাদকের অধীনে কাজ করিয়া খবরের কাগজ চালাইবার বিশেষ শিক্ষা লাভ করেন। অনেকে ভাল করিয়া সাধারণ শিক্ষা বা কাৰ্য্যতঃ খবরের কাগজ চালাইবার শিক্ষা না পাইয়াও সম্পাদকের কাজে প্রবৃত্ত হন। কিন্তু আমরা যেভাবেই কাজে প্রবৃত্ত হইয়া থাকি, চেষ্টা করিলে অনেক বিষয়ে জ্ঞানলাভ করিতে পারি। সাধারণ লেখাপড়া ছাড়া, সম্পাদকদের ইতিহাস, অর্থনীতি, রাষ্ট্রীয় বিজ্ঞান (political science), Torox (sociology), Asaxifassà (jurisনানা লৌকিক ও বৈষয়িক ব্যাপারের সাংখ্যিকতত্ত্ব statistics), বাৰ্ত্তাশাস্ত্র, পৌর ও জনপদবর্গের অধিকার ও কর্তব্য ( civics ), নানাদেশে গ্রামের সহরের ও সমস্তদেশের সাৰ্ব্বজনিক কাজ কিরূপে সম্পন্ন হয় তাহার বৃত্তান্ত, নানাদেশের শিক্ষার শাস্তিরক্ষার ও স্বাস্থ্যরক্ষার বিবরণ, কৃষি বাণিজ্য ও শিল্পের উন্নতির উপায়, প্রভৃতি জানা আবশ্বক। আমরা এসব বিষয় অল্পই জানি। কিন্তু তথাপি হাল ছড়িয়া দিয়া কেবল শূন্যগর্ভ মুরুলিয়ানা এবং ফাক প্রশংসা নিদা বা গালাগালিকেই আমাদের হাতের একমাত্র হাতিয়ার করিয়া বসিয়া থাকিলে চলিবে না। দেশের স্বাস্থ্য কেমন করিয়া ভাল হয়, কৃষি শিল্প ও বাণিজ্যের উন্নতি কেমন করিয়া হয়, শিক্ষার বিস্তৃতি ও prudence), **satov ( criminalogy ), ২য় সংখ্যা ] উংকান কিরূপে इ, কি উপায় অবলম্বন করিলে আমরা রাষ্ট্ৰীয় নানা অধিকার লাভ করিতে পারি, এবং লাভ করিয়৷ তদনুরূপ কৰ্ত্তব্য পালন করিতে পারি, দামাজিক কুরীতিসকল যে কুরীতি তাহা দেশবাসীকে সুস্পষ্ট প্রমাণ দ্বারা বুঝাইয়া দিয়া কেমন করিয়া তৎসমুদয় উন্মুলিত করা যায়, ইত্যাদি নানা বিষয়ে আমাদিগকে লিখিতে হয়। কিন্তু সম্পাদক বলিয়। আমরা সবজান্ত নহি । বহুবিষয়ের জ্ঞানও আমাদের নাই। আমরা প্রত্যেকে যদি অন্ততঃ একএকটা বিষয় পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে জানিতে চেষ্টা করি, তাহা হইলে, সমুদয় সম্পাদকগণের সম্মিলিত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতায় দেশবাসী কৰ্ত্তব্যসম্বন্ধে আলোক পাইয়। পথ চিনিয়া লইতে পারে। কিন্তু এখন অবস্থা এরূপ যে আমরা কেবল পাঠকদিগকে বলি, হ্যান কর, ত্যান কর, কিন্তু তাহারা যদি আমাদিগকে শিক্ষা স্বাস্থ্য শিল্প বা অন্য কোন বিষয়ে কেজো রকমের কোন একটি বিশদ প্রণালী দেখাইয়া দিতে বলেন, তাহা হইলেই আমরা বিপদে পড়ি। দৃষ্টান্তস্বরূপ লোকশিক্ষার কথাই ধরুন। এই কাজ যাহার হাতে কলমে করিতেছেন, তাহারা যদি সব বৃত্তান্ত খবরের কোগজে ছাপেন ত ঐক্কপ কাজ করিতে ইচ্ছুক অপর লোকদের সুবিধা হয়। কেমন করিয়া স্কুল স্থাপিত হইল, ছাত্র কাহারা, শিক্ষক কাহার, ছাত্রসংগ্রহ কেমন করিয়া হইল, কোন সময়ে কতক্ষণ শিক্ষা দেওয়া হয়, কি কি বিষয় শিথান হয়, স্কুলের ব্যয় নির্বাহ কেমন করিয়া হয়, বৎসরের কোন কোন মাসে স্কুলের ছুটি থাকে, পুস্তক পড়ান ও বাচনিক উপদেশ দেওয়া ব্যতীত আর কি কি উপায়ে শিখান হয়, কি কি পুস্তক পড়ান হয়, এইরূপ নানা কথা লেখা যাইতে পারে। জ্ঞাপন । নিজের বা নিজের কাজের সম্বন্ধে নানাভাবে নানাস্থানে নানা কাগজে বলান ও লেখান দুই প্রকার উদ্দেশ্যে দুই রকমে হইতে পারে। একরকম হ’চ্চে আপনাকে জাহির করা ; নিজের নাম নিজের খ্যাতি সৰ্ব্বত্র বিস্তারিত হয়, তাহার চেষ্টা দেখা ; সভাসমিতিতে সামনের আসনে, সভাপতির পাশে, উচ্চমঞ্চে, ঠেলাঠেলি করিয়া আসন দখল বিবিধ প্রসঙ্গ—জ্ঞাপন כה"bג করা। আর একরকম হচ্চে, কোন সংকৰ্ম্মের অঙ্গুষ্ঠাতা যখন সেই কার্ষ্যে বহুলোকের যথেষ্ট পরিমাণ সাহায্য পাইবার জন্য, নানাপ্রকারে সর্বদা সেই ভাল কাজটিকে সৰ্ব্বসাধারণের চোখের সামনে রাখিতে চান। এরূপ করিতেও বিনয়ী আত্মগোপনশীল লোকদের নিতান্ত সঙ্কোচ বোধ হয়। কিন্তু কাজটি স্বসম্পন্ন করিতে হইলে তাহাদিগকে সঙ্কোচ ত্যাগ করিয়া আসরে নামিতে হয়। অবশ্য র্তাহারা কাজটিকে জাহির করিবেন বলিয়া সত্যকে অতিক্রম কথন করিবেন না। কাজটি সম্বন্ধে সত্য যাহা তাহাই বলিবেন। একখানি ভাল বহি লিথিয়া বাক্সে বন্ধ করিয়া রাখিলে যেমন তাহারও প্রচার হয় না, লোকেরও উপকার হয় না, তেমনি যেসব সদহুষ্ঠানের সফলতার জন্ত বহুলোকের সাহায্যের দরকার, সেইসকল সদনুষ্ঠানের কথা সৰ্ব্বদা কাগজে পত্রে নানাভাবে লোককে বলা দরকার। সবাই নিজের নিজের কাজে, আমোদে, স্বচিস্তা, দুর্ভাবনায় ব্যাপৃত থাকেন। তাহাদিগকে সদস্থঠানটির কথা বারবার শুনাইয়া উহার জন্য সাহায্য পাইতে হয়, এবং তাহাদিগকেও সংকার্য্যে সহকারিতা করিবার স্বযোগ দিয়া উপকৃত করিতে হয়। অনেকের মুখে এইরূপ যুক্তি শুনা যায়, ভগবানের উপর নির্ভর করিলেই সব হয় ; লোককে জানাইবার আবশ্বক কি ? আমরাও ভগবানের উপর নির্ভর করায় বিশ্বাস করি। কিন্তু চেষ্টার সঙ্গে বিশ্বাসের কোন বিরোধ দেখি না । ভগবান যে-রকমের কাজে সাফল্যের জন্ত যেসকল শক্তি আমাদিগকে দিয়াছেন, আমাদের বুদ্ধি ও অপরের অভিজ্ঞতা স্বারা আমাদিগকে যেসব উপায় দেখাইয়া দিয়াছেন, সেইসকল শক্তির স্বব্যবহার না করা, সেইসব উপায় অবলম্বন না করা, কখনই ভগবানে বিশ্বাস নামের যোগ্য নহে। শক্তি প্রয়োগ ও উপায় অবলম্বনও বিশ্বাসের পরিচায়ক। ফসল পাইবার জন্য চাষী মাঠে লাঙ্গল না দিয়া যদি ঘরে বসিয়া থাকে, তাহাকে আমরা ঈশ্বরে বিশ্বাসী বলি না। আমাদের দেশের অনেক সদনুষ্ঠানের প্রবর্তক ও কৰ্ম্মকৰ্ত্তারা অনেৰ সময় দুঃখ করিয়া বলেন যে তাহারা লোকের কাছে যথেষ্ট সাহায্য পান না। কিন্তু তাহারা সাহায্য পাইবার চেষ্টা কতটুকু করেন তাহাও বিবেচ্য। এমন কৰ্ম্মকৰ্ত্ত।