বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:প্রবাসী (পঞ্চদশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).pdf/১৫০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২৭৪ শিক্ষক ছিলেন বটে, কিন্তু তাহকে মাতৃভাষার সেবকহিসাবে শিক্ষক-শ্রেণীতে ধরিতে পারিলাম না। কেননা যৎকালে তিনি শিক্ষাব্যবসায়ে লিপ্ত ছিলেন তৎকালে তিনি ইংরেজী বন্দীনারীর (Captive Lady) বন্দনায় ব্যস্ত, তিলোত্তমাসম্ভব বা মেঘনাদবধের আয়োজন করেন নাই। হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়, vনবীনচন্দ্র সেন, ৮ইন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, vচন্দ্রনাথ বসু, vরাজকৃষ্ণ মুখোপাধ্যায়, Vরঙ্গলাল মুখোপাধ্যায় (বিশ্বকোযের অনুষ্ঠাতা) ও ৬যোগেন্দ্রনাথ বিদ্যাভূষণ কৰ্ম্মজীবনের আরস্তে শিক্ষক ছিলেন বটে, কিন্তু তাহাদিগকেও এই শ্রেণীর অন্তৰ্ভুক্ত করা অসঙ্গত হইবে। এক্ষণে উভয় সময়ের তুলনা করিলে দেখা যায় যে, মাতৃভাষায় পুস্তক-প্রবন্ধাদি-প্রণয়নে নিযুক্ত শিক্ষকের সংখ্যা পূৰ্ব্বাপেক্ষ অনেক বাড়িয়াছে। অবশ্য আজকাল শিক্ষিত লোকের সংখ্যা বাড়িয়াছে, পুস্তক ও মাসিকপত্রের সংখ্যা বাড়িয়াছে, পাঠকের সংখ্য বাড়িয়াছে, বাঙ্গালা লেখকের সংখ্যা বাড়িয়াছে, শিক্ষকের সংখ্যাও বাড়িয়াছে। কিন্তু শুধু যে ইহারই অনুপাতে শিক্ষকশ্রেণীভূক্ত লেখকের পরিমাণ বাড়িয়াছে, আমার তাহা মনে হয় না। আমার ধারণা, এ বিষয়ে বৰ্ত্তমান শিক্ষক-সম্প্রদায়ের হৃদয়ে একটি নব-প্রেরণ আসিয়াছে। ৫০ বৎসর পূৰ্ব্বে এই প্রবৃত্তি উক্ত সম্প্রদায়ের মধ্যে এত অধিক পরিমাণে ছিল না। ইহা নিশ্চয়ই আশার কথা, শ্লাঘারও কথা । এ পর্য্যন্ত আলোচনা করিয়া দেখা গেল যে ইংরেজশাসনের প্রথম আমলে শিক্ষকদিগের মধ্যে বিদ্যাসাগর, ভূদেব, রাজনারায়ণ, অক্ষয়কুমারের ন্যায় প্রতিভাশালী লেখক আবিভূত হইয়াছিলেন এবং অধুনা ঐ শ্রেণীর মধ্যে জগদীশচন্দ্র প্রফুল্লচন্দ্র ব্রজেন্দ্রনাথ প্রভৃতি প্রতিভাশালী লেখক আবিভূতি হইয়াছেন (যদিও শেষোক্ত তিনজনের কৃতিত্ব ইংরেজীভাষায় গ্রন্থাদি রচনায়)। ইহা অবশ্ব খুব আশার কথা। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে আশঙ্কার কথাও আছে। আশঙ্কার কথা এই যে, শিক্ষক-সম্প্রদায়ের মধ্যে আজও বঙ্কিম, রবীন্দ্র, হেম, নবীন, ইন্দ্রনাথ, চন্দ্রনাথ, দ্বিজেন্দ্রলাল আবিভূতি হয়েন নাই। কখন হইবেন কি না সন্দেহ। বাঙ্গালা সাহিত্যের নানাবিভাগে অনন্যসাধারণ রুতিত্বের প্রবাসী—জ্যৈষ্ঠ, ১৩২২ AMSMAMMSMSMSMSAMSMMSSMMMMSMMMMMM いヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘ。 পরিচয় দিয়াছেন বা দিতেছেন, এরূপ শিক্ষক-পূৰ্ব্ব আমলের বিদ্যাসাগর-ভূদেব-রাজনারায়ণ অক্ষয়কুমার ভিন্ন ও অধুনা রামেন্দ্রসুন্দর যোগেশচন্দ্র প্রভৃতি দুই চারি জন । ছাড়া আর মিলে কই ? যাহাহউক শিক্ষক-সম্প্রদায় ক্রমশঃ অধিকতর পরিমাণে লেখক-সম্প্রদায়ের অন্তভূক্ত হইতেছেন দেখিয়া আমরা আশান্বিত হইতেছি। শিক্ষক-সম্প্রদায়কে মাতৃভাষার সাহিত্যের পুষ্টিবিধানে তৎপর দেখিয়া অনেকে এইরূপ হওয়াই স্বাভাবিক ও স্বতঃসিদ্ধ বলিয়া ধরিয়া লইতেছেন। কিন্তু এ বিষয়ে কয়েকটি ভাবিবার কথা আছে। যে শ্রেণীর লোকে সৰ্ব্বদা জ্ঞানার্জন ও জ্ঞানদানে ব্যাপৃত, তাহারা নিজেদের প্রভূত পাণ্ডিত্যের, মার্জিত বুদ্ধিবৃত্তির, শৃঙ্খলাবদ্ধ চিস্তাশক্তির পরিচয় দিতে অগ্রসর হইবেন, আপাত-দৃষ্টিতে ইহাই সম্ভবপর বলিয়া বোধ झम्न । কিন্তু ইহার প্রবল প্রতিবন্ধকও আছে। তাহা একটু তলাইয়া দেখিলে তবে ধরিতে পারা যায়। আধুনিক শিক্ষা প্রণালীতে এদেশের ছাত্রজীবনে সকলকেই বহুপরিমাণে পরের চিন্তা, পরের ভাব, পরের সৌন্দৰ্য্যবোধ, পরের কলা-কৌশল ( artistic expression ) osząą Efff; ভিতর দিয়া আত্মসাৎ করিতে হইতেছে। এ বিষয়ে ভাৰী শিক্ষকে ও ভাবী বিচারকে ভাবী ব্যবহারাজীবে, ভাৰী ডাক্তার বা এঞ্জিনিয়ারে, ভাবী আমলা বা কেরানীতে ভাবী ব্যবসায়ী বা দোকানদারে কোন প্রভেদ নাই। কিন্তু শিক্ষকের জীবনে ছাত্রাবস্থার এই ব্যাপারের একটা শোচনীয় পরিণাম আছে। তাহাকে কৰ্ম্মজীবনেও সেই পূৰ্ব্বেকার মত পরের চিন্তার পরের ভাষায় ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ লইয়া ব্যস্ত থাকিতে হয়। তাহাই উহার ঘরের ও বাহিরের কাজ, তাহাই তাহার উপজীবিকা। তিনি শিক্ষাদানকাধ্যে ও প্রশ্ননির্বাচনকাধ্যে পাঠ্যপুস্তকের বা পাঠ্যবিষয়ের খুঁটিনাটি লইয়া ব্যস্ত ; পরীক্ষাগ্ৰহণ কার্য্যে উৎকৃষ্ট অপকৃষ্ট উত্তরবিচারে ব্যাপৃত। ইহাতে বুদ্ধিবৃত্তির সম্যক ক্ষপ্তি ও সৰ্ব্বাঙ্গীন উন্নতির সম্ভাবনা অল্প, জড়তা বা অবনতির সম্ভাবনা বেশী। শিক্ষকের মৌলিক চিন্তার অবসর কম, সুযোগও কম। যাহার [ ১৫শ ভাগ, ১ম খণ্ড T ২য় সংখ্যা ] বিচারক, ব্যবহারাজীব প্রভৃতির নিছেন, জগদগের হার বিশাল মানবসমাজে ০৮:১২, ১৯ এপ্রিল ২০১৬ (ইউটিসি) বৃত্তি অবলম্বন মিশিয়া মানবচরিত্রের বৈচিত্র্য লক্ষ্য করার, মানবহৃদয়ের রহস্য উদঘাটন করার সুযোগ তিনি পান না। ইহার অপ্রতিবিধেয় ফল—মৌলিকতার বীজ একেবারে নষ্ট হইয়া যাইবার আশঙ্কা। ফলেও দেখা যায়, ব্যবহারাজীবের ভিতর হেমচন্দ্র-ইন্দ্রনাথের উদ্ভব হয়, বিচারকের ভিতর বঙ্কিমচন্দ্র-নবীনচন্দ্রের ও দ্বিজেন্দ্রলালের উদ্ভব হয়। শিক্ষকের ভিতর হয় না । এ অবস্থায়, যিনি জগতের প্রতিভাশালী লেখকদিগের চিন্তারাশির অহরহ পেষণেও নিজের মৌলিকত্ব রক্ষা করিতে পারেন, তিনি ধন্য। কিন্তু অধিকাংশেরই সে সৌভাগ্য ঘটে না। পূৰ্ব্ব অনুচ্ছেদে বলিয়াছি, ছাত্রাবস্থায় সকলকেই চিন্তার জন্য, ভাবের জন্য, কলার আদর্শের জন্য পরপ্রত্যাশী হইতে হয় সত্য, কিন্তু শিক্ষক যেমন চিরজীবন সেই ধ্যান, সেই জ্ঞান করিয়া কাটান এমন আর কাহাকেও করিতে হয় না। অবশ্য যেমন অরণিদ্বয়ের সজার্মণে অগ্নির উৎপত্তি হয়, তেমনই উভয় মনের সংঘাতেও চিন্তারাজ্য আলোড়িত হইতে পারে। একদিকে গ্রন্থকারদিগের চিন্তার সহিত সজাতে, অন্যদিকে ছাত্রদিগের চিন্তার সতি সঙ্ঘাতে, শিক্ষকের বুদ্ধিবৃত্তি কিঞ্চিং মার্জিত হইতে পারে। তিনি সাধারণ ছাত্রের ভূল হইতে কিঞ্চিং শিক্ষালাভ করেন, অসাধারণ ছাত্রের প্রশ্নপরম্পরা হইতে ব। তাহার প্রদত্ত উত্তর হইতে কিঞ্চিৎ শিক্ষালাভ করেন, একটা জিনিস নানাদিক্ হইতে দেখিবার সুযোগ পান, মানবমন কিরূপে ভ্রমে পড়ে, কোথায় কিপ্রকারে হেত্বাভাসের আশঙ্কা আছে তাহার সন্ধান পান। এগুলি শিক্ষকের পক্ষে পরম লাভ সন্দেহ নাই। শত শত জ্ঞানপিপাস্থ যুবককে জ্ঞানবিতরণ করিতে করিতে তাহার হৃদয়ে একটা উত্তেজনা উন্মাদন আসে, ইহাও একটা মস্ত লাভ বটে। কিন্তু অনবরত এই কার্য্যে মগ্ন থাকিলে তাহার মন নূতন স্থষ্টির কার্ঘ্যে প্রবণ হইবার মত শক্তি সঞ্চয় ও অবসর লাভ করিতে সমর্থ হয় না। দরিদ্র গৃহস্থের দিন আনা দিন খাওয়ার মত তিনিও তাহার দিনকার দিনের কৰ্ত্তব্য (Current duties) পালন করিয়া যান, তাহার উপর শিক্ষকের অাশা ও আশঙ্ক৷ JJSJJSJSJJJJSJSMMMMSMMMMMMJJAMMMMMSJMSMMSMSMS Rag আর উঠিতে পারেন না। প্রকৃত সাহিত্য-স্বষ্টির জন্য মনের যে নির্লিপ্ত ভাবের প্রয়োজন তাহা তাহার অদৃষ্টে ঘটে না। তাহার জীবনে freshness বা নবীনত থাকে ন। বৎসরের পর বংসর সেই একই কথা ছাত্ৰগণের কর্ণগোচর করিতে করিতে তাহার জীবন নিতাস্ত একঘেয়ে হইয় পড়ে । আর এক কথা। শিক্ষাদান-কার্য্যে এক বিষয়ে মস্তিষ্কচালনা, ও রচনাকার্ঘ্যে অন্য বিষয়ে মস্তিদ্ধ-চালনা। এই উভয়প্রকার মস্তিষ্ক-চালনা ভিন্ন ভিন্ন বিষয়ে হইলেও অনেকটা এক ধরণের, সুতরাং একঘেয়ে হইয়া পড়ে। পক্ষান্তরে বিচারক, ব্যবহারাজীব প্রভৃতি নিজ নিজ বৃত্তিতে যে ভাবে মস্তিষ্ক-চালনা করেন, রচনা-কার্য্যে তাহা হইতে সম্পূর্ণ বিভিন্নপ্রকারে মস্তিদ্ধ-চালনা করেন। তজ্জন্ত তাহাদের মনে একটা Freshness বা নবীনভা আসে। তাহার ফলে তাহার রচনাকাৰ্য্যে যেটুকু আয়েস পান, শিক্ষকগণ তাহ পান না। ইহা ছাড়া ‘শিক্ষাব্যবসায়ী’র নিজের ব্যবসায়ের কার্য্যে ঘরে ও বাহিরে এত সময় ব্যয় করিতে হয় এবং তাহাতে তাহার মস্তিষ্ক এমন অবসাদ গ্রস্ত হইয়া পড়ে (বাহিরের লোকে তাহার ছোট বড় মাঝারী ছুটিই দেখিতে পান ) যে তাহার নিকট বহুসময়সাধ্য বহুআয়াসসাধ্য একটা বিরাট, wošta sustained work, solid work of +4. বিড়ম্বনা। হইতেছেও তাহাই। ত্রিবেদী মহাশয়ের ন্যায় মনীষাসম্পন্ন শিক্ষকের নিকট হইতেও কেবল fragments of Science, fragments - of Philosophy, fragments of Sociology, Science of Religion of os os fosan itsui যাইতেছে। আমরা উচ্ছ,সিতকণ্ঠে বলিতে পারি, ইহা সুবর্ণের মুষ্টি –কিন্তু তথাপি অস্বীকার করা যায় না যে ইহা মুষ্টিভিক্ষা’ , ‘থত কর বিতরণ অক্ষয় তব ভাণ্ডার হইলেও বিতরণে কার্পণ্য ঘটিতেছে, ইহা স্পষ্ট দেখা যাইতেছে। ইহা শুধু স্বাস্থ্যভঙ্গের দরুণ নহে, ইহার প্রকৃত গভীরতর কারণ রহিয়াছে, তাহাই নির্দেশ করিবার জন্য চেষ্টা করিলাম । অবশ্য প্রতিভার অসাধ্য কাৰ্য্য নাই। জগতের ইতিহাসে fragments of the