পাতা:প্রবাসী (পঞ্চদশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).pdf/২০৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

HN 8 এবং তাছার মনের জালা আমি পৃষ্ঠে বিলক্ষণ অনুভব করিলাম। সেই দিন হইতে আমার স্কুলে যাওয়া বন্ধ করার জন্য একাজ সেকাজ দিয়া আমাকে আটক রাখিতেন। তবু আমি পালাইয়া স্কুলে যাইতাম। কিন্তু সেখানে আর-এক বিপদের স্বচনা হইয়া পড়িল। “পুত্রাং (ছাত্রাং) ইচ্ছেং পরাজয়ম"— এ নীতি বোধ হয় গুরুমহাশয়ের কণ্ঠে ছিল না। অন্যান্য ছাত্রদের সম্মুথে আমার নিকট তিনি পদে পদে পরাজয় স্বীকার করিতে কুষ্ঠিত হইয়া আমার গোবর গণেশ নাম সার্থক ইহার প্রমাণ সংগ্ৰহ করিলেন এবং গ্রামস্থ কাকার শক্ৰদের ডাকিয়া বলিলেন—“গণেশের কিছু হবে না, ওর মাথায় গোবর পোরা। কানাইএর বাপ তো তার পর নয়, তিনি সত্যই বলে থাকেন ও গোবর গণেশ' । তার ওপর ও বড় মারথুটে, ছেলেপেলেদের কেবল মারে।” সেইদিন হইতে স্কুল থেকে আমার জবাব হইল। আমি বাটতে অাসিয়া নিশ্চিন্ত হইয়া বসিলাম । , ( २ ) এইরূপে কাৰ্যার উদ্দেশ্য সিদ্ধ হইল। আমার স্কুলে যাওয়া বন্ধ হইল। তিনিও নিৰ্ভয়ে আমার মাতামহের সম্পত্তি ভোগ করিতে লাগিলেন। কাকার শত্ৰগণ যখন আমার মাতামহের সম্পত্তি র্তাহার হস্তচু্যত করিয়া আমার হস্তগত করিতে পারিলেন না, তখন আমাকে লেখাপড় শিখাইয়া সেই শত্রুত সাধন করিতেছিলেন, কিন্তু তাহাতেও তাহার কৃতকাৰ্য্য হইলেন না। কাকারই জিত । আমি নিরস্ত হইবার পাত্র নহে। দেওয়ালের গায়ে “মন দিয়া কর সবে বিদ্য উপার্জন” ইত্যাদি অধীত বিদ্য৷ অঙ্গার দ্বারা ফলাইতে আরম্ভ করিলাম। ফলে জুটিল প্রহার। কানাইএর কাগজ কলম লইয়া লিথিয় দিতাম, কানাই তাহাই স্কুলে গুরুমহাশয়কে দেখাইয়া নিষ্কৃতি লাভ করিত। কাকা জানিতে পারিয়া বলিলেন "কানাইএর মাথ৷ থাইতেছ-তোমার পিঠের ছাল উঠাইয়া দিব।” এবং বলিতে না ফলিতে। কানাই ঘুমাইলে তাহার বই লইয়া পড়িতে বসিলে খুড়িমা তৈল খরচ হইতেছে বলিয়া কেরো- ৷ সিনের টেমিটি নিবাইয়া দিতেন। কানাই কলম পেনসিল হারাইয়া ফেলিলে আমি চুরি করিতেছি এই অপবাদ প্রবাসী—আষাঢ়, ১৩২২ AMAMAJJAMAMAMAJAJJAMAMMAM AAAASASASS ゾ ヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘへへヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘ [ ১৫শ ভাগ, ১ম খণ্ড দিতেন। খুড়িমা চিরকা ; দূর ডাক্তারখানা হইতে ঔষধ আনিতে শিশি ভাঙ্গিলে পুরাতন Limb for the limb • প্রথার অনুসরণ করা হইত, ফলে আমারও হাড় ভাঙ্গিত। আমাদের সবে উপনয়ন হইয়াছে। সকাল-বেলার সফেন অয়ের মধুর আস্বাদ এখন আর পাই না। কানাই সকালে স্কুলে যাইবার পূৰ্ব্বে জলখাবার খাইয়া “পিত্ত রক্ষা" করে। যাহারা স্কুলে যায় না তাহদের পিত্ত নাই। তাহার প্রমাণ আমি একদিন হাতে হাতে পাইয়াছিলাম। দুগ্ধের আস্বাদ ঘোলে মিটাইব মনে করিয়া একদিন নারিকেল-কোরা সংযোগে চাউল ও গুড় খাইব বলিয়া লইয়াছি। খুড়িমা বেশী স্নেহ করিতেন কি না তাই বলিলেন "এত বেশী নারিকেল থাইলে পেটের অমুখ হয়।" তাহাতে যখন কর্ণপাত করিলাম না তখন তাহার তিরস্কার "হাবাতে, কিছুতেই খাই মিটে না, একটা নারিকেল সব খাইয় ফেলিল” এইবার কর্ণে পৌছিল , পাত্র সহিত চাউল গুড় সজোরে ভূমিতে নিক্ষেপ করিলাম। কাক শুনিলেন খুড়িমাকে আমি মারিয়াছি। খুড়িমা যে "মাটির মা।" আর আমি মাটি, তাই সৰ্ব্বংসহ। কাকার হস্তমাধুৰ্য্যও বেশ সহ্য করিলাম। কাকা তামাকু সাজিতে বলিলেন। আমি বাহিরে দাড়াইয়া কলিকায় ফু দিতেছি। প্রাচীরের যে কর্ণ থাকিতে পারে তাহা কাকা ও খুড়িমার খেয়াল ছিল না। আমি শুনিলাম "তাহা হইলে শীঘ্র ঠিক করিয়া, ফেল। হবির মা গরীব, এ কাজে খুব রাজী হইবে। তারপর তার খোড়া মেয়ে পার হইয়া যাইবে । টাকা কড়ি যা দিতে পারে তাহাতেই স্বীকার করিও । গণেশের অন্য কোথাও বিবাহ দিলে ওর শ্বশুর আসিয়া হয়ত সম্পত্তি লইয়া গোল করিবে । হবির সহিত একবার বিবাহ দিতে পারিলে আর তার ভয় নাই।” খুড়িমার কথা শেষ হইতে না হইতেই কাক বলিলেন “তোমরা মেয়েমানুষ, তোমাদের । কোন কাজেই তর সয় না। এসব কাজ প্রজাপতির নিৰ্ব্বন্ধ (এই সময় উপরে টিকটিকি ডাকিল, কাক মাটিতে w ইউরোপে পূৰ্ব্বে এইরূপ বিচারপদ্ধতি প্রচলিত ছিল যে কেহ কাহারও কোন অঙ্গহানি করিলে দোষীরও সেই অঙ্গ ন} করিয়া দেওয়া হইত। ৩য় সংখ্যা ] പുസ്~് আঙ্গুলের টােক দিয়া বলিলেন) সত্য সত্য, চুপে চুপে ধীরে স্বন্থে করিতে হয়। একদিন গোপনে ছবির মাকে ডাকিয়া আনিও, আমি সব ঠিক করিয়া দিব। রায়গার ব্রজবাবুর একটি ছোট মেয়ে আছে। তারা জমিদার, তাই যার সম্পত্তি আছে এমন ছেলের সহিত বিবাহ দিতে চায়। গণেশের সহিত বিবাহ দিবার প্রস্তাব করিয়া ঘটক পাঠাইয়াছে। তা আমি একেবারে জবাব দেই নাই, বলিয়াছি মেয়ে ত বড় ছোট, গণেশেরও বয়স বেশী নয় ; এখন বিবাহ হইবে না।" খুড়িমা বাধা দিয়ে বলিলেন— "এই ত বুদ্ধি ? এই বুদ্ধিতে আবার পরের সম্পত্তি খাইবে ? একেবারে জবাব দিলে না কেন ?’ কাক বলিলেন— "তোমরা মেয়েমানুষ, তোমাদের বুদ্ধিতে আমি চলি কিনা ? অাশা দিয়া রাখিয়াছি, এখন একদিন সেখানে যাইব, ব্ৰজবাবু খুব আদর করিয়া কথা পাড়িবেন, তখন কানাইএর বিবাহের সম্বন্ধ ঠিক করিয়া আসিব ।" আমি আর অপেক্ষ না করিয়া ঘরে ঢুকিয়া পড়িলাম। খুড়িমা থতমত খাটয়া বলিলেন "কিরে গণশ বে করবি ?" আমি মনে মনে বলিলাম "তোমার মুণ্ডু পাত করিব।” মুখে কিছু বলিলাম না। ( & ) মানুষ হস্তগত সৌভাগ্য রক্ষা করা অপেক্ষা অনাগত সৌভাগ্যের বেশী আদর করে। কাকাও তাই আমার বিবাহ স্থির করিবার পূৰ্ব্বে ব্ৰজবাবুর কন্যার সহিত কানাইএর বিবাহ স্থির করিবার জন্য ছুটিলেন। কাক যখন বাড়ী ফিরিয়া আসিলেন তখন আমি লোলুপ দৃষ্টিতে বিবাহের ব্যাপার শুনিবার জন্য ঘুরিয়া বেড়াইতে লাগিলাম। কাক খুড়িমাকে বলিলেন "যে জন্য গিয়াছিলাম তাহ হইল না। যে দিন কাল পড়িয়াছে। কলিকাতা হইতে কে একজন আসিয়া ব্ৰজবাবুর মত বদলিয়া দিয়াছে , তিনি তার সঙ্গে স্ত্রীশিক্ষা স্ত্রীশিক্ষা করিয়া পাগল হইয়াছেন। তার পায়ে পৰ্য্যন্ত ধরিলাম, তবু তিনি এখন মেয়ের বিবাহ দিতে রাজী নহেন।" এক পথে নিরাশ হইয়৷ কাক অন্য পথ ধরিলেন। কিছু দিন ধরিয়া তিনি হবির মায়ের নিকট হাটাইটি করিতে আরম্ভ করিলেন। তার পর একদিন শুনিলাম আমার গোবর গণেশ AMJAMMSAMAMAMSMSMSMSMSMS ○br? সহিত হবির বিবাহ স্থির হইয়া গিয়াছে। একথা গ্রামময় রাষ্ট্রও হইয়া পড়িয়াছিল ; কারণ বহুদিন ধরিয়া ইহার কথাবাৰ্ত্ত হইতেছিল। কাকাও হবির মায়ের নিকট হইতে পণ আদায় না করিয়া ছাড়িবেন না, হবির মাও কিছু দিতে চাহে না। অবশেষে কৌলীন্ত-মৰ্য্যাদা বজায় রাখিবার জন্য ১৬২ টাকা পণে বিবাহ স্থির হইল। বিবাহের পাক-দেখা ও দিনস্থির হইয়া গিয়াছে, উভয় পক্ষেই বিবাহের উদ্যোগ চলিতেছে। অার উভয়ের মাঝখানে পড়িয়া আমি বিবাহব্যাপারের মৰ্ম্ম সম্পূর্ণ না বুঝিলেও মনে একটা অব্যক্ত যন্ত্রণা অনুভব করিতেছি। সে যন্ত্রণার কথা আমি কাহাকেও বলিতে পারি না, বলিও না ; শুনিবার লোকও ছিল না। আমাদের দেশে বিবাহের রাত্রির পরের রাত্রিকে ‘কালরাত্রি’ বলে, কিন্তু অনেকের পক্ষে বিবাহ-রাত্রির পূর্বরাত্রিই কালরাত্রি। জুলিয়েট ও রজনী এ সত্য উপলব্ধি করিয়াছিল। আর আজ আমি করিতেছি । গভীর রাত্রে শয্যা ভ্যাগ করিয়া নদীতীরে আসিলাম। শ্মশানভূমি হইতে দড়ি ও কলসী সংগ্ৰহ করিলাম। ইচ্ছা ডুবিয়া মরিব । কিন্তু সাহস হইতেছে না। দুইটি বিরুদ্ধ মত আসিয়া অন্তরকে তোলপাড় করিয়া তুলিল। ভগবানের কি ইচ্ছ বুঝিতে পারিলাম না। নিকটস্থ জঙ্গল হইতে একটি বৃক্ষপত্র আনিলাম। মনে করিলাম এই বৃক্ষপত্র উদ্ধে নিক্ষেপ করিব, যদি উন্ট দিক উপরে পড়ে তবে নিশ্চয় মরিব । ভগবানের নাম করিয়া সেইরূপ নিক্ষেপ করিলাম। পত্র চিত হইয়া পড়িল। মরা হইল না। তখন কলিকাতায় যাওয়া স্থির করিয়া কলিকাতার পথ বাহিয়া হাটিতে আরম্ভ করিলাম । (8) বেলা ১০।১১ টার সময় আমার পলায়নব্যাপার কাকা জানিতে পারিলেন। চারিদিকে খুজিতে লোক পাঠাইলেন। দুঃসংবাদের পাচ পা হয়। কনের বাটতেও এসংবাদ পৌছিল। প্রথমে নিজ গ্রামে, পরে নিকটবর্তী গ্রামসমূহে অনুসন্ধান করা হইল, কোথায়ও আমাকে পাওয়া গেল না। তখন গ্রামের লোক কাকাকে চাপিয়া ধরিল। তাহাজের শক্রতার একটা অবসর জুটিয়া গেল ; তাহারা বলিল কানাইএর সহিত হবির বিবাহ দিতে হইবে, হবির