বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:প্রবাসী (পঞ্চদশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).pdf/২৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

وق " পড়িবার অবসর এবং সুযোগও তাহাদের নাই। সুতরাং ভারতীয় প্রাচীন ইতিহাস ও সভ্যতা সম্বন্ধে যেসব নব নব সত্য,ইংরেজীতে প্রকাশিত হইয়াছে, তাহ৷ এইসব ছাত্রদের নিকট সম্পূর্ণ অজ্ঞাত। তাহারা প্রত্নতত্ব ও বৈজ্ঞানিক ইতিহাস সম্বন্ধে এখনও মধ্যযুগে বাস করিতেছে ; মানবজ্ঞান যে এতদিনে কতদূর অগ্রসর হইয়াছে তাহার কিছুই জানে না। অথচ তাহাদের মধ্যে অনেক মেধাবী ও মৌলিকতাসম্পন্ন ছাত্র আছে ; দেশ-সম্বন্ধে, তাহাদের পাঠ্যবিষয়সম্বন্ধে, নিজ ধৰ্ম্ম-জাতি-সম্বন্ধে পূর্ণ জ্ঞান হইতে শুধু ত্রিভাষী নয় বলিয়া ইহার যে চিরবঞ্চিত হইয়া থাকিতেছে ইহা কি পরিতাপের কথা নয় ? প্রাচীন লেখমালার উদাহরণ হিন্দীতে গ্রন্থাকারে একত্র ছাপা হইয়াছে ; বাঙ্গলায় হয় নাই। (নবপ্রকাশিত "গৌড়লেখমালা” আংশিক গ্রন্থ। ) ভিনসেন্ট স্মিথ-রচিত প্রাচীন ভারতের ইতিহাস এবং ম্যাকডনেলের সংস্কৃত সাহিত্যের ইতিহাস যে এপর্য্যস্ত বাঙ্গলায় অনুবাদ করা হয় নাই ইহা আমাদের মণ্ডলীর পক্ষে লজ্জার বিষয়। গুজরাতী ভাষা বাঙ্গলার চেয়ে কত কম লোক বলে, অথচ গুজরাতী ভাষার সেবকগণের আগ্রহ শ্রমশীলতা ও দূরদর্শিতার ফলে সৰ্ব্ববিধ বিভাগের পুস্তকের অতুবাদে গুজরাত ছাইয়া গিয়াছে। আর আমরা বঙ্কিম রবীন্দ্রের মৌলিকতার গৰ্ব্ব করিয়া অলস হইয়া বসিয়া আছি ! লোকশিক্ষার দিকে দৃষ্টি নাই! অথচ এই লোকশিক্ষার প্রতি অধিকতর দৃষ্ট দেওয়ার ফলে ক্ৰমে গুজরাত ও মহারাষ্টে সাধারণের জ্ঞানের সীমা বঙ্গের লোকসমষ্টির জ্ঞানের সীমাকে অতিক্রম করিবে। তখন বাঙ্গালীর মানসিক প্রাধান্য কোথায় থাকিবে ? পুনা ও বরোদ ভ্রমণ করিয়া তথাকার স্কুলগুলি দেখিয়া আমার দৃঢ় বিশ্বাস হইয়াছে যে আর বিশ বৎসরের মধ্যে মারাঠাগণ জ্ঞানের বিস্তৃতিতে বাঙ্গালীদিগকে পিছু ফেলিয়া যাইবে । ইতিহাসের জ্ঞান জাতীয় উন্নতির প্রথম সোপান। যে পরিমাণে অতীত জগৎ সম্বন্ধে প্রকৃত সত্য আবিষ্কার করিব, যে পরিমাণে অতীতের উপদেশগুলি বৰ্ত্তমানে লাগাইতে পারিব, সেই পরিমাণে আমাদের জনগণ-মন উচিতপথে ধাবিত হইবে,-আমাদের সমবেত শক্তি ফল প্রসব করিবে । মার, যে পরিমাণে আমরা অসত্য বা অৰ্দ্ধসত্য লাভ প্রবাসী—বৈশাখ, ১৩২২ করিয়াই সন্তুষ্ট থাকিব, সেই পরিমাণেই আমাদের জাতীয় উন্নতিতে বাধা পড়িবে, জনসমষ্টির শ্রম বিফল হইবে ।. ইতিহাস কাব্য নহে। চিত্তবিনোদক ললিত অাখ্যান অথবা শুষ্ক গবেষণাই ইহার চরম ফল নহে। অধ্যাপক সীলী সুন্দরন্ধপে দেখাইয়াছেন রাষ্ট্রনেতার সমাজনেতার পক্ষে ইতিহাস সৰ্ব্বশ্রেষ্ঠ শিক্ষক, পথপ্রদর্শক, মহা বন্ধু। ইতিহাসের সাহায্যে অতীতকালের স্বরূপ জানিয়া সেই জ্ঞান বৰ্ত্তমানে প্রয়োগ করিতে হইবে। দূরবর্তী যুগে বা দেশে মানবভ্রাতার কি করিয়া উঠিলেন, কি কারণে পড়িলেন, রাজ্য সমাজ ধৰ্ম্ম কিরূপে গঠিত হইল, কি জন্য ভাঙ্গিল, সেই তত্ত্ব বুঝিয়া আমাদের নিজের জীবন্ত সমাজের গতি ফিরাইতে হইবে । অতীত-হইতে-উদ্ধার-করা সত্য ও দৃষ্টাস্তের দীপশিপা আমাদেরই ভবিষ্যতের পথে রশ্মিপাত করিবে । ইহাই ইতিহাস-চর্চার চরম লাভ । মহাকবিদের সম্বন্ধে সত্যই বলা হইয়াছে যে তাহার অমরধামে গমন করিবার পরও পৃথিবীতে নিজ নিজ আত্মা রাথিয়া গিয়াছেন, যাহা হইতে আমরা শিথি— ব্যক্তিগত গৌরব কি ? লজ্জার বিষয় কি ? লোকে কিসে বল লাভ করে, কিসে পঙ্গু হয় ? ( কীট । ) সেইরূপ আমরা বলিতে পারি যে প্রকৃত ঐতিহাসিক, জনসঙ্গকে, ব্যক্তি-সমষ্টিকে শিখান–কিসে জাতীয় উত্থান পতন, রোগ স্বাস্থ্য, নবজীবনলাভ ও মৃত্যু ঘটে। এই মহাশিবতন্ত্র, এই জাতীয় আয়ুৰ্ব্বেদ শাস্ত্র সাধনা বিনা, সত্যনিষ্ঠ বিন, ক্রমোন্নতির অদম্য স্পৃহ বিন, লাভ করা সম্ভব নহে। • শ্ৰীযদুনাথ সরকার। পরিণাম ফুল্ল মালতীরে ঘিরে কাল চন্দ্রালোকে কি উৎসব হয়েছিল, পড়ে নাই চোখে— প্রভাত-কিরণে আজি পাই দেখিবারে অসংখ্য পতঙ্গ-পক্ষ পড়ে চারিধারে । শ্ৰাপ্রিয়ম্বদা দেবী। • বন্ধমান সাহিতা সম্মিলনে ইতিহাস শাখার সভাপতির অভিভাষণ । [ ১৫শ ভাগ, ১ম খণ্ড ,

১ম সংখ্যা ] অরুণা (প্রবাসীর প্রথম পুরস্কার প্রাপ্ত গল্প ) ( x ) নবীন চক্ৰবৰ্ত্তীর ছোট ছেলের নাম গণেশ। লম্বা, চওড়া, জোয়ান ছোকরা ; ষোল সতের বৎসর বয়স ; দাদাদের চোপ-রাঙানির ভয়ে কোন গতিকে একটা হাইস্কুলের সেকেও ক্লাশ পৰ্য্যস্ত পড়িয়াই ইতি- ফুটবল খেলিতে, মারামারি করিতে, সাতার কাটিতে বিলক্ষণ মজবুত। ঘণ্টা দেড়েক ধরিয়া বাড়ীর নিকটবৰ্ত্তী গঙ্গা তোলপাড় না করিলে তাহার স্নান হইত না। বাংলা নাটক ও নভেলবঙ্কিমচন্দ্র এবং দীনবন্ধু হইতে আরম্ভ করিয়া বটতলা পৰ্য্যস্ত —কিছুই তাহার বাকী ছিল না। ইয়ার বন্ধুদের সহিত গোপনে থিয়েটার দেখা, যে-কোন একটা নাটক লইয়৷ রিহাসাল দেওয়া, গ্রামোফোনের গানগুলির স্বর হুবহু অনুকরণ করিয়া গাওয়া,—এইসব ছিল তার কাজ । বদমায়েসী বুদ্ধিতে গণেশ ছিল দলের মধ্যে ওস্তাদ। কাহারও নধর পাটাটি চরিতে দেখিলে গণেশ তৎক্ষণাং সেটিকে বেওয়ারিস ধাৰ্য্য করিয়া বন্ধুমহলে আনন্দভোজ ঘোষণা করিত। একবার একটার মালিক কোনো স্বত্রে এ বিষয় জানিতে পারিয়া গোলযোগ উপস্থিত করে। সেইজন্য সকলের ভূক্তাবশিষ্ট অস্থি পাকস্থলী এবং অস্ত্র তন্ত্র ছাগচৰ্ম্মথানিতে ভরিয়া অভূক্ত মুগুটির সহিত নিপুণ ভাবে সেলাই কম্বিয়া গণেশ সেই রাত্রেই সেটা তাহার বাড়ীর প্রাঙ্গণে ফেলিয়া দিয়া আসিল ; এবং দরজায় পড়ি দিয়া . লিগিয়া আসিল—দেখ বাবা, আমাদের বড় সাধের জিনিষটি যেমন কেড়ে নিলে, ও তোমার ভোগে হবে না। গণেশদের বাড়ীর দক্ষিণদিককার অপর একটা বাড়ীর ঝি মিছামিছি তাঙ্গকে গালি দিয়াছিল। সেইজন্য সে ছাদে উঠিলেই গণেশ নিজেদের ছাদ হইতে দেড়তে একখানা ঘুড়ি উড়াইয়া অন্যমনস্কা ঝিয়ের ঠিক ব্ৰহ্মতালু লক্ষ্য করিয়া প্রচণ্ড রবে গোং মারিত , এবং পরক্ষণেই আলিশার নীচে বসিয়া পড়িয়া বিস্মিতা ঝিয়ের ক্রুদ্ধ আক্রমণ হইতে সুকৌশলে ঘুড়িখানাকে উদ্ধার করিয়া আনিত । ঝি নিষ্ফল আক্রোশে কোমর বাধিয়া গালি দিত এবং অরুণ। ○> গণেশ কিছুমাত্র গ্রাহ না করিয়া ঘুড়িখানাকে ক্রমাগত তাহার মাথার উপর ঘুরাইয়া ঘুরাইয় তাহাকে উত্যক্ত করিয়া তুলিত। যে-কোন প্রকারে হউক আনাড়ী লোককে দেখাইয়া গণেশ বিশেষ আনন্দ অনুভব করিত। কথন কথন অন্ধকার রাত্রে লম্বা একটা দড়ি রাস্তায় সটান ফেলিয়। রাপিয়া একটা খুঁট ধরিয়া ঘরের মধ্যে চুপটি করিয়া বসিয়া থাকিত। অন্যমনস্ক পথিক দড়ির কাছে পা বাড়াইবামাত্র সড়াং করিয়া টান দিয়া তাহাকে সর্পভয়ে সচকিত করিয়া তুলিত। কখনো বা পাচ সাত জনে পরামর্শ করিয়া গভীর রাত্রে ভৌতিক উপদ্রব আরম্ভ করিত। কোন অতিপরিপক্ক লোক তাহাদের উদ্দেশ্য বুঝিতে পারিয়া ষড়যন্ত্র বিফল করিয়া দিবার চেষ্টা করিলে গণেশ গভীর স্বরে কহিত—দেখ, আমার নাম গণেশ চক্রবর্তী ; গোলমাল করলে ভাল হবে না বলে রাখছি। আস্তে আস্তে আপনার পথ দেপ। পিতা, মাতা, এবং ভ্রাতৃবর্গ গণেশকে সংশোধন করিতে অনেক চেষ্টা করিয়াছিলেন, কিন্তু বারবার বিফল হইয়৷ শেষটা হাল ছাড়িয়া দিলেন। ( & ) গণেশদের বাড়ীর ঠিক লাগোয় একটা বাড়ী হঠাৎ বিক্ৰী হইয় গেল। ক্রেতা ভবেশ মুকুর্ষ্যে সপরিবারে আসিয়া বাড়ীটায় বাস করিলেন। তাহার মেয়েটির নাম অরুণা ৷ সেদিন গঙ্গাপূজা। ঘাটে ঘাটে বালকবালিকার আনন্দরব উঠিয়াছে। অরুণ তখন কুমারী। প্রদীপ্ত কৈশোর উচ্ছসিত যৌবনপ্রবাহের তীরে আসিয়া দাড়াইস্থাছে। একরাশি কালচুল গুচ্ছে গুচ্ছে তাহার পিঠে, মুখে এবং বক্ষের উপর নামিয়া আসিয়াছে। তরুণ স্বৰ্য্য তাহার মুখের উপর কুঙ্কুম ছড়াইয়া দিল। উদাম ঢেউগুল পূজার ফুল মাথায় লইয়া তাঙ্গর পা-দুখানির নীচে আছাড় থাইয়া পড়িল । -- ভাগীরথীর এই পক্ষপাত লক্ষ্য করিয়া গণেশ হঠাৎ হাতজোড় করিয়া ঘাড় বাকাইয়া অভিনয়ের ভঙ্গীতে বলিয়া উঠিল—হায় মা গঙ্গে ! তোমার অমল ধবল পাদ, エ