বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:প্রবাসী (পঞ্চদশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).pdf/৩৩৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৬২৮ অমলাদেবী কল্যাণীদেবীর হস্তধারণ করিয়া ভিক্ষুর নিকটে আসিলেন, তাহাদিগকে দেখিয়া পুরমহিলাগণ পথ ছাড়ি৷ দিলেন। অমলাদেবী কহিলেন, "ঠাকুর । অনুগ্রহ করিয়া এই বালিকাটির ভাগ্য পরীক্ষা করিয়া দেখুন।" ভিক্ষু কল্যাণীদেবীর বাম হস্ত লইয়া বলিয়া উঠিলেন, “মহাদেবীর জয় হউক, আপনি গৌড়েশ্বরী।" অমলাদেবী ঈযং হাসি৷ কহিলেন, "ঠাকুর, ইহার এখনও বিবাহ হয় নাই।” "তথাপি ইনি গৌড়েশ্বরী। দেবি ! আপনি শীঘ্রই গৌড় সিংহাসনে পট্টমহাদেবীরূপে অভিষিক্ত হইবেন।" - “ঠাকুর, ইহার ভবিষ্যতে আর কি দেখিতে পাইতেছেন ?” “দেবি, ভবিষ্যৎ অন্ধকার, অনিশ্চিত কৰ্ম্মফলের উপরে নির্ভর করে, কিন্তু বৰ্ত্তমান উজ্জল। মহাদেবি, শত শত জন্মের স্বকৃতির ফলে জীব এমন অদৃষ্ট লইয়া জগতে আসিয়া থাকে। সহস্ৰ সহস্র করকোষ্ঠি গণনা করিয়াছি, কিন্তু এমন রেখাঙ্কণ কখনও দেখি • নাই ; দেবি ! মহৎ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য আপনার জন্ম হইয়াছে। আপনার দ্বারা সমগ্র আর্য্যাবৰ্ত্তের কল্যাণ সাধিত হইবে। দেবি, সাৰ্দ্ধ সহস্র বর্ষ পূৰ্ব্বে আচাৰ্য্যগণ শাক্যসিংহ বোধিসত্বের কোঠি গণনা করিয়া এই সকল লক্ষণ দেখিতে পাইয়াছিলেন। শত শত জীবন আৰ্ত্ত দরিদ্র বিপন্ন ত্রাণের জন্য উৎসর্গ করিয়া গৌতম মহাপরিনিৰ্ব্বাণ লাভ করিয়াছিলেন এবং সঙ্গে সঙ্গে সকল সত্ত্বের মোক্ষমার্গ নির্দেশ করিয়াছিলেন। দেবি, আপনি নিৰ্ব্বাণের পথে, আপনি বালিকা কিন্তু সত্বর আপনি জন্মমৃত্যু জরাব্যাধি অতিক্রম করিবেন, অনন্তজালচক্রে আপনার পরিক্রমণ শেষ হইয়। আসিতেছে। নিৰ্ব্বাণ-মার্গের উদ্দেশ পাইয়া বৃদ্ধ ভিক্ষুকে বিস্মৃত হইবেন না।” বৃদ্ধ বলতে বলিতে কল্যাণীদেবীর চরণযুগল জড়াইয়া ধরিল। অমলাদেবী ব্যস্ত হইয়া বলিয়া উঠিলেন, "ঠাকুর কর কি ? বালিকার অকল্যাণ করিও না।" ভিক্ষু কহিতে লাগিলেন, “রমণি, এই বালিকা সামান্য নহে, মহাপ্রজাবতী গৌতমীয় অংশরূপে অবতীর্ণ, একদিন শত শত ভিক্ষু, স্থবির, মহাস্থবির, ও অহং ঐ চরণযুগলের উদ্দেশ্বে নতশির হইবে। শুন দেবি, প্রবাসী—ভাদ্র, ১৩২২ 、ヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘ^^^/ [ ১৫শ ভাগ,১ম খণ্ড ০৮:৪৬, ১৯ এপ্রিল ২০১৬ (ইউটিসি)SumitaBot (আলাপ) ০৮:৪৬, ১৯ এপ্রিল ২০১৬ (ইউটিসি) সময় নিকট, কোমলহৃদয় দৃঢ় কর, তুমি অনন্তশূন্যের তোরণে উপস্থিত, আমি লক্ষ যোজন দূরে থাকিয়া তাহা স্পষ্ট দেখিতে পাইতেছি। জাতক শ্রবণ কর— যুগে যুগে ভগবান ধরণীতলে অবতীর্ণ হইয়া সৰ্ব্বসত্ত্বহিতার্থ আত্মত্যাগ করিয়া নিৰ্ব্বাণের পথ প্রশস্ত করিয়াছিলেন। সৰ্ব্বার্থ পরিত্যাগ ব্যতীত নিৰ্ব্বাণ লাভ হয় না। বোধিসত্ত্ব একবার বারাণী রাজ্যে মৃগযুথপতিরূপে জন্মগ্রহণ করিয়াছিলেন। একবার ব্যাধের দল আসিয়া যুথবেষ্টন করিল। মৃগগণ প্রাণভয়ে পলায়ন করিতে আরম্ভ করিল। সেই দলে একটি গর্ভবতী মৃগী ছিল, সে পলায়ন করিতে পারিল না। পথে একটি ক্ষুদ্র নদী ছিল, অন্য মৃগগণ তাহ স্বচ্ছদে লম্ফ দিয়া পার হইয়৷ গেল কিন্তু মূগী নিরুপায় হইয় তাহার পারে দাড়াইয়৷ রহিল। যুদ্রপতি বোধিসত্ত্ব তাহার অবস্থা দেখিয়া নদীগর্ভে লম্ফ প্রদান করিলেন, মৃগী তাহার পৃষ্ঠে পদরক্ষা করিয়া উদ্ধার পাইল কিন্তু ব্যাধগণের শত শত চর আসিয়া যুথপতির জীবনের অবসান করিল। শত শত জীবনে গৌতম আত্মোৎসর্গ করিয়া জীবের কল্যাণ সাধন করিয়াছেন, পৃথিবীতে লক্ষ লক্ষ নরনারী এখনও কৃতজ্ঞচিত্তে জাতকমালা গান করিয়া থাকে। দেবি, মহাশূন্তের দ্বার চিরকুদ্ধ, আত্মোৎসর্গ ব্যতীত তাহ মুক্ত হয় না। পরীক্ষা সন্নিকট, প্রস্তুত হও । হৃদয় কঠিন কর। দেবি, সৰ্ব্বার্থসিদ্ধি করিয়া বৃদ্ধকে মনে রাথিও, জন্মে জন্মে যেন তোমার চরণ দর্শন পাই।" বৃন্ধভিক্ষু কল্যাণী দেবীকে প্রণাম করিয়া দ্রুতপদে প্রস্থান করিলেন। কল্যাণী ও অমলা বিস্মিত হইয়া তাহার দিকে চাহিয়া রহিলেন । এই সময়ে মহাদেবী দেদদেবী তাহার নিকটে আসিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “অমল, কি হইয়াছে ?" আমলাদেবী কহিলেন, “দেবি, বৃদ্ধ ভিক্ষু দুইবার কল্যাণী দেবীকে প্রণাম করিলেন এবং কত কথা কহিয়া গেলেন তাহা ত বুঝিতে পারিলাম না।” “কি কথা।” - “মোক্ষ, নিৰ্ব্বাণ, এই সমস্ত।" ~ “অমঙ্গলের কথা কিছু বলেন নাই ত?” “দেবি, মঙ্গল কি অমঙ্গল তাহা কিছু বুঝিলাম না।" - ৫ম সংখ্যা ] SumitaBot (আলাপ) পঞ্চম পরিচ্ছেদ । মন্ত্ৰগৃহ। y সন্ধ্যাকালে গৌড়নগরে রাজপ্রাসাদে গঙ্গাতীরবর্তী একটি কক্ষে মহারাজাধিরাজ গৌড়েশ্বর, মন্ত্রী নায়ক ও সামস্তগণে বেষ্টিত হইয়া উপবিষ্ট আছেন। দূরে স্বতন্ত্র আসনে মহাস্থবির বুদ্ধভদ্র ও চক্ররাজ বিশ্বনিন্দ আসীন রহিয়াছেন। সকলেরই মুখ গম্ভীর ও দুশ্চিন্তাক্লিষ্ট। সম্রাট সামান্য কাঠাসনে উপবিষ্ট আছেন, তাহার কপোল দক্ষিণ হস্তে সংলগ্ন, পাশ্বে মহাকুমার বাকৃপাল অলিন্দের স্তম্ভে ভর দিয়া দাড়াইয়া আছেন। সম্রাটের সম্মুখে বৃদ্ধমন্ত্রী গর্গদেব অবনত মস্তকে বসিয়া আছেন। সামন্তচক্রের সম্মুখে রাঢ়রাজ রণসিংহ, প্রমথসিংহ, ও কমলসিংহ আসীন, সকলের পশ্চাতে বৃদ্ধ উদ্ধবঘোষ উপবিষ্ট। বহুক্ষণ পরে বিশ্বানন্দ জিজ্ঞাসা করিলেন, “মহারাজ, কি করিবেন স্থির করিলেন ? সমস্যা পূরণের অধিক সময় নাই। এখনই রাষ্ট্রকুটরাজদূত গৌড়েশ্বরের উত্তর প্রবণের জন্য সভায় আগমন করিবেন, তাহাকে উত্তর দিবার জন্য প্রস্তুত হউন।” গৌড়েশ্বর ধীরে ধীরে মস্তকোত্তোলন করিয়া কহিলেন, "কি উত্তর দিব প্রভু, আমার মস্তিষ্ক বিকৃত হইয়াছে।" বিশ্বানন্দ কহিলেন "গৌড়েশ্বর, দুইটি মাত্র পথ দেখিতেছি, প্রথম পথ সরল—ইহার অর্থ রাষ্ট্রকূটরাজের প্রার্থন পূরণ এবং রঘুসিংহের কন্যাকে প্রত্যাখ্যান ; দ্বিতীয় পথ বন্ধুর, ইহার অর্থ রাষ্ট্রকূটরাজের সহিত যুদ্ধ, গুর্জরের সহিত যুদ্ধ, চক্রায়ুধের রাজ্যনাশ এবং বহুবর্ষব্যাপী পরিশ্রমের ফলনাশ। তৃতীয় পন্থা নাই ।” কমলসিংহ কহিলেন, “মহারাজ, এই দুই পথ ভিন্ন অন্য পথ নাই, প্রভু বিশ্বানন্দ সত্য কহিয়াছেন। রাষ্ট্রকূটরাজদূত শীঘ্রই ফিরিয়া আসিবেন, চিত্ত স্থির করুন।" ধৰ্ম্মপাল ভীষ্মদেবকে লক্ষ্য করিয়া কহিলেন, “তাত, আপনি পিতৃতুল্য, এই বিষম বিপদ হইতে আমাকে পরিত্ৰাণ করুন। পিতা গোকর্ণের দুর্গস্বামিনীকে বাক্যদান করি ৮গিছিলেন যে স্বৰ্গীয় রসিংহের কন্যার সহিত অামার বিবাহ দিবেন, সময়াভাবে বিবাহ হয় নাই। পিতা-ধে-রাত্রিতে রঘুসিংহের দুর্গরক্ষা করিয়াছিলেন, সেই L ধৰ্ম্মপাল


۔-م---------------- بر..--م۔م۔م۔

- ৬২৯ রাত্রিতে তাহার আদেশে কল্যাণীকে লইয়া আমি একাকী গোকর্ণদুর্গ পরিত্যাগ করিয়াছিলাম। দুইদিন জনশূন্ত বনে ভ্রমণ করিয়া প্রভুদত্ত ও বিমলনন্দীর সাক্ষাৎ পাইয়াছিলাম, তদবধি কল্যাণী আমার ভাবী পত্নীরূপে পরিচিত। গুর্জরসেনা যেদিন গোকৰ্ণ দুর্গ আক্রমণ করিয়াছিল, সেদিন মৃত দুর্গস্বামিনী কুমাৰী কন্যাকে আমার হস্তে সমর্পণ করিয়া তাহাকে স্থানান্তরে লইয়। যাইতে অনুরোধ করিয়াছিলেন। কল্যাণীকে লইয়া ঢেঙ্করী যাত্রার কালে গুর্জরসেনা কর্তৃক আক্রান্ত হইয়াছিলাম, সঙ্গীহীন হইয়া দুইজনে বনে বনে ভ্রমণ করিয়াছি। কল্যাণী দহ্য কর্তৃক অপহৃত হইয়াছে, আমি একাকী তাহাকে উদ্ধার করিয়াছি, অবশেষে গুরুদত্ত আসিয়া আমাদিগকে উদ্ধার করিয়াছে। ঢেঙ্করী নগরে কল্যাণীদেবী আমার ধৰ্ম্মপত্নীরূপে গৌড়সাম্রাজ্যের পট্টমহাদেবীরূপে পরিচিত হইয়াছে।. মন্ত্র উচ্চারণ করিয়া কল্যাণীর সহিত আমার বিবাহ হয় নাই বটে কিন্তু নিখিল জগতের চক্ষে কল্যাণী আমার ধৰ্ম্মপত্নী পক্ষাস্তরে হৰ্ষবৰ্দ্ধনের মাতুলপুত্ৰ ভণ্ডীর বংশধর মহারাজাধিরাজ চক্রায়ুধ আমার আশ্রিত। আবক্ষ গঙ্গাসলিলে নিমগ্ন থাকিয়া পিতৃশ্ৰাদ্ধ-দিনে চক্রায়ুধকে আশ্রয় প্রদান করিয়াছি। সহস্ৰ সহস্ৰ গৌড়ীয় বীর চক্রায়ুধের জন্য প্রাণ বিসর্জন দিয়া গৌড়দেশের নাম উজ্জল করিয়া তুলিয়াছে। দুৰ্দ্ধৰ্ষ গুর্জরসেনা বার বার পরাজিত হইয়াছে। অবশেষে বৌদ্ধ সঙ্ঘস্থবিরগণের স্থবৰ্ণ-লালসার জন্য আমাদিগকে পরাজিত হইতে হইয়াছিল। বছকষ্টার্জিত কানাকুক্তরাজ্য যখন গুর্জরকরকবলিত, গুজরসেনা যখন বৰ্দ্ধমান ও পৌণ্ডবৰ্দ্ধন ভূক্তি অধিকার করিয়াছে, তখন নিরূপায় হইয়া রাষ্ট্রকূটরাজের সাহায্য ভিক্ষা করিয়াছিলাম। গৌড়সাম্রাজ্যের ঘোর দুদিনে সদাশয় দক্ষিণাপথেশ্বর নাগভট্টের বিরুদ্ধে যুদ্ধযাত্রা করিয়াছিলেন। তাহারই সাহায্যে শক্রসেন গৌড়সাম্রাজ্য হইতে বিতাড়িত হইয়াছে, তাহারই জন্ত চক্রায়ুধের রাজ্যের পুনরুদ্ধার হইয়াছে। অসময়ের মিত্র গোবিন্দ আমার নিকট যাহা প্রার্থনা করিয়াছিলেন তাহ অন্ত সময়ে হইলে অতি সামান্ত কথা, কিন্তু বৰ্ত্তমান অবস্থায় অতি গুরুতর। কল্যাণীকে পরিত্যাগ করিলে কোন