বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:প্রবাসী (সপ্তম ভাগ, দ্বিতীয়াংশ).djvu/২৯১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উন্নত অবস্থ, তজ্জন্ত সেই সব কলেজ, পার্সি ধনকুবেরদিগের নিকট ঋণী। সংখ্যার যাহার ছয় কোটি,এবং ভারতের অদৃষ্টের উপর. যাহাদের প্রভাব বড় কম নহে—সেই মুসলমানের অনেক দিন পর্যন্ত ইংরাজি ইস্কুলের প্রতি বিমুখ ছিল। ভারতের ভূতপূৰ্ব্ব প্রভুরা, ভারতের বর্তমান প্রভুদের নিকট জ্ঞানশিক্ষা করিতে অস্বীকৃত হইল। এই অরুচিজনক বিদেশীশিক্ষা, তাহদের গৰ্ব্ব ও বিদ্বেষ বুদ্ধিকে আরও দৃঢ়ীকৃত করিল। ইংরাজের হিন্দীভাষাকে ভারতের সাধারণ ভাষা করেন নাই বলিয়, যে জজ, আক্ষেপ প্রকাশ করিয়াছিলেন তিনি একজন মুসলমান । এখন মুসলমানের বৃঝিয়াছে, এই শিক্ষা হইতে বিরত থাকিয় তাহীরা একটা ভারি ভুল করিয়াছে ; এখন তাহারা মনে-মনে বুঝিতেছে, এই জন্যই হিন্দু ও পার্সিরা তাহাদিগকে সৰ্ব্ববিষয়ে অতিক্রম করিয়াছে, তাহাদের উপরে উঠিয়াছে। একজন সৈয়দ যখন উত্তর-ভারতে আলীগড়ের মুসলমান কালেজ স্থাপন করিলেন, তখন হইতেই, ইংরাজিশিক্ষা মুসলমানদের মধ্যে প্রচলিত হইল। যে সময়ে হিন্দুদের জাতীয় কংগ্রেস-সভা বসে, সেই একই সময়ে মুসলমানদেরও বার্ষিক শিক্ষা-কংগ্রেসেরও অধিবেশন হয় । ভারতবাসীগণ আমাদের ফরাসীভাষী স্বেচ্ছাপূৰ্ব্বক শিক্ষা করেJ ইহাতে আমাদের প্রতি বিশেষ সম্মান প্রদর্শিত হয় সন্দেহ নাই। কিন্তু এই ভাষা শিক্ষায় জন্ত তাহারা আমাদের নিকট ঋণী নহে। যে ব্যক্তি বোম্বায়ে ফরাসীভাষাকে লোকপ্রিয় করিয়া তুলিয়াছিলেন তিনি একজন স্পেনদেশীয় লোক। কতকগুলি পার্সি বালিকা তাহার ছাত্র ছিল, তাহাদেরই যত্ন ও চেষ্টায় তিনি বিশ্ববিদ্যালয় হইতে ফরাসী শিখাইবার অধিকার-পত্র প্রাপ্ত হন। প্রথমে এই বিষয় লইয়া একদল লোকের সহিত বালিকাদিগের সংঘর্ষ উপস্থিত হয় ; তাহারা কখনও ভাবে নাই যে জেসুইটু পাদ্রির এই কাজে তাহাদিগকে বাধ৷ দিবে। কিন্তু শেষে বালিকাদিগেরই জিদ বজায় রহিল। তাহারাই জয়লাভ করিল। সেই অবধি ফরাসীভাষা—সংস্কৃত পার্সি, ল্যাটিন ও গ্রীকের সহিত সমান আসন প্রাপ্ত হইল ; অর্থাৎ, যাহা অবশুশিক্ষনীয় সেই ইংরাজির পরেই বি-এ ও এম-এ পরীক্ষায় দ্বিতীয় ভাষারূপে পরিগণিত হইল। ফরাসী ভাষার ধরণ-ধারণ ও সৌন্দর্ঘ্যে তাহার এরূপ মুগ্ধ হইয়াছিল যে, পুরাতন জাতীয়ভাষা সমূহের সহিত ফরাসীভাষার শোচনীয় প্রতিযোগিতা উপস্থিত হইল। যাহারা সোনার চস্মার আড়ালে সুন্দর নেত্রযুগল ঢাকিয়া রাখে, সেই বোম্বাই নগরস্থ অ্যালেকজান্দ্রা স্কুলের বালিকারা, ফার্সি অপেক্ষ আমাদের ভাষাকে বেশী পছন্দ করে। ব্রাহ্মণ-সন্তানের সংস্কৃত পরিত্যাগ করিয়া ফরাসী পড়ে। এই উদ্যোগ অনুষ্ঠান যদি আরও কিছু দিন সমানভাবে চলিতে থাকে, তাহা হইলে , পুরাতন ভারতের প্রাচীনভাষার অনুরাগী ভক্তলোক নিতান্ত বিরল হইয়া পড়িবে ; ভক্তের মধ্যে থাকিবে শুধু কতকগুলি পণ্ডিত ; তাহারাই “ফ্রান্স-কলেজের” দ্যায় মুষ্টিমেয় শ্রোতৃমণ্ডলীর নিকট সংস্কৃতভাষা সম্বন্ধে বক্তৃতা করিবেন। হিন্দুরা ফরাসী শিখিতেছে-–এ ত খুবই ভাল কথা ; কিন্তু শেষে যদি বাধ্য হইয়া, সংস্কৃত শিখিবার জন্য তাহাদিগকে ফ্রানসে আসিতে হয়, সেটাও ত উচিত হয় না। > বিশেষতঃ বোম্বাই নগরেই ফরাসী ভাষার শিক্ষা, বিস্তার লাভ করিয়াছিল ; কেন না প্রথমে ঐখানেই উহার অঙ্কুর গজাষ্টয় উঠে। আমি 'এলফিনষ্টোন কলেজ’ ‘নিউ-হাইস্কুল’ ‘এলফিনষ্টোন হাইস্কুল, জেসুইট পাদ্রিদের পরিচালিত ‘সেন্ট-জেভিয়ার কালেজ,’ ‘অ্যালেক্জান্দ্র স্কুল’ দেখিতে গিয়াছিলাম। এলফিনষ্টোন-কালেজ, এলফিনষ্টোন হাইস্কুলএই দুইটা সরকারী বিদ্যালয় পার্সিদের অর্থে স্থাপিত । অপরগুলি পার্সিদিগের একেবারেই নিজস্ব । এই সমস্ত বিদ্যালয়ের পরিচালক ও অধ্যাপকগণ আমার প্রতি যথেষ্ট অনুগ্রহ প্রদর্শন করিয়াছিলেন। টুপি মাথা হইতে না খুলিয়া তাহায়া আমাকে অভ্যর্থনা করিলেন। টুপি মাথায় রাখা, পাসদের মধ্যে সম্মান দেখাইবার চিন্তু। অধ্যাপক পেদ্রাজার প্রার্থনা অনুসারে আমি নিউ হাইস্কুলে, ৮০ জন ছাত্রের সমক্ষে ফরাসীভাষায় একটু সম্ভাষণ করিলাম। পাঁচ ছয় জন মুসলমান, কতকগুলি হিন্দু ও কতকগুলি পার্সি আমার শ্রোত ; তাহারা মনোযোগের সহিত শুনিতেছিল এবং আমার কথা বোধ হয় বুঝিতেও পারিতেছিল। ছাত্রেরা পুস্তক হইতে যে সকল লেখা ‘কাপি করিয়াছিল, পেদ্রাজ তাহাদের সেই কাপিণ্ডল