বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:প্রবাসী (সপ্তম ভাগ, দ্বিতীয়াংশ).djvu/৩৬৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

لانان ইউরোপীয় ধৰ্ম্ময়াজকগণের মতে চীনারা ধৰ্ম্মজীবন যাপন করে না, কিন্তু তাহারা নৈতিকজীবন যাপন করিয়া থাকে। র্তাহারা বলেন চীনারা ধৰ্ম্মাপেক্ষ দর্শন শাস্ত্রের পক্ষপাতী । ইউরোপীয় পণ্ডিতগণ বৌদ্ধধৰ্ম্ম সম্বন্ধেও এই প্রকার মত প্রকাশ করিয়া থাকেন যে “Buddhism is not a religion, but it is the following of philosophy" w«ífe, বৌদ্ধধৰ্ম্ম প্রকৃত ধৰ্ম্ম নহে, তাহা মাত্র দর্শনশাস্ত্রের মতানুসারে চালিত । র্তাহারা আরো বলেন যে বৌদ্ধধৰ্ম্ম ও তাও ধৰ্ম্ম ক্রমে অন্তঃসারশূন্ত হইয়৷ খোসাবৎ হইতেছে। এই সকল ধৰ্ম্মমতের উপাসনা পূৰ্ব্বে আধ্যাত্মিকতায় পূর্ণ ছিল কিন্তু এখন ষ্টত কেবল বাহ্যিক ক্রিয়াকাণ্ডে পরিণত হইতেছে। চীনাগণ প্রকৃত পক্ষে কনফুসিয়াসের দার্শনিক মতাবলম্বী। পাদ্রীগণ বলেন যে “Confuceanism is a system of ethics, a philosophy rather than a religion.” বৌদ্ধধৰ্ম্মষ্ট হউক বা তাও ধৰ্ম্মই হউক সকল চীনারাই কনফুসিয়াসের মতের অন্তবত্ৰী। চীনাবা যে ধৰ্ম্মাবলম্বীই হউক বাহিক আড়ম্বর খুব করিয়া থাকে কিন্তু আধ্যাত্মিক উপাসনা প্রায়ই নাই। তাহারা কনফুসিয়াসের বিধি অনুসারে চলে এবং স্বভাবকে পূজা করে। পেকিনের সমাটের এই প্রকার স্বভাবের উপাসনাতে তাঙ্গষ্ট প্রতীতি হয় । চীন দেশে যত ধৰ্ম্মোৎসব হইয়া থাকে তাহার কোন না কোনটাই প্রকৃতির কোন না কোন দৃশু হইতে কল্পিত হইয়া থাকিবে। যথা, বসন্তোৎসব, শীতকালীন ও গ্রীষ্মকালীন পূজা, নববর্ষের উৎসব ইত্যাদি তাঙ্গর দুষ্টান্ত স্থল । তাহাদের যত জটিল নীতি ও ধৰ্ম্মমত তাহার সকলের মুলে প্রকৃতির নীতি নিহিত। আমাদের হিন্দু ধৰ্ম্মের সহিত ও এবিষয়ে সাদৃশু দৃষ্ট হইয়া থাকে। যেমন বৈশাখে গরমের দিনে শীতলা, পিতৃলোকের পাৰ্ব্বন শ্ৰাদ্ধ, শারদীয় পূজা, লক্ষ্মী পূজা, কাত্তিক মাসে কাৰ্ত্তিক পূজা ও হল-চালন, নবান্ন, বাস্তু পূজা, শ্ৰীপঞ্চমী, বাসন্তী পূজা, ঝড় বৃষ্টি হইলে স্বৰ্য্য পূজা ইন্দ্রের দই খই দেওয়া, আগুনের ভয় হইলে ব্ৰহ্মা পূজা, ইত্যাদিও প্রকৃতিপূজার পরিচায়ক। ইউরোপীয়গণ বলেন যে চীন জাতির এই প্রকৃতির জন্যই তাহারা সহস্ৰ সহস্ৰীবৎসর কাল হইতে আপন ধৰ্ম্ম প্রবাসী । [ १भ छांश । প্রায় একই ভাবে রক্ষা করিতে সমর্থ হইয়াছে। তাহারা তাতার মংগল মাঞ্চুতাতার প্রভৃতি জাতিগণ কর্তৃক বহু শতাব্দী যাবত পরাভূত হইয়া এবং পরাধীন থাকিলেও তাঙ্গদের ধৰ্ম্মমতের বিপর্যায় ঘটে নাই। কোন বিজেতা জাতিই তাহাদের ধৰ্ম্মমতের পরিবর্তন করাষ্টতে পারেন নাই, বরং বিজেতাগণষ্ট ক্রমে তাহদের ধৰ্ম্মের মত গ্রহণ করিয়া তাহাতেই ডুবিয়া রহিয়াছেন। মংগল তাতার ও মাঞ্চু তাতারগণ সকলেই ধীরে ধীরে চীনাদের আচার ব্যবহার ও ধৰ্ম্মমত গ্রহণ করিয়া খাস চীনাদের মত হইয়া গিয়াছেন এবং এই সকল বিজয়ী জাতিগণ কালে চীনদেশের শাসনপ্রণালী অবলম্বন করিতে বাধ্য হইয়াছেন। তাতার কারণ ংগল ও তাতারগণ সাহসী ও দ্রুদ্ধৰ্মজাতি হইলেও র্ত্যহাদের সাহিত্য দর্শনশাস্ত্রাদি বিশেষ উন্নতভাবাপন্ন ছিল না । বর্তমান মাঞ্চগণ যখন ১৬৪৬ খৃঃ পেকিন অধিকার করেন, তখন র্তাহার! সদ্ধপ্রিয় এক অসভ্য জাতি বিশেষ ছিলেন। তাহারাও অন্যান্ত বিজেতাগণের দ্যায় চীনদিগকে নানা প্রকাব অধিকার দিয়া তাহাদিগকে সন্তুষ্ট রাথিতে চেষ্টা করিয়াছিলেন। এবং চীনদেশ শাসন চীনদেশের আইনান্নসারে করিতে বাধ্য হইয়াছিলেন। এক বাহুবল ব্যতীত আর সকল বিষয়েই র্তাহাদিগকে চীনার সাহায্য গ্ৰহণ করিতে হইয়াছিল । বর্তমানে মাঞ্চগণের আচার ব্যবহার পরণ পরিচ্ছদ চীনাদিগের সঙ্গে এমনভাবে মিশিয়া গিয়াছে যে অনেক সময়ে কে চীনা কে মাধু তাছা বাছিয়া বাহির করা যায় না। সমাট স্বয়ং মাঞ্চু হইলেও চীনাদিগের মত মাথায় বেণী রাখেন এবং চীনা পরিচ্ছদ পরিধান করিয়া থাকেন। মাঞ্চুগণ শাস্তিপ্রিয় চীনাদিগের সঙ্গে বাস করিয়া তাহরাও শান্তপ্রকৃতি হইয়াছে। তাহাদের সেই সমরপ্রিয়তা ও দুৰ্দ্ধৰ্ষ প্রকৃতি তাদৃশ এখন আর নাই। মাঞ্চুগণ কনফুসিয়াসের ধৰ্ম্মমতাবলম্বী হইয়াছে। কিন্তু পরণ পরিচ্ছদ ও আচার ব্যবহারের সাদৃপ্ত থাকিলেও এই দুই জাতির মধ্যে পরস্পরের মনের মিল তাদৃশ আছে বলিয়া বোধ হয় না। মাঞ্চুগণ চীন-রমণীগণের বাধা বিকৃত পদ ভাল বাসে না, সেই জন্য তাহারা চীনা রমণী পাণিগ্রহণ করিতে নারাজ। আবার চীনাগণও মাঞ্চুরমণীগণের দীর্ঘ পদ পছন্দ করে না