বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:প্রবাসী (সপ্তম ভাগ, দ্বিতীয়াংশ).djvu/৩৯৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৬৯৬ : আনিয়া দিল—সে স্বর মে ঐ কয়টি কথার সুর তাহা নহে তাকা পরেশ বাবুর নিজের জীবনের একটি প্রশান্ত গভীরতার সুর। - সুচরিতা এবং ললিতার মুথে একটি আনন্দিত"ভক্তির দীপ্তি আলে। ফেলিয়া গেল। বিনয় চুপ করিয়া রহিল। সেও মনে মনে জানিত গোরার মধ্যে একটা প্রচণ্ড জবরদস্তি আছে--সত্যের বাহকদের বাক্যে মনে ও কয়ে মে একটি সহজ ও সরল শাস্তি থাকা উচিত তাহ গোরার নাই—পরেশ বাবুর কথা শুনিয়া সেকথা তাহার মনে যেন আরো স্পষ্ট করিয়া আঘাত করিল। অবশু, বিনয় এতদিন গোরার পক্ষে এই বলিয়া মনে মনে তর্ক করিয়াছে যে সমাজের অবস্থা যখন টলমল, বাহিরের দেশকালের সঙ্গে যখন বিরোধ বাধিয়াছে তথন সত্যের সৈনিকরা স্বাভাবিকতা রক্ষা করিতে পারে না –তথন সাময়িক প্রয়োজনেব আকষণে সত্যের মধ্যেও ভাঙচুর আসিয়া পড়ে। আজ পরেশ বাবুর কথায় বিনয় ক্ষণকালের জন্ত মনে প্রশ্ন করিল, যে, সাময়িক প্রয়োজন সাধনের লুব্ধতায় সত্যকে ক্ষুব্ধ করিয়া তোলা সাধারণ লোকের পক্ষেত স্বাভাবিক কিন্তু তাতার গোরা কি সেই সাধারণ লোকের দলে ? সুচরিতা রাত্রে বিছানায় আসিয়া শুইলে পর ললিত। তাহার খাটের একধারে আসিয়া বসিল । সুচরিতা বুঝিল ললিতার মনের ভিতর একটা কোনো কথা ঘুরিয়া বেড়াইতেছে । কথাটা যে বিনয়ের সম্বন্ধে তাহাও সুচরিতা বুঝিয়াছিল। সেইজন্য সুচবিতা আপনি কথা পাড়িল--“বিনয় বাবুকে কিন্তু আমার বেশ ভাল লাগে ।” ললিত কহিল-“তিনি কি না কেবলি গৌর বাবুর কথাই বলেন সেইজন্তে তোমার ভাল লাগে।” সুচরিতা এ কথাটার ভিতরকার ইঙ্গিতটা বুঝিয়াও বুঝিল না । সে একটা সরলভাব ধারণ করিয়া কহিল— “তা সত্যি, ওঁর মুখ থেকে গৌর বাবুর কথা শুনতে আমার ভারি আনন্দ হয়। আমি যেন তাকে স্পষ্ট দেখতে পাই।” ললিত কহিল—“আমার ত কিছু ভাল লাগে না— আমার রাগ ধরে ।” সুচরিত আশ্চৰ্য্য হইয়া কহিল, “কেন ?” প্রবাসী । এতক্ষণের সমস্ত আলোচনার উপরে যেন একটা বড় মুর [ १ञ छांश । ললিত কহিল—“গোর, গোরা, গোরা, দিনরাত্রি কেবল গোরা ! ওঁর বন্ধু গোরা হয় ত খুব মস্ত লোক, বেশ ত ভালই ত—কিন্তু উনিও ত মানুষ।” সুচরিত হাসিয়া কহিল—“তা ত বটেই কিন্তু তার ব্যাঘাত কি হয়েছে।” . ললিতা। ওঁর বন্ধু ওঁকে এমনি ঢেকে ফেলেচেন যে উনি নিজেকে প্রকাশ করতে পারচেন না । যেন কাচপোকায় তেলাপোকাকে ধরেচে–ওরকম অবস্থায় কঁচিপোকার উপরেও আমার রাগ ধরে, তেলাপোকার উপরেও অামার শ্রদ্ধা হয় না । ললিতার কথার কাজ দেখিয়া সুচরিতা কিছু না বলিয়া হাসিতে লাগিল । ললিত কহিল, “দিদি তুমি হাস্চ কিন্তু আমি তোমাকে বলচি আমাকে যদি কেউ ওরকম করে চাপা দিতে চেষ্টা করত আমি তাকে একদিনের জন্যেও সহ করতে পারতুম না। এই মনে কর তুমি—লোকে যাই মনে করুক তুমি আমাকে আচ্ছন্ন করে রাখনি-তোমার সেরকম প্রকৃতিই নয়—সেই জন্তেই আমি তোমাকে এত ভালবাসি। আসল, বাবার কাছে থেকে তোমার ঐ শিক্ষণ হয়েছে ---তিনি সব লোককেই তার জায়গাটুকু ছেড়ে দেন।” এই পরিবারের মধ্যে সুচরিতা এবং ললিত পবেশ বাবুর পরম ভক্ত—বাবা বলিতেই তাহীদের সদয় যেন স্ফীত হইয় উঠে । স্বচরিতা কহিল -“বাবার সঙ্গে কি আর কারে তুলনা হয় ? কিন্তু যাই বল ভাই বিনয় বাবু ভারি চমৎকার করে বলতে পারেন।” ললিতা। ওগুলো ঠিক ওঁর মনের কথা নয় বলেই অত চমৎকার করে বলেন। যদি নিজের কথা বলতেন তাহলে বেশ দিব্যি সহজ কথা হত, মনে হত না যে, ভেবে ভেবে বানিয়ে বানিয়ে বলচেন। চমৎকার কথার চেয়ে সে আমার ঢের ভাল লাগে । সুচরিত। তা রাগ করিস্ কেন ভাই ! গৌরমোহন বাবুর কথাগুলো ওঁর নিজেরই কথা হয়ে গেছে। ললিতা । তা যদি হয় ত সে ভারি বিশ্ৰী-ঈশ্বর কি বুদ্ধি দিয়েছেন পরের কথা ব্যাখ্যা করবার আর মুখ