বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:প্রাচীন ভারতে নারী - ক্ষিতিমোহন সেন (১৯৫০).pdf/১০৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১০৪
প্রাচীন ভারতে নারী

ফলাইবার চেষ্টা একটুও দেখা যায় না। সহজ ও অসংদিগ্ধ ভাষায় সোজাসুজি মতামত ও সিদ্ধান্তগুলি দেখাইতে বরদরাজের আগ্রহ। মাধবীয় গ্রন্থে এই গুণটি দুর্লভ। বিজ্ঞানেশ্বরের মিতাক্ষরার উপর বরদরাজের গভীর শ্রদ্ধা ছিল। তিনি মিতাক্ষরাকে অনুসরণ করিলেও মিতাক্ষরা বরদারাজ-চরিত ব্যবহারনির্ণয়ের মত প্রাঞ্জল নহে। অনেক সময় মিতাক্ষরার বিপুল বিচারজালের মধ্যে আসল কথাটিই চাপা পড়িয়া যায়।

 মনু ও বৃহস্পতির স্মৃতির উপর বরদরাজ বেশি নির্ভর করিয়াছেন। শাস্ত্রের উপর নির্ভর করিলেও তিনি যুক্তিকে কোথাও উপেক্ষা করেন নাই। তাই গ্রন্থারম্ভশ্লোকেই তিনি বলিয়াছেন, যুক্তি ও স্মৃতির সহায়তায় আমরা নির্ণয়ে প্রবৃত্ত হইয়াছি—

নির্ণয়ঃ ক্রিয়তেঽস্মাভির্যুক্তিস্মৃত্যনুরোধতঃ।

অথচ স্মৃতিচন্দ্রিকার দেবণ্ণভট্ট বলেন, সবই আমার শাস্ত্রানুসারে লেখা, নিজের মতামত তাহাতে কিছুই ফলাই নাই (সংস্কার কাণ্ড, দ্বিতীয় শ্লোক)। যুক্তি বাদ দিয়া শুধু শাস্ত্র আশ্রয় করিয়া বিচার করিতে গেলে ধর্মহানি হয় ইহাই বৃহস্পতির মত। এই মতের সঙ্গে বরদরাজের মনের মিল থাকায় তিনি বৃহস্পতির এই বাণীটি উদ্ধৃত করিয়াছেন—

কেবলং শাস্ত্রমাশ্রিত্য ন কর্তব্যোঽর্থনির্ণয়ঃ। পূঃ ১৩৯

 সবর্ণা ও অসবর্ণা পত্নীতে জাত সন্তানদের উত্তরাধিকারের বিষয়ে অনেক শাস্ত্রকারের ব্যবস্থায় বৈষম্য আছে। বরদরাজ এইসব স্থলেও যাহাতে দায়বৈষম্য না হয় সেদিকে দৃষ্টি রাখিয়াছেন। সুবিচারের দিকে তাঁহার সাবধান দৃষ্টি ছিল—

 ন হি ভিন্নজাতীয়স্ত্রীষু জাতানাং ভ্রাতৃণাং সবর্ণাষু জাতানাম্, একজাতীয়ত্বান্ ন তত্র দায়বৈষম্যমিতি। ব্যবহারনির্ণয়, দায়বিভাগকাণ্ড, পৃ ৪২৫

দেখা গেল, বরদরাজের সময়েও অসবর্ণা কন্যাকে বিবাহ করা বন্ধ হইয়া যায় নাই। এবং তখনও অসবর্ণা স্ত্রীর সন্তানেরা সবর্ণা স্ত্রীর সন্তানেরই একজাতি হইতেন।

 বিষ্ণু বলেন, সবর্ণা ভার্যার সংখ্যা অনেক হইলে জ্যেষ্ঠার সঙ্গে ধর্মকার্য করিবে। নানাজাতীয়া ভার্যা থাকিলে কনিষ্ঠা হইলেও সমানবর্ণা ভার্যার সহিত ধর্মকার্য করণীয়। সমানবর্ণা ভার্যার অভাবে ‘অনন্তরা’ অর্থাৎ তাহার পর নিম্ন