বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:প্রাচীন ভারতে নারী - ক্ষিতিমোহন সেন (১৯৫০).pdf/৯১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
নানা সংস্কৃতির মিলন
৮৭

 পুরুষেরা এখন চতুরাশ্রম ছাড়িয়া আরামে সংসারে থাকিতে পারেন, কিন্তু বিধবাদের মধ্যে যে যতিব্রত আসিয়াছিল তাহার আর পরিবর্তন ঘটিল না। শাস্ত্রানুসারে উপনীত পুরুষমাত্রেরই একাদশী ব্রত পালনীয়। নারীর মধ্যে তাহা শুধু বিধবাদের করণীয়। সধবারা উপবাসে বাদ পড়িয়াছেন, কারণ গর্ভে বা কোলে শিশু থাকিতে পারে। এখন পুরুষেরাও সরিয়া গিয়াছেন, মাত্র বিধবাদেরই একাদশী পালনীয়।

 অম্বুবাচী ব্রত তো ‘যতিব্রতী বিধবা’ অর্থাৎ সব পুরুষ ও বিধবার পালনীয়। কিন্তু পালন করিতে দেখা যায় একমাত্র বিধবাদেরই।

 যেসব ব্যবস্থা আর্যেতর সংস্কৃতির সংস্পর্শে আসিয়া আর্যগণ করিয়াছিলেন, সেইসব তপস্যা ও কৃচ্ছ্রাচারের ব্যবস্থা পুরুষেরা ধীরে ধীরে ছাড়িয়াছেন। সবই আছে এখন বিধবার উপরে চাপিয়া।

 এইসব আচার ও যতিধর্ম উচ্চবর্ণের বিধবারাই পালন করিতেন। সংখ্যায় উচ্চবর্ণের লোক কম। বাংলাদেশের সাধারণ লোকের মধ্যে এতকাল বিধবারা মাছ খাইতেন; দুই বেলা খাইতেন। অনেকে পুনরায় বিবাহও করিতেন। এখন সকলেরই চেষ্টা উচ্চতর বর্ণের শামিল হইবার জন্য। কাজেই যাঁহাদের মধ্যে বিধবাবিবাহ ছিল তাঁহারাও তাহা ছাড়িতেছেন। এদিকে বিদ্যাসাগর মহাশয় প্রাণপণ করিয়া দুই-চারিজন উচ্চবর্ণের বিধবাদের মধ্যে বিবাহ চালাইতে পারিলেন কি না বলা সন্দেহ, অথচ নিম্নতর শ্রেণীর বিধবারা দলে দলে পত্যন্তরগ্রহণ ছাড়িয়া পুরুষান্তর আশ্রয় করিয়া রক্ষিতা হইয়া রহিল। যদি তাহারা সেইরূপ যতিধর্ম পালন করিতে পারিত তবু একটা সান্ত্বনা ছিল। কিন্তু বিধবাবিবাহ বাদ দিবার ফলে নানা অনাচার ভ্রূণহত্যা এবং সমাজক্ষয় হইয়াই চলিয়াছে। হয়তো ক্রমে এইভাবেই হিন্দুসমাজ লুপ্ত হইয়া যাইবে।

 সতীদাহ বন্ধ করিতে তো কম হাঙ্গামা হয় নাই। অবশেষে আইন করিয়া তাহা বন্ধ করিতে হয়। আকবরের সময় অনেক বিধবা পুড়িয়া মরিবার ভয়ে হিন্দুধর্ম ত্যাগ করিয়া মুসলমানধর্ম গ্রহণ করিয়াছেন।