পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (দ্বিতীয় ভাগ).djvu/২১৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সীতারাম নন্দ । ছি দিদি ! যদি এত ওষুধ খেলে ত আর তিনটা দিন খেতে কি ? রম। আমি ওষুধ খাই নাই । নন্দ চমকিয়া উঠিল—বলিল, “সে কি ? মোটে না ?” রমা । সব বালিসের নীচে আছে । নন্দ বালিস উল্টাইয়। দেখিল, সব আছে বটে। তখন নন্দ বলিল, “কেন বহিন—এখন আর আত্মঘাতিনী হইবে কেন ? পাপ ত মিটিয়াছে ।” রম । তা নয়—’ইষধ খাব ৷ নন্দ । আর কবে খাবি ? রম।। যবে রাজ। আমাকে দেখিতে আসিবেন । ঝৰ্ব ঝর করির রমার চোখ দিয়া চল পড়িতে লাগিল । নন্দার ও চক্ষে জল আসিল । আর এখন সীতারাম রমাকে দেখিতে আসেন ন| সীতারাম চিত্তবিশ্রামে থাকেন। নন্দ চোখের জল মুছিয়া বলিল, “এবার এলেই তোমাকে দেখিতে আসিবেন " দ্বাদশ পরিচ্ছেদ "এবার এলেই তোমাকে দেখিতে আসিবেন,” এই কথা বলিয়। নন্দ। রম কে আশ্বাস দিয়! আসিয়। ছিল। সেই আশ্বাসে রম। কোন রকমে বাচিয়াছিল - কিন্তু আর বুঝি বাঢ়ে না । নন্দ তাহাকে যে আশ্বাসবাক্য দিয়া আসিয়াছে, নন্দাও তাই জপমাল৷ করিয়াছিল, কিন্তু রাজাকে ধরিতে পারিতেছিল না । যদি কখনও ধরে, তবে অীজ ন| wকাল করিয়। রাজ। প্রস্থান করেন । নন্দ মনে মনে প্রতিজ্ঞ করিয়াছিল যে, কিছুতেই সে সীতারামের উপর রাগ করিবে ন। । ভাবিল, রাজাকে ত ডাকিনীতে পেয়েছে সত্য, কিন্তু তাই বলে আমায় যেন ভূতে ন পায় । আমার ঘাড়ে রাগ-ভূত চাপিলে—এ সংসার এখন আর রাখিবে কে ? তাই নন্দ সীতারামের উপর রাগ করিল না—আপনার অনুষ্ঠেয় কৰ্ম্ম প্রাণপাত করিয়া করিতে লাগিল। কিন্তু ডাকিনীটার উপর রাগ বড় বেশী । ডাকিনী যে শ্ৰী, তাহ নন্দ জানিত ন । সীতারাম ভিন্ন কেহও জানিত না । নন্দ অনেকবার জানিবার জন্য লোক পাঠাইয়াছিল, কিন্তু সীতারামের আজ্ঞ ভিন্ন চিত্তবিশ্রামে মক্ষিক প্রবেশ করিতে পারিত না, সুতরাং কিছু হইল না। তবে জনপ্রবাদ এই যে, ডাকিনীট দিবসে পরমাসুন্দরী মানবী মূৰ্ত্তি ধারণ করিয়া গৃহকৰ্ম্ম করে, ミリー&br (tod 酸 রাত্রিতে শৃগালীরূপ ধারণ করিয়৷ শ্মশানে শ্মশানে বিচরণ পূর্বক নরমাংস ভক্ষণ করে । অতিশয় ভীত হইয়। নন্দ চন্দ্রচূড় ঠাকুরকে সবিশেষ নিবেদন করিল। চন্দ্রচূড় উত্তম তন্ত্রবিৎ ব্রাহ্মণ সংগ্ৰহ করিয়া রাজার উদ্ধারার্থ তান্ত্রিক-যজ্ঞসকল সম্পাদন করাইলেন ; কিন্তু কিছুতেই ডাকিনীর ধবংস হইল না। পরিশেষে এক জন সুদক্ষ তান্ত্রিক বলিলেন, “মনুষ্ঠ হইতে ইহার কিছু উপায় হইবে না । উনি সামান্ত নহেন । ইনি কৈলাসনিবাসিনী সাক্ষাৎ ভবানীর সহচরী, ইহার নাম বিশালাক্ষ্মী ৷ ' ইনি রুদ্রের শাপে কিছু কালের জন্য মৰ্ত্ত্যলোকে মতুৰ্য্যসহবাসার্থ আসিয়াছেন । শাপান্ত হইলে আপনিই ধাইবেন " শুনিয়। চন্দ্রচূড় ও নন। নিরস্ত ও চিন্তামগ্ন হইয়। রহিলেন । তবু নন্দ মনে মনে ভাবিত, “ভবানীর সহচরী হউক, আর ধেই হউক, অামি একবার তাকে পাইলে নখে মাথা চিরি ” তাই নদীর সীতারামের উপর কোন রাগ. নাই । সীতারামও রাজধানীতে আসিলে নন্দার সঙ্গে কখন কখন সাক্ষাৎ করিতেন ; এই সকল সময়ে, নন্দা রমার কথা সীতারামকে জানাইত— বলিভ, “সে বড় কাতর"-তুমি গিয়া একবার দেখিয়া এসে সীতারাম “যাচ্ছি যাব” করিয়া, যান নাই ! আজি নন্দ জোর করিয়া ধরিয়া বসিল— “আজ দেখিতে মা ও—নহিলে এ জন্মে আর দেখা হবে না ।" কাজেই সীতারাম রমাকে দেখিতে গেলেন । সীতারামকে দেখিয়া রম। বড় কাদিল । সীতারামকে কোন তিরস্কার করিল না । কিছুই বলিতে পারিল ন। সীতারামের মনে কিছু অনুতাপ জন্মিল কি না, জানি না । সীতারাম স্নেহস্থচক সম্বোধন করিয়া রোগমুক্তির ভরসা দিতে লাগিলেন। ক্রমে রম। প্রফুল্প হইল, মৃদু মৃদু হাসিতে লাগিল । কিন্তু সাতারামের শঙ্কা হইল যে, আর অধিক বিলম্ব নাই । সীতারাম পালঙ্কের উপর উঠিয়া বসিয়াছিলেন । সেইখানে রমার পুত্ৰ আসিল । আবার রমার চক্ষুতে জল আসিল--কিছুক্ষণ অবাধে জল শুষ্ক গণ্ড বাহিয়া পড়িতে লাগিল । ছেলেও মা’র কান্না দেখিয়া কাদিতেছিল। রম ইঙ্গিতে অস্ফুটস্বরে সীতারামকে বলিলেন, “ওকে একবার কোলে নাও ” সীতারাম অগত্য পুত্রকে কোলে লইলেন। তখন রম সকাতরে ক্ষণিকণ্ঠে রুদ্ধশ্বাসে বলিতে লাগিল, “মা’র দোষে ছেলেকে ত্যাগ করিও না । এই তোমার কাছে.