পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (দ্বিতীয় ভাগ).djvu/২৬৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ॐ তিনি বাহির হইতে কাতরোক্তি করিতে লাগিলেন । আমি হাসিতে হাসিতে বলিলাম, “আমি এখন তোমারই দাসী হইলাম। কিন্তু দেখি, তোমার প্রণয়ের বেগ কাল প্রাতঃকাল পর্য্যস্ত থাকে না থাকে । যদি কালও এমন ভালদাস দেখিতে পাই, তখন তোমার সঙ্গে আবার আলাপ করিব । আজ এই পর্যস্ত ।” আমি দ্বার খুললাম না, অগত্য তিনি অষ্ঠত্র বিশ্রাম করিলেন । জ্যৈষ্ঠ মাসের তাসহ সস্তাপে, দারুণ তৃষ্ণাপীড়িত রোগীকে স্বচ্ছ শীতল জলাশয়তীরে বসাইরা দিয়া মুখ বাপি দাও, যেন সে জল পান করিতে না পারে—বল দেখি, তার জলে ভালবাস। বাড়িবে কি ন ? অনেক বেল হইলে দ্বার খুললাম, দেখিলাম, স্বামী দ্বীরে অসিয়া দাড়াইয়াছেন । আমি আপনার করে "1হার কর গ্রহণ করি। বলিলাম, "প্রাণনাথ, হয় আমাকে রামরাম দণ্ডের বাড়া পাঠাটরা দাও, নচেৎ অষ্টাহ আমার সঙ্গে তালাপ করিও মা । এষ্ট অষ্টাহ তোমার পরীক্ষা " তিনি অষ্টাহ পরীক্ষা স্বীকার করিলেন ।

দেড়শ পরিচ্ছেদ খুন করিয়৷ কুঁসি গেলাম পুরুকে দগ্ধ করিপার সে কোন উপায় বিবাত। স্ত্রীলোককে দিয়াঢ়েল পেষ্ট সকল উপায়ষ্ট অবলম্বন করিয়া-আমি অষ্টাত স্বামীকে দালাতন করিলাম । আমি স্ত্রীলোক, কেমন করিয়া মুখ ফুটিয়া সে সকল কথা বলিব ? আমি যদি আগুন জালিতে না জানিতাম, তবে গত রাত্রিতে এত সলি ত না । কিন্তু কি প্রকারে আগুন বোলিলাম --কি প্রকারে ফুৎকার দিলাম—কি প্রকারে স্বামীর হৃদয় দগ্ধ করিলাম, লজ্জায় তাহার কিছুষ্ট বলিতে পারি না। যদি আমার কোন পাঠিক নরহত্যার ব্রত গ্রহণ করিয়া থাকেন এবং সফল হইয়া থাকেন, তবে তিনিই বুঝিবেন । যদি কোন পাঠক কখন এইরূপ নর ঘাতিনীর হস্তে পড়িয়া থাকেন, তিনিই বুঝিবেন। বলিতে কি, স্ত্রীলোকই পৃথিবীর কণ্টক । আমাদের জাতি হইতে পৃথিবীর যত অনিষ্ট ঘটে, পুরুষ হইতে তত ঘটে না । সৌভাগ্য এই যে, এই নরঘাতিনী বিদ্যা সকল স্ত্রীলোকে জানে না, তাহা হইলে এত দিনে পৃথিবী নির্মমুষ্য হইত। ন্দির •: .*.*. షీన్గ్లో এই অষ্টাই আমি সৰ্ব্বদা স্বামীর কাছে কাছে: থাকিস্তাম—আদর করির কথা কহিতাম, নীরস' কথা একটি কহিতাম না । হাসি, চাহনি,—অঙ্গভঙ্গী,” —সে সকল ত ইভর স্ত্রীলোকের অস্ত্র। আমি প্রথম দিনে আদর করিয়া কথা কহিলাম—দ্বিতীয় দিনে অহুরাগ লক্ষণ দেখাইলাম—তৃতীয় দিনে তাহার ঘরকরণার কাজ করিতে আরম্ভ করিলাম। যাহাতে র্তাহার আহরের পারিপাট্য, শয়নের পারিপাট্য, স্বানের পারিপাট্য হয়, সৰ্ব্বাংশে মাহীতে ভাল থাকেন, তাহাই করিতে আরম্ভ করিলাম ;–স্বহস্তে পাক করিতাম । খড়িকাটি পর্য্যস্ত স্বয়ং প্রস্তুত করিয়া রাখিতাম। তার এতটুকু অসুখ দেখিলে সমস্ত রাত্রি জাগিয়া সেপ করিতাম ! এখন বৃক্তকরে আপনাদের নিকট নিবেদন যে, আপনার না মনে করেন যে, এ সকলই কৃত্ৰিম । ইন্দিরার মনে এতটুকু গৰ্ব্ব আছে যে, কেবল ভরণপোষণের লোভে অথবা স্বামীর ধনে ধনেশ্বরী হইব, এই লোভে সে এই সকল করিতে পারে না ; স্বামী পাইব, এই লোভে, কৃত্রিম প্রণয় প্রকাশ করিতে পারিতাম না ; ইন্দ্রের ইন্দ্রাণী হইব, এমন লোভেও পারিতাম না। স্বামীকে মোহিত করিব বলিয়া হাসি চাহনির ঘটা ঘটাইতে পারি, কিন্তু স্বামীকে মোহিত করিব বলিয়। কৃত্রিম ভালবাসা ছড়াইতে পারি না । ভগবান সে মাটীতে ইন্দিরাকে গড়েন নাই। যে অভাগ এ কথাটা না বুঝিতে পারিবে, যে নারকিনী আমায় বলিবে, হাসি-চাহনির ফঁাদ পাতিতে পার, খোপ খুলিয়। আবার বাধিতে পার, কথার ছলে সুগন্ধি কুঞ্চিতালকগুলি হতভাগ্য মিনূষের গালে ঠেকীইয় তাহাকে রোমাঞ্চিত করিতে পার—আর পার ন, তার পাখানি তুলিয়া টিপিয়া দিতে কিংবা হকার ছিলিমটায় ফু দিতে—যে হতভাগ আমাকে এমন কথা বলিকে, সে পোড়ারমুখী আমার এই জীবনবৃত্তান্ত যেন পড়ে না । তা তোমরা পাচরকমের পাচ জন মেয়ে আছ । পুরুষ পাঠকদিগের কথ। আমি ধরি না—তাহার এ শাস্ত্রের কথা কি বুঝিবে—তোমাদের আসল কথাটা, বুঝাইয়। বলি। ইনি আমার স্বামী—পতিসেবাতেই আমার আনন্দ–তাই কৃত্রিম নহে—সমস্ত আন্তঃকর : ণের সহিত আমি তাহা করিতেছিলাম। মনে করি ; তেছিলান যে, যদি আমাকে গ্রহণ নাই করেন, তবে আমার পক্ষে পৃথিবীর সে সার মুখ,—ষাগ আর কখ- , নও ঘটে নাই, আর কখনও যটিতেও মHও পারে, , তাহা অন্ততঃ এই কয়েক দিনের দন্ত প্রাণ ভরিয়া : ;