পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (দ্বিতীয় ভাগ).djvu/৮৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

'8 বঙ্কিমচন্দ্রের গ্রন্থাবলী একখানি উইল লিখাইলেন। তাহাতে গোবিন্দলাল আট আনা, বিনোদলাল পাচ আনা, কত্রী এক আনা, শৈলবতী এক অনি, আর হরলাল এক আন মাত্র পাইলেন । রাগ করিয়া হরলাল পিতৃগৃহ ত্যাগ করিয়া কলিকাতায় গেলেন, তথা হইতে পিতাকে এক পত্র লিখিলেন । তাহার মৰ্ম্মার্থ এই,— “কলিকাতায় পণ্ডিতেরা মত করিয়াছেন যে, বিধবাবিবাহ শাস্ত্রসন্মত । আমি মানস করিয়াছি যে, একটি বিধবাবিবাহ করিব। আপনি যদ্যপি উইল পরিবর্তন করিয়া আমাকে আট আনা লিখিয় দেন, আর সেই উইল শীঘ্র রেজেষ্টারি করেন, তবেই এ অভিলাষ ত্যাগ করিব, নচেৎ শীঘ্র একটি বিধবাবিবাহ করিব।” হরলাল মনে করিয়াছিলেন যে, কৃষ্ণকান্ত ভয়ে ভীত হইয়া, উইল পরিবর্তন করিয়া, হরলালকে অধিক বিষয় লিখিয়া দিবেন । কিন্তু কৃষ্ণকান্তের যে উত্তর পাইলেন, তাহাতে সে ভরসা রহিল না । কৃষ্ণকান্ত লিখিলেন*T “তুমি আমার ত্যাজ্যপুল । তোমার যাহাকে ইচ্ছ, তাহাকে বিবাহ করিতে পার। আমার যাহাকে ইচ্ছা তাহাকে বিষয় দিব । তুমি এই বিবাহ করিলে আমি উইল বদলাইব বটে, কিন্তু তাহাতে তোমার অনিষ্ট ব্যতীত ইষ্ট হইবে না।” ইহার কিছু পরেই হরলাল সংবাদ পাঠাইলেন যে, তিনি বিধবাবিবাহ করিয়াছেন । কৃষ্ণকান্ত রায় আবার উইলখানি ছিড়িয়। ফেলিলেন। নূতন উইল করিবেন। পাড়ায় ব্ৰহ্মানন্দ ঘোষ নামে একজন নিরাহ ভালমানুষ লোক বাস করিতেন । কৃষ্ণকান্তকে জ্যেঠ। মহাশয় বলিতেন এবং তৎকর্তৃক অনুগৃহীত এবং প্রতিপালিতও হইতেন । ব্ৰহ্মানন্দের হস্তাক্ষর উত্তম। এ সকল লেখাপড়া তাহার দ্বারাই হইত। কৃষ্ণকান্ত সেই দিন ব্ৰহ্মানন্দকে ডাকিয়া বলিলেন যে, “আহারাদির পর এখানে আসিও, নুতন উইল লিখিয়া দিতে হইবে।” বিনোদলাল তথায় উপস্থিত ছিলেন । তিনি কছিলেন, আবার উইল বদলান হুইবে কি অভিপ্রায়ে ?” কৃষ্ণকান্ত কহিলেন, "এবার তোমার জ্যেষ্ঠের ভাগে শূন্ত পড়িবে।” বিনোদ । ইহা ভাল হয় না। তিনিই যেন অপরাধী, কিন্তু তাহার একটি পুত্র আছে--সে শিশু, নিরপরাধী। তাহার উপায় কি হইবে ? কৃষ্ণ । তাহাকে এক পাই লিখিয়া দিব । বিনোদ । এক পাই বখরায় কি হইবে ? কৃষ্ণ । আমার আয় দুই লক্ষ টাকা । তাহার এক পাই বখরায় তিন হাজার টাকার উপর হয়। তাঁহাতে এক জন গৃহস্থের গ্রাসাচ্ছাদন অনায়াসে চলিতে পারে। ইহার অধিক দিব না। বিনোদলাল অনেক বুঝাইলেন, কিন্তু কৰ্ত্ত কোনমতে মতান্তর করিলেন না । দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ ব্ৰহ্মানন্দ স্নানাহার করিয়া নিদ্রার উদ্যোগে ছিলেন, এমন সময়ে বিস্ময়াপন্ন হইয়া দেখিলেন যে, হরলাল রায়। হরলাল আসিয়া তাহার শিয়রে বসিলেন । ব্ৰহ্ম । সে কি বড় বাবু যে, কখন বাড়ী এলে ? হর। বাড়ী এখনও যাই নাই । ব্র । একেবারে এইখানেই ? কলিকাতা হইতে কতক্ষণ আসিতেছ ? কর । কলিকাতা হইতে দুই দিবস হুইল আসিয়াছি। এই দুই দিন কোন স্থানে লুকাইয়া ছিলাম । আবার নাকি নুতন উইল হইবে ? ব্র । এই রকম ত শুনিতেছি। হর । আমার ভাগে এবার শূন্ত । ব্র । কৰ্ত্ত এখন রাগ করে তাই বলছেন, কিন্তু সেটা থাকবে না । হর । আজি বিকালে লেখাপড় হবে ? তুমি লিখিবে ? : ব। তা কি কবৃব ভাই ! কৰ্ত্ত বলিলে ত ‘না বলিতে পারিব না । হর । ভাল, তাতে তোমার দোষ কি ? এখন কিছু রোজকার করিবে ? ব্র । কিলুটে চড়টা ? তা ভাই, মার না কেন ? হর । তা নয় ; হাজার টাকা । ত্র । বিধবা বিয়ে ক’রে না কি ? झन्न । उड़े । ব্র ৷ বয়স গেছে । হর । তবে অার একটি কাজ বলি, এখনই আরম্ভ কর। আগামী কিছু গ্ৰহণ কর। এই বলিয়া ব্রহ্মানন্দের হাতে হরলাল পাচ শত টাকার নোট দিলেন । ব্ৰহ্মানন্দ নোট পাইয়া উলটিয়া পালটিয়া দেখিয়া বলিল, “ইহ লইয়া আমি কি করিব ?”