বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:বঙ্কিম চন্দ্রের দীনবন্ধু-জীবনী.pdf/১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

>之 দীনবন্ধু-জীবনী । কিন্তু তাহার প্রকৃত হাস্যরসপটুতার শতাংশের পরিচয় তাহার গ্রন্থে পাওয়া যায় না। হাস্যরসাবতারণায় তাহার যে পটুতা, তাহার প্রকৃত পরিচয় তাহার কথোপকথনেই পাওয়া যাইত। অনেক সময়ে, তঁহাকে সাক্ষাৎ মূৰ্ত্তিমান হাস্যরস বলিয়া বোধ হইত। দেখা গিয়াছে যে, অনেকে “আর হাসিতে পারি না” বলিয়া তাহার নিকট হইতে পলায়ন করিয়াছে। হাস্যরসে তিনি প্ৰকৃত ঐন্দ্ৰজালিক ছিলেন । অনেক লোক আছে যে, নিবোধ অথচ অত্যন্ত আত্মাভিমানী, এরূপ লোকের পক্ষে দীনবন্ধু সাক্ষাৎ যম ছিলেন। কদাচ তাহাদিগের আত্মাভিমানের প্রতিবাদ করিতেন না, বরং সেই আগুনে সাধ্যমত বাতাস দিতেন । নিৰ্ব্বোধ সেই বাতাসে উন্মত্ত হইয়া উঠিত । তখন তাহার রঙ্গভঙ্গ দেখিতেন । এরূপ লোক দীনবন্ধুর হাতে পড়িলে কোনরূপে নিস্কৃতি পাইত না । ইদানীং কয়েক বৎসর হইল, তাহার হাস্যরসপটুতা ক্রমে মন্দীভূত হইয়। আসিতেছিল। প্ৰায় বৎসরাধিক হইল, এক দিন তাহার কোন বিশেষ বন্ধু জিজ্ঞাসা করিয়াছিলেন “দীনবন্ধু, তোমার সে হাস্যরস কোথা গেল ? তোমার রস শুখাইতেছে, “তুমি আর অধিক কাল বাচিবে না”। দীনবন্ধু কেবলমাত্ৰ উত্তর করিলেন, “কে বলিল ?” কিন্তু পরীক্ষণেই অন্যমনস্ক হইলেন। এক দিবস আমরা একত্রে রাত্রিযাপন করি । তাহার রস উদ্দীপন-শক্তি শুকাইয়াছে কি না। আপনি জানিবার নিমিত্ত একবার সেই রাত্রে চেষ্টা করিয়াছিলেন ; সে চেষ্টা নিতান্ত নিস্ফল হয় নাই । রাত্ৰি প্ৰায় আড়াই প্রহর পর্য্যন্ত অনেক - গুলি বন্ধুকে একেবারে মুগ্ধ করিয়াছিলেন। তখন জানিতাম না যে সেই তাহার শেষ উদ্দীপন । তাহার পর আর কয়েক বার দিবারাত্রি একত্রে বাস করিয়াছি, কিন্তু এই রাত্রের স্তায় আর র্তাহাকে আনন্দ-উৎফুল্ল দেখি নাই । তাহার অসাধারণ ক্ষমতা ক্ৰমে দুর্বল হইতেছিল । তথাপি তাহার ব্যঙ্গশক্তি একেবারে নিস্তেজ হয় নাই । মৃত্যুশয্যায় পড়িয়াও তাহা ত্যাগ করেন নাই । অনেকেই জানেন যে, তাহার মৃত্যুর কারণ বিস্ফোটক, প্ৰথমে একটী পৃষ্ঠ দেশে হয়, তাহার কিঞ্চিৎ উপশম হইলেই আর একটি পশ্চাৎভাগে হইল। তাহার পর শেষ আর একটী বামপদে হইল। এই সময় তাহার পূৰ্ব্বোক্ত বন্ধুটী কাৰ্য্যস্থান হইতে তঁাহাকে দেখিতে গিয়াছিলেন । দীনবন্ধু অতি দূরবর্তী মেঘের ক্ষীণ বিদ্যুতের ন্যায় ঈষৎ হাসিয়া বলিলেন “ফোড়া এখন আমার পায়ে ধরিয়াছে।”