বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:বঙ্কিম চন্দ্রের দীনবন্ধু-জীবনী.pdf/৩৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পরিশিষ্ট ○> তাড়াইয়া দেয় না বলিয়া, দেবী চৌধুরাণীতে তিনি একালের মাথার উপর যতদিন বাজ পড়িবার আদেশ দেন নাই, ততদিন তিনি ইউরোপের আদর্শকেই ঘষিয়া মাজিয়া স্বদেশী করিতেছিলেন। যে যুগে তাহার ‘সাম্য” রচিত, সেই যুগেই বিষবৃক্ষ ও কৃষ্ণকান্তের উইল রচিত হইয়াছিল। বঙ্কিমবাবুর সকল কথা গ্ৰন্থই সুমিষ্ট, সুপাঠ্য ও শিক্ষা প্ৰদ হইলেও, বিষবৃক্ষ ও কৃষ্ণকান্তের উইল র্তাহার শ্রেষ্ঠ রচনা বলিয়া আমার ধারণা। বিষবৃক্ষে একটি আদর্শ রমণীচরিত্র গড়িতে কাব্যশিল্পীকে কত চেষ্টাই না করিতে হইয়াছে। বড়মানুষ জমীদারের ঘরে একটা অতিরিক্ত উপসর্গ জুটিলে গৃহিণীটি বাড়ী ছাড়িয়া পলাইয়া যান না ; হিন্দু নারীর সামাজিক শিক্ষায় এ শ্রেণীর অসুয়া, ও অভিমান জন্মে না । তাহা না জন্মাইলেও ঠিক এ কালের রুচির মত পারিবারিক ট্রাজিডি ঘটাইতে পারা যায় না । এই জন্য শিল্পদক্ষ বঙ্কিম প্রথমতঃ নগেন্দ্ৰনাথকে সুশিক্ষিত জমীদার করিয়াছেন ; এবং সে পরিবারে কিংবা নিকটবত্তী সমাজে তাহার অভিভাবকের শ্রেণীর কোনও লোক পৰ্য্যন্ত রাখেন নাই। বাড়ীতে যে সকল স্ত্রীলোক থাকিত, তাহারা কেহ সুৰ্য্যমুখীর কাছে যাইতে সাহস করিত না। অর্থাৎ, নগেন্দ্রনাথ ও সুৰ্য্যমুখী সম্পূর্ণরূপে দশ জনের সংস্রব ও মতের প্রভাব হইতে দূরে থাকিতেন। সেই স্থানে পািন্ত্রীবৎসল নগেন্দ্ৰনাথ সুৰ্য্যমুখীকে গাড়ী হঁাকাইতে দিতেন, সৰ্ব্বস্বের উপর আধিপত্য করিতে দিতেন। তাই সুৰ্য্যমুখী সহিতেই পারিলেন না যে, যে গৃহে তিনিও তঁহার স্বামী তুল্যরূপে প্ৰভু, যে শয্যা “র্তাহার,” সে গৃহ ও সে শয্যা অন্যা কি করিয়া কলুষিত করিবে। বঙ্কিমচন্দ্ৰ কৌশলপূর্বক সুৰ্য্যমুখীকে এ কালের মত করিয়া নুতন আদর্শে গড়িয়া লইয়াছিলেন। স্বামী যখন অন্যার প্ৰতি অনুরাগী, তখন সে যেন একেবারে সংসার হইতে মুছিয়া গিয়াছে। ভাবের এই তীব্ৰতা আর দশটি কমলমণির সঙ্গে বাস করিলে জন্মিত না । বঙ্কিমচন্দ্ৰ অসাধারণ কাব্যকৌশলে নূতন ছাঁচের জিনিসটি স্বাভাবিক ও সুন্দর করিয়া গড়িতেন । এ সংসারে তাহার কেহ ছিল না, এমনি করিয়া কুন্দনন্দিনীটি সংগ্ৰহ করিয়াছিলেন বলিয়াই সে জমীদারের ঘরে আশ্রিত ছিল । সুযোগের সৃষ্টি করিয়া দিয়াছিলেন বলিয়া, নগেন্দ্ৰনাথ বাপীতটে খাটী ইউরোপীয় ধরণে কুন্দকে “কোর্ট” করিতে পারিয়াছিলেন। বঙ্কিমবাবু সুকৌশলে বিলাতী ছাচি ব্যবহার করিতেন। কিন্তু দীনবন্ধু সৰ্ব্বদাই স্বদেশের ছাঁচ বজায় রাখিয়া নূতন উন্নত ভাব ফুটাইতেন । নারী জাতি