বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/১০২৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অসম্পূর্ণ রচনা ७८८ মধ্যমতুী নদীতীরে রাধাগঞ্জ নামক একটি ক্ষদ্র গ্রাম আছে। প্রভুত ধনসম্পন্ন ভূস্বামীদিগের বসতি-স্থান বলিয়া এই গ্রাম গািড়গ্রামস্বরােপ গণ্য হইয়া থাকে। একদা চৈত্রের অপরাহে দিনমণিরু তীক্ষা কিরণমালা ফলন হইয়া আসিলে দঃসহ নৈদাঘ উত্তাপ ক্ৰমে শীতল হইতেছিল; মন্দ সমীরণ বাহিত হইতে লাগিল; তাহার মাদ হিল্লোল ক্ষেত্রমধ্যে কৃষকেব। ঘৰ্ম্মাক্ত ললাটে স্বেদবিন্দ বিশম্পক করিতে লাগিল, এবং সদািশয্যোখিত গ্রাম্য বমণীদিগের স্বেদবিজড়িত আলকপাশ বিধত করিতে লাগিল। ত্রিংশৎবষ বয়স্কা একটি রমণী একটি সামান্য পণ্য কুটনীর অভ্যন্তরে মাধ্যাহিক নিদ্রা সমাপন্যান্তে গাত্ৰোখান করিয়া বেশভূষায় ব্যাপােতা হইলেন। সত্ৰীজাতির এই বহৎ ব্যাপার সম্পাদনে রমণীর কালবিলম্ব হইল না; একটা জল, একখানি টিনে-মোড়া চাবি আঙ্গল বিস্তাব দপািণ, সেইরােপ দীঘকায় একখানি চিরণির দ্বারা এ ব্যাপাের সসম্পন্ন হইল। এতদ্ব্যতিরেকে কিছ সিন্দবের গড়ায ললাট বিশোভিত হইল। পরিশেষে একটি তামবলের বাগে অধর রঞ্জিত হইল। এইরপে জগদ্বিজয়িনী রমণী জাতির একজন মহারথী সশস্ত্র হইয়া কলসীকক্ষে যাত্রা করিলেন, এবং কোনও প্রতিবাসীর বংশ-রচিত দ্বার সবলে উদ্ঘাটিত করিয়া গহ্যাভ্যন্তরে প্রবিন্টা হইলেন । যে গহমধ্যে ইনি প্রবেশ করিলেন, তাহার মধ্যে চারিখানি চালা ঘর-মাটির পোতা- ঝাঁপের বেড়া। কুটনীরমধ্যে কোথাও দারিদ্র্যলক্ষণ দিলন্ট হইতেছিল না--সন্বত্র পরিস্কার পরিচ্ছন্ন। চতুষ্পেকাণ উঠানের চারিদিকে চারিখানি ঘর। তিনখানির দ্বার উঠানের দিকে-একখানির দ্বার বাহিরের দিকে। এই ঘরখানি বৈঠকখানা-অপর তিনখানি চতুর্ভপাশ্বে আবরণ বিশিষ্ট হইয়া অন্তঃপরত্ব প্রাপ্ত হইয়াছিল। সদর বাটীর মন্ডপ সম্মখে সকর্ষিত ভূমিখন্ডে কিছ, বাত্তাকু শাকাদি জন্মিয়াছিল। চারিপাশ্বে নলের বেড়া; দ্বারে ঝাঁপের আগড়; সতরাং অবলা অনায়াসে গহে প্রবেশ করিল। বলা বাহাল্য যে, লব্ধপ্রবেশা প্রথমেই অন্তঃপরাভিমখে চলিলেন। পরবাসী বা পরিবাসিনীবগী মাধ্যাহিক নিদ্রা সমাপন্যান্তে সব সব কায্যে কে কোথায় গিয়াছিল, তাহা বলিতে পারি না। কেবলমাত্র তথায় দই ব্যক্তি ছিল; একটি অস্টিাদশবষী যা তরণী বস্ত্রোপবে কার্যকায্যে ব্যাপােতা ছিলেন, আর একটি চারি বৎসরের শিশী খেলায় মগ্নচিত্ত ছিল। তাহার জ্যোিঠ ভ্রাতা পাঠশালায যাইবার সময় জানিয়া শনিয়া মস্যাধাের ভুলিয়া গিয়াছিল। শিশ, সেই মসীপাত্ৰ দেখিতে পাইয়া অপৰ্যাপ্ত আনন্দ সহকারে সেই কালি মাখে মাখিতেছিল; পাছে দাদা আসিয়া দোয়াত কাড়িয়া লয়, বাছা যেন এই ভয়ে সকল কালিটিকু একেবারে মাখিয়া ফেলিতেছিল। অভ্যাগিতা, ढला?” সম্বোধিতা রমণী হাসিয়া উত্তর করিলেন, “আজ যে দিদি, বড় অনগ্রহ; না জানি আজ কার মািখ দেখে উঠেছিলাম।” অভ্যািগতা হাসিয়া কহিল, “আর কার মািখ দেখে উঠবে ? রোজ যার মােখ দেখে উঠ আজও তার মািখ দেখে উঠেছ।” এই কথা শনিয়া তরণীর মখমন্ডল ক্ষণেকের জন্য মেঘাচ্ছন্ন হইল; অপরা নারীর অধরামলে হাস্য অদ্ধ প্রকটিত রহিল। এই স্থলে উভয়ের বণনা করি। অভ্যািগতা যে ত্রিংশংবষবয়স্কা এ কথা পাবেই বলিয়াছি। সে শ্যামবাণ-কাল নয়কিন্তু তত শ্যামও নয়। মািখকান্তি নিতান্ত সন্দের নয, অথচ কোন অংশ চক্ষর অপ্রিয়কর নয়; তন্মধ্যে ঈষৎ চঞ্চল মাধরী ছিল, এবং নয়নের হাসি হাসি-ভাবে সেই মাধরী আরও মধরে হইয়াছিল। দেহময় যে অলঙ্কারসকল ছিল, তাহা সংখ্যায় বড় অধিক না হইবে, কিন্তু একটি মটের বোঝা বটে। যে শঙ্খবশিক সেই বিশাল শঙ্খ নিৰ্ম্মল করিয়াছিলেন, তিনি বিশ্বকৰ্ম্মার dst