বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৩১৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিবিধ প্ৰবন্ধ-ত্রিদেব সম্পবন্ধে বিজ্ঞানশাস্ত্র কি বলে কোন প্রকার সঙ্কীণ বা বিকৃত মত প্রচার হইয়া থাকুক না কেন, কোন প্রকার মতানসারেই প্রাকৃতিক শাসনপ্রণালী দয়াবান ও সব্বশক্তিমানের কৃত কাৰ্য্যােনরোেপ বলিয়া স্বীকার করা যাইতে পারিবে না।”* এই সকল কথা বলিয়া মিল যাহা বলিয়াছেন, তাহার এমত অর্থ করা যায় যে, এই জগতের নিশ্চমাতা বা পালনকৰ্ত্তা হইতে পথক শক্তির দ্বারা জীবের ধবংস বা অনিন্ট সম্পন্ন হইতেছে। এরাপ মত সংসঙ্গত। মিল এরাপ মত ইঙ্গিতেও ব্যক্ত করিয়াছেন কি না, তাহা তাঁহার জীবনচরিত যে না পড়িয়াছে, তাহার সংশয় হইতে পারে। এজন্য ইংরেজি হইতে আমরা কিঞ্চিৎ উদ্ধত করিতেছি। 'The only admissible moral theory of Creation is that the principle of good cannot at once and altogether subdue the powers of evil, either physical or moral; could not place mankind in a world free from the necessity of an incessant struggle with the maleficent powers, or make them victorious in that struggle, but could and did make them capable of carrying on the fight with vigour and with progressively increasing success. Of all the religious explanations of the order of Nature, this alone is neither contradictory to itself, nor to the facts for which it attempts to account.' যদি এ কথার কোন অর্থ থাকে, তবে সে অর্থ এই যে, জগতের পালনকৰ্ত্তা এবং সংহারকত্তা সম্ববতন্ত্র, এমত কথা অসঙ্গত নহে। ইহার উপর যদি একজন পথক সন্টিকত্তা পাওয়া যায়, তাহা হইলে ত্রিদেবের নৈসগিক ভিত্তি পাওয়া গেল। মিলে তাহা পাওয়া যাইবে না; মিল হিন্দ, নহেন, হিন্দর পক্ষসমৰ্থন জন্য লিখেন নাই। তিনি নিৰ্ম্মমাণকৌশল হইতে ঈশ্বরের অস্তিত্ব সংস্থাপন করিয়াছেন, নিম্পমাতা ভিন্ন সন্টিকত্তা মানেন না। কিন্তু বিজ্ঞানে বলে, জীবের জন্ম নিম্নমাণ মাত্র; ভৌতিক পদার্থের সমবায়বিশেষ জীবত্ব। এই পথিবীতে যাহা কিছ দেখি-জীব উদ্ভিদ বায় বারি মৎপ্রস্তরাদি, সকলই সেই-- রাপে নিশ্চিমত; পথিবীও তাই; সাৰ্য্য, চন্দ্র, গ্রহ, উপগ্রহ, ধমকেতু, নক্ষত্র, নীহারিকা, সকলই নিমিত। অতএব সকলই সেই নিন্মাতার কীৰ্ত্তি—তাঁহার হস্তপ্ৰসত। সচরাচর সন্টিকত্তা যাঁহাকে বলা যায়, ঈদশ নিম্পমাতার সঙ্গে তাঁহার প্রভেদ অলপ। যে আকােরশন্য, শক্তিবিশিষ্ট্রট, পরমাণসমষ্টিতে এই বিশ্ব গঠিত, তাহা নিমিত কি না-নিম্পমাতার হস্তপ্ৰসত কি না।--তাহার কেহ স্রস্টা আছেন কি না, তদ্বিষয়ে প্রমাণাভাব। এইটকু সমরণ রাখিয়া, সন্টিকত্তা শব্দের প্রচলিত অর্থে নিম্পমাতাকে সন্টিকত্তা বলা যাইতে পারে। তাহা হউক বা না হউক, ঈদশ সম্পটার সঙ্গেই ধৰ্ম্মম এবং বিজ্ঞানের নিকট সম্পবিন্ধ। অতএব তাঁহাকে পাইলেই আমাদিগের অভিপ্রায় সিদ্ধ হইল। মিল বলেন, তাঁহার অস্তিত্ব প্রমাণীকৃত। তবে মিল, নিৰ্ম্মাতা এবং পালন বা রক্ষাকত্তার মধ্যে প্রভেদ করেন না। ইউরোপে কেহ এরপ প্রভেদ স্বীকার করে না। এরােপ স্বীকার না। করিবার কারণ ইহাই দেখা যায় যে, জন্ম বা সজেন, সেই নিয়মাবলীর ফল রক্ষাও জাগতিক নিয়মাবলীর ফল; যে নিয়মাবলীর ফল জন্ম বা সজেন, সেই নিয়মাবলীর ফল রক্ষা। অতএব যিনি জন্ম, নিন্মাণ বা সন্টির নিয়ন্তা, তিনিই রক্ষা বা পালনেরও নিয়ন্তা, ইহা সিদ্ধ। কিন্তু ধবংস সম্পবন্ধেও সেইরােপ বলা যাইতে পারে। রক্ষাও জাগতিক নিয়মাবলীর ফল; সংহােরও জাগতিক নিয়মাবলীর ফল। যে সকল নিয়মের ফল রক্ষা, সেই সকল নিয়মেরই ফল ধবংস। যে রাসায়নিক সংযোজন বিশ্লেষণে জীবের দেহ রক্ষিত হয়, সেই রাসায়নিক সংযোজন বিশ্লেষণেই জীবের দেহ লয়প্রাপ্ত হয়। যে অম্লজানের সংযোগে জীবের দেহ প্রত্যহ গঠিত ও পরিপন্ট হইতেছে- শেষ দিনে সেই অম্লজান সংযোগেই তাহা নষ্ট হইবে। অতএব যিনি পালনের নিয়ন্তা, তিনিই যে সংসারের নিয়ন্তা, ইহাও সিদ্ধ।

  • Mill on Nature, pp. 37-38. Mill on Nature, pp. 38-39.

ՀԳԳ