বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৪০৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙ্কিম wicided করে “খেউরি”, কিন্তু ক্ষৌরী লিখিলে সকলে বঝে যে, এই সেই “খেউরি” শব্দ। এ স্থলে ক্ষৌরীকে পরিত্যাগ করিয়া খেউর। প্রচলিত করায় কোন লাভ নাই। বরং এমত স্থলে আদিম সংস্কৃত রূপটি বজায় রাখিলে ভাষার স্থায়িত্ব জন্মে। কিন্তু এমন অনেকগলি শব্দ আছে যে, তাহার আদিম রূপ সাধারণের প্রচলিত বা সাধারণের বোধগম্য নহে-তাহার অপভ্ৰংশই প্রচলিত এবং সকলের বোধগম্য। এমত স্থলেই আদিম রােপ কদাচ ব্যবহায্য নহে। যদিও আমরা এমন বলি না যে, “ঘর” প্রচলিত আছে বলিয়া গহ শব্দের উচ্ছেদ করিতে হইবে, অথবা মাথা শব্দ প্রচলিত আছে বলিয়া মস্তক শব্দের উচ্ছেদ করিতে হইবে; কিন্তু আমরা এমত বলি যে, অকারণে ঘর শব্দের পরিবত্তে গহ, অকারণে মাথার পরিবত্তে মস্তক, অকারণে পাতার পরিবত্তে পত্র এবং তামার পরিবত্তে তাম ব্যবহার উচিত নহে। কেন না, ঘর, মাথা, পাতা, তামা বাঙ্গালা; আর গহ, মস্তক, পত্র, তাম্ন সংস্কৃত। বাঙ্গালা লিখিতে গিয়া অকারণে বাঙ্গালা ছাড়িয়া সংস্কৃত কেন লিখিব ? আর দেখা যায় যে, সংস্কৃত ছাড়িয়া বাঙ্গালা শব্দ ব্যবহার করিলে রচনা অধিকতর মধ্যর, সম্পন্ট ও তেজস্বী হয়। “হে ভ্ৰাতঃ” বলিয়া যে ডাকে, বোধ হয় যেন সে যাত্রা করিতেছে ; “ভাই রে” বলিয়া যে ডাকে, তাহার ডাকে মন উছলিয়া উঠে। অতএব আমরা ভ্ৰাতা শব্দ উঠাইয়া দিতে চাই না বটে, কিন্তু সচরাচর আমরা ভাই শব্দটি ব্যবহার করিতে চাই। ভ্ৰাতা শব্দ রাখিতে চাই, তাহার কারণ এই যে, সময়ে সময়ে তদ্ব্যবহারে বড় উপকার হয়। “ভ্রাতৃভাব” এবং “ভাইভাব”, “ভ্ৰাতৃত্ব” এবং “ভাইগিরি” এতদভয়ের তুলনায় বাঝা যাইবে যে, কেন ভ্ৰাতৃ শব্দ বাঙ্গালায় বজায় রাখা উচিত। এই স্থলে বলিতে হয় যে, আজিও অকারণে প্রচলিত বাঙ্গালা ছাড়িয়া সংস্কৃত ব্যবহারে, ভাই ছাড়িয়া অকারণে ভ্ৰাতৃ শব্দের ব্যবহারে অনেক লেখকের বিশেষ আনারক্তি আছে। অনেক বাঙ্গালা রচনা যে নীরস, নিস্তেজ এবং অস্পন্ট, ইহাই তাহার কারণ। দ্বিতীয় শ্রেণীর শব্দ, অর্থাৎ যে সকল সংস্কৃত শব্দ রপোন্তর না হইয়াই বাঙ্গালায় প্রচলিত আছে, তৎসম্পবন্ধে বিশেষ কিছ বলিবার প্রয়োজন নাই। তৃতীয় শ্রেণী অর্থাৎ যে সকল শব্দ সংস্কৃতের সহিত সম্পবিন্ধশন্য, তৎসম্পবন্ধে শ্যামাচরণবাব যাহা বলিয়াছেন, তাহা অত্যন্ত সারগভর্ণ এবং আমরা তাহার সম্পণে অননুমোদন করি। সংস্কৃতিপ্রিয় লেখকদিগের অভ্যাস যে, এই শ্রেণীর শব্দ সকল তাঁহারা রচনা হইতে একেবারে বাহির করিয়া দেন। অন্যের রচনায় সে সকল শব্দের ব্যবহার শেলের ন্যায়। তাঁহাদিগকে বিদ্ধ করে। ইহার পর মােখাতা আমরা আর দেখি না। যদি কোন ধনবান, ইংরেজের অর্থাভান্ডারে হালি এবং বাদশাহী দই প্রকার মোহর থাকে, এবং সেই ইংরেজ যদি জাত্যভিমানের বিশ হইয়া বিবির মাথাওয়ালা মোহর রাখিয়া, ফাসি লেখা মোহরগলি ফেলিয়া দেয়, তবে সকলেই সেই ইংরেজকে ঘোরতর মািখ বলিবে। কিন্তু ভাবিয়া দেখিলে, এই পশিডতেরা সেই মত মািখ । তাহার পরে অপ্রচলিত সংস্কৃত শব্দকে বাঙ্গালা ভাষায় নািতন সন্নিবেশিত করার ঔচিত্য বিচাৰ্য্য। দেখা যায়, লেখকেরা ভুরি ভুরি অপ্রচলিত নািতন সংস্কৃত শব্দ প্রয়োজনে বা নিম্প্রয়োজনে ব্যবহার করিয়া থাকেন। বাঙ্গালা আজিও অসম্পপণ্য ভাষা, তাহার অভাব পরিণ জন্য অন্য অন্য ভাষা হইতে সময়ে সময়ে শব্দ কাজ করিতে হইবে । কস্তজ করিতে হইলে, চিরকেলে মহাজন সংস্কৃতের কাছেই ধার করা কত্তব্য। প্রথমতঃ, সংস্কৃত মহাজনই পরম ধনী; ইহার রত্নময় শব্দভাণডার হইতে যাহা চাও, তাহাই পাওয়া যায়; দ্বিতীয়তঃ, সংস্কৃত হইতে শব্দ লাইলে, বাঙ্গালার সঙ্গে ভাল মিশে। বাঙ্গালার অস্থি, মজ, শোণিত, মাংস সংস্কৃতেই গঠিত। তৃতীয়তঃ, সংস্কৃত হইতে নািতন শব্দ লাইলে, অনেকে বঝিতে পারে; ইংরেজি বা আরবী হইতে লাইলে কে বকিবে ? “মাধ্যাকৰ্ষণ” বলিলে কতক অর্থ অনেক অনভিজ্ঞ লোকেও বঝে। “গ্র্যাবিটেশন” বলিলে ইংরেজি যাহারা না বাঝে, তাহারা কেহই বঝিবে না। অতএব যেখানে বাঙ্গালা শব্দ নাই, সেখানে অবশ্য সংস্কৃত হইতে অপ্রচলিত শব্দ গ্রহণ করিতে হইবে। কিন্তু নিম্পপ্রয়োজনে অর্থাৎ বাঙ্গালা শব্দ থাকিতে তদ্ধাচক অপ্রচলিত সংস্কৃত শব্দ ব্যবহার যাঁহারা করেন, তাঁহাদের কিরােপ রচি, তাহা আমরা বঝিতে পারি না। স্থল কথা, সাহিত্য কি জন্য ? গ্ৰন্থ কি জন্য? যে পড়িবে, তাহার বঝিবার জন্য। না ববিয়া, বহি বন্ধ করিয়া, পাঠক ব্ৰাহি ত্ৰাহি কারিয়া ডাকিবে, বোধ হয় এ উদ্দেশ্যে কেহ গ্ৰন্থ লিখে না। যদি এ কথা সত্য হয়, তবে যে ভাষা সকলের বোধগম্য-অথবা যদি সকলের বোধ OAS