বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৪৩৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

res নাই। মেয়েরা মেয়েকালেজে পড়িতে গেলে পর, শিশ, পালন করিবে কে ? বালককে স্তন্যপান করাইবে কে ? গাহকৰ্ম্ম করিবে কে ? বঙ্গীয় বালিকা চতুৰ্দশ বৎসর বয়সে মাতা ও গহিণী হয়। ত্ৰয়োদশ বৎসরের মধ্যে যে লেখাপড়া শিখা যাইতে পারে, তাহাই তাহদের সাধ্য। অথবা তাহাও সাধ্য নহে-কেন না, ত্রয়োদশ বর্ষেই বা কুলবধ বা কুলকন্যা, গাহের বাহির হইয়া বই হাতে করিয়া কলেজে পড়িতে যাইবে কি প্রকারে ? আমরা এ সকল আপত্তির মীমাংসায় এক্ষণে প্রবত্ত নই। আমরা দেখাইতে চাই যে, যদি তোমরা সাম্যবাদী হও, তাহা হইলে যতদিন না। সম্পণেরপে সব্ব বিষয়ক সাম্যের ব্যবস্থা করিতে পার, ততদিন কেবল আংশিক সাম্যের বিধান করিতে পরিবে না। সাম্যতত্ত্বান্তগত সমাজনীতি স্থির যে, কেবল শিশপালন ও শিশকে স্তন্যপান করান। সত্ৰীলোকের ভাগ নহে, অথবা একা সন্ত্রীরই ভাগ নহে। যাহাকে গহধৰ্ম্মম বলে, সাম্য থাকিলে সত্ৰী পরিষ উভয়েরই তাহাতে সমান ভাগ। একজন গাহকৰ্ম্মম লইয়া বিদ্যাশিক্ষায় বঞ্চিত হইবে, আর একজন গহকৰ্ম্মের দঃখে অব্যাহতি পাইয়া বিদ্যাশিক্ষায় নিব্বি যায় হইবে, ইহা সর্বভাবসঙ্গত হউক বা না হউক, সাম্যসঙ্গত নহে। অপরঞ্চ পরষগণ নিৰিবাঘে যেখানে সেখানে যাইতে পারে, এবং সত্ৰীগণ কোথাও যাইতে পরিবে না, ইহা কদাচি সাম্যসঙ্গত নহে। এই সকল স্থানে বৈষম্য আছে বলিয়াই বিদ্যাশিক্ষাতেও বৈষম্য ঘটিতেছে। বৈষম্যের ফল বৈষম্য। যে একবার ছোট হইবে, তাহাকে ক্রমে ছোট হইতে হইবে। কথাটি আর এক প্রকারে বিচার করিয়া দেখিলে বঝা যাইবে। সত্ৰীশিক্ষা বিধেয় কি না ? বোধ হয়, সকলেই বলিবেন, “বিধেয় বটে।” তারপর জিজ্ঞাস্য, কেন বিধেয় ? কেহ বলিবেন না যে, চাকরির জন্য * বোধ হয়, এতদ্দেশীয় সচরাচর সশিক্ষিত লোকে উত্তর দিবেন যে, সত্ৰীগণের নীতিশিক্ষা, জ্ঞানোপাড়জন এবং বদ্ধি মাক্তিজত করিবার জন্য, তাহাদিগকে লেখাপড়া শিখােন উচিত। তারপর, জিজ্ঞাস্য যে, পরষগণকে বিদ্যাশিক্ষা করাইতে হয় কেন ? দীঘকণ দেশীয় গদ্যভশ্রেণী বলিবেন, চাকরির জন্য, কিন্তু তাঁহাদিগের উত্তর গণনীয়ের মধ্যে নহে। অন্যে বলিবেন, নীতিশিক্ষা, জ্ঞানোপাডজািন, এবং বদ্ধি মাজজনের জন্যই পরিষের লেখাপড়া শিক্ষা প্রয়োজন। অন্য যদি কোন প্রয়োজন থাকে, তবে তাহা গৌণ প্রয়োজন, মােখ্য প্রয়োজন নহে। গৌণ প্রয়োজনও সন্ত্রীপরিষ উভয়ের পক্ষেই সমান। অতএব বিদ্যাশিক্ষাসম্পবন্ধে স্ত্রীপরিষ উভয়েরই অধিকারের সাম্য স্বীকার করিতে হইল। এ সাম্য সকলকেই সস্বীকার করিতে হইবে, নচেৎ উপরিকথিত বিচারে অবশ্য কোথাও ভ্ৰম আছে। যদি এখানে সাম্য স্বীকার কর, তবে অন্যত্র সে সাম্য স্বীকার কর না কেন ? শিশপালন, যথেচ্ছা ভ্ৰমণ, বা গাহকৰ্ম্মম সম্পবন্ধে সে সাম্য স্বীকার কর না কেন ? সাম্য স্বীকার করিতে গেলে, সৰ্ব্ববত্র সাম্য সস্বীকার করিতে হয়। উপরে যে চারিটি সামাজিক বৈষম্যের উল্লেখ করিয়াছি, তন্মধ্যে দ্বিতীয়টি বিধবাবিবাহ সম্পবিন্ধীয়। বিধবাবিবাহ ভাল কি মন্দ, এটি সর্বতন্ত্র কথা। তাহার বিবেচনার স্থল এ নহে। তবে ইহা বলিতে পারি যে, কেহ যদি আমাদিগকে জিজ্ঞাসা করেন, সত্ৰীশিক্ষা ভাল কি মন্দ ? সকল সন্ত্রীলোক শিক্ষিত হওয়া উচিত কি না, আমরা তখনই উত্তর দিব, সন্ত্রীশিক্ষা অতিশয় মঙ্গলকর; সকল সন্ত্রীলোক শিক্ষিতা হওয়া উচিত; কিন্তু বিধবাবিবাহ সম্পবন্ধে আমাদিগকে কেহ। সেরােপ প্রশন করিলে আমরা সেরাপ উত্তর দিব না। আমরা বলিব, বিধবাবিবাহ ভালও নহে, মন্দও নহে; সকল বিধবার বিবাহ হওয়া কদাচ ভাল নহে, তবে বিধবাগণের ইচ্ছামত বিবাহে অধিকার থাকা ভাল। যে সত্ৰী সাধবী, পািকব পাতিকে আন্তরিক ভাল বাসিয়াছিল, সে কখনই পােনকবার পরিণয় করিতে ইচ্ছা করে না; যে জাতিগণের মধ্যে বিধবাবিবাহ প্রচলিত আছে, সে সকল জাতির মধ্যেও পবিত্র স্বভাববিশিস্টা, স্নেহময়ী, সাধাৰীগণ বিধবা হইলে কদাপি আর বিবাহ করে না। কিন্তু যদি কোন বিধবা, হিন্দই হউন, আর যে জাতীয়া হউন, পতির লোকান্তর পরে পানঃপরিণয়ে ইচ্ছাবতী হয়েন, তবে তিনি অবশ্য তাহাতে অধিকারিণী। যদি পােরন।

  • সাম্যবাদী বলেন, চাকরির জন্যও বটে।

SOS 卒 ミーミや