বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৭৩৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শ্ৰীম, গােৰন্সতা ܒ ܪ series of thoughts connected together by memories, that constitutes a thinking substance.' জড়বাদীর আপত্তি এই বিচারে ভাসিয়া গেল, তাহার চিহ্নমাত্র রহিল না। তথাপি ইহাতেই আত্মবাদী জয়ী হইতেছেন। পথিক আত্মা নাই, অথবা তাহা নশ্বর, এ কথা বলিবার কাহারও অধিকার নাই, ইহাতে প্রমােণীকৃত হইল। কিন্তু আত্মা যে একটি স্বতন্ত্র পদাৰ্থ, এবং তাহা অবিনাশী, ইহা প্রমাণীকৃত হইল না। তুমি বলিতেছ, সর্বতন্ত্র আত্মা আছে, এবং তাহা অবিনাশী এ কথার প্রমাণ কি ? অনেক সহস্ৰ বৎসর ধরিয়া পথিবীর সকল সভ্য জাতির মধ্যে এই প্রমাণ সংগহীত হইয়া আসিয়াছে। বৈজ্ঞানিকেরা তাহা অপ্রচুর বলিয়া উড়াইয়া দেন। বৈজ্ঞানিকেরা সত্যবাদী এবং ধ্ৰুণ সম্বন্ধে তাঁহাৱা সবিচারক। অতএব তাঁহার এ কথা কেন বলেন, সেটাও ব্যতিয়া রাখা বঝিতে গেলে, আগে বঝিতে হইবে, প্রমাণ কি ? যাহা দ্বারা কোন বিষয়ের জ্ঞান জন্মে, তাহাই তাহার প্রমাণ ! আমি এই পৰম্পটি দেখিতে পাইতেছি বলিয়াই, জানিতে পারিতেছি। যে, পশুপটি আছে। প্রত্যক্ষ দণ্টিই এখানে পক্ষেপের অস্তিত্বের প্রমাণ। আমি গহমধ্যে শয়ন করিয়া মেঘগম্ভজন শনিলাম, ইহাতে জানিলাম যে, আকাশে মেঘ আছে। এখানে মেঘ আমাৰ প্রত্যক্ষের বিষয় নহে। কিন্তু মেঘের ধবনি আমার প্রত্যক্ষের* বিষয়। প্রত্যক্ষভাবেও মেঘবিষয়ক জ্ঞান জন্মিবার কারণ পাকবীকৃত প্রত্যক্ষ হইতে অন্যমান। যখনই যখনই এইরাপ গঙ্গজনিধবনি শনিয়া আকাশ প্রতি দণ্টিপাত করা গিয়াছে, তখনই তখনই আকাশে মেঘ দেখা গিয়াছে। অতএব আমরা দ্বিবিধ প্রমাণের দেখা পাইতেছি—(১) প্রত্যক্ষ (২) অন্যমান। ভারতবষী যেরা। অন্যবিধ প্রমাণও স্বীকার করেন, তাহার কথা পরে বলিতেছি। বৈজ্ঞানিক বা জড়বাদিগণ অনা কোন প্রকাব প্রমাণ স্বীকার করেন না। তাঁহারা অনমান সম্পবন্ধে ইহাও বলেন যে, যে অনমান প্রত্যক্ষমলক নহে, সে অনামান অসিদ্ধ; অথবা এরপ অনমান হইতেই পারে না। এই তত্ত্বের মীমাংসা জন্য ইউরোপীয়েরা এক অতি বিচিত্র এবং মনোহর দর্শনশাস্ত্র এখন ইহা অবশ্য সম্বীকার করিতে হইবে যে, আত্মা কখন কাহারও প্রত্যক্ষের বিষয় হয নাই। শরীর প্রত্যক্ষ কিন্তু শরীরস্থ আত্মার প্রত্যক্ষতা নাই। শরীর-বিমাক্ত আত্মারও কেহ। কখন প্রত্যক্ষ করে নাই। যাহা প্রত্যক্ষের বিষয নহে, তৎসম্পবন্ধে প্রত্যক্ষমলক কোন অনামানও হইতে পারে না। কেবল ইহাই নহে। আত্মা ভিন্ন এমন অন্য কোন পদাৰ্থ সম্পবন্ধে মনব্যের কোন প্রকাব প্রত্যক্ষজাত কোন প্রকার জ্ঞান নাই যে, তাহা হইতে আত্মার অস্তিত্ব অনমান করা যায়। এরপ যে সকল প্রমাণ এদেশে বা ইউরোপে প্রযক্ত হইয়াছে, তাহা বিচারে টিকে না। অতএব আত্মার অস্তিত্ব সম্পবন্ধে কোন প্রমাণ নাই। তাই বিজ্ঞান, আত্মাকে খাজিয়া পায় না। বিজ্ঞান সত্যবাদী। বিজ্ঞানের যত দীর সাধ্য,

  • যাহা ইন্দ্ৰিয়গোচর, তাহাই প্রত্যক্ষের বিষয়। পক্ষেপয় চাক্ষষ প্রত্যক্ষ হইল, মেঘেব ধবনিব শ্রবণ প্রত্যক্ষ হইল।

+ তবে সৰ্ব্ব দেশে সাধারণ লোকের বিশ্বাস যে, মত ব্যক্তির দেহবিমাক্ত আত্মা কখন কখন মনয্যের ইন্দ্ৰিয়-প্রত্যক্ষ হয়। দেহ-বিমাক্তাত্মা এইরূপে মনয্যের ইন্দ্ৰিয়গোচর হইলে অবস্থাবিশেষে ভূত প্রেত নাম প্রাপ্ত হয়। বৈজ্ঞানিকেরা বলেন, এ সকল চিত্তের ভ্ৰমমাত্র, রক্তজতে সপজজ্ঞানবং ভ্রমজ্ঞান মাত্র, আর ঈদশ ভ্ৰমজ্ঞানই আত্মার সবাতন্ত্র্যে বিশ্বাসের কারণ। কিন্তু এক্ষণে ইউরোপ ও আমেরিকায় Spiritualism তত্ত্বের প্রাদাভােব, এই প্রেততত্ত্বই বিজ্ঞানের একটি শাখা হইয়া দাঁড়াইয়াছে; এবং Crookes, Wallace প্রভৃতি প্ৰসিদ্ধ বৈজ্ঞানিকেরা এতদ্বিষয়ক প্রমাণ সকল এমন উত্তমরূপে পরীক্ষিত ও শ্রেণীবদ্ধ করিয়াছেন যে, প্রতিপক্ষেরা কিছ: গোলযোগে পড়িয়াছেন। ইহার নানা প্রকার বাদ প্ৰতিবাদ চলিতেছে। তবে ইহা বলা যাইতে পারে যে, প্ৰেতপ্ৰত্যক্ষের যাথার্থ্য এখনও বৈজ্ঞানিকেরা সাধারণতঃ স্বীকার করেন না। সতরাং উহা আত্মার অস্তিত্বের প্রমাণেব মধ্যে আমি গণনা করিতে পারিলাম না। আর ঈদশ প্রমাণেব উপর ধমের ভিত্তি স্থাপন করা বাঞ্ছনীয বিবেচনা করি না। ধৰ্ম্ম বিজ্ঞান নহে; তাহার ভিত্তি আরও দঢ়সংস্থাপিত। ܠܬܬ