বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৪২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উপন্যাস-প্রসঙগ ও ভগবৎসাধনা দবারা শান্তিলাভ করে। বণ্ডিকমচন্দ্রের এই সকল পরিবত্তানের উপর। পরবত্তী কালে বিশেষ আলোচনা হইয়া গিয়াছে। পরিষৎ-সংস্করণের সম্পাদকদ্বয় কৃষ্ণকান্তের উইলের দাইটি বৈশিষট্য উল্লেখ করিয়াছেন। প্রথমটি, বর্ণনাবাহিল্যের অভাব এবং আড়ম্বরহীনতা। “এমন অনরপে লিপিচাতুৰ্য্য, এমন সংযত ভাবপ্রকাশ, বৈজ্ঞানিক ঘটনাবিন্যাস এবং সমৃদ্ঠ সামঞ্জস্যবোধ বাংলা সাহিত্যের অন্য কোনও উপন্যাসে দলটি হয় না। মনে হয়, বঙ্কিমচন্দ্রের লিপিচাতুৰ্য্য কৃষ্ণকান্তের উইলে’ চরমে পৌঁছিয়াছে।” দ্বিতীয় বৈশিষট্য হইল “কৃষ্ণকান্তের উইল’ বাংলা দেশের মধ্যবিত্ত জীবনধারার সুস্থত থািঠ পরিচয়য়। বহ মনীষী সমালোচক ইহার এই দিকটি লইয়া বিশেষভাবে আলোচনা রয়েছেন । • ‘কৃষ্ণকান্তের উইলে’র দাইটি ইংরেজী অনাবাদ গ্ৰন্থ প্রকাশিত হইয়াছে—যথাক্রমে ১৮৯৫ ও ১৯১৮ সনে। ইহা ছাড়া বিভিন্ন সময়ে হিন্দী, তেলগ ও কানাড়ী অনাবাদও প্রকাশিত হইয় 兀互1 রাজসিংহ, ‘রাজসিংহ” বঙ্কিমচন্দ্রের একাদশ উপন্যাস। চতুর্থ সংস্করণে (১৮৯৩) ইহার আমল পরিবত্তন করিয়া আকারে প্রায় চতুগণ করা হয়। এজন্য কেহ কেহ এখানিকে সম্পপণ নািতন উপন্যাসের ময্যাদা দান করিয়াছেন। সেদিক হইতে বিবেচনা করিলে এখনি তাঁহার সব্বশেষ উপন্যাস। আবার, বঙ্কিমচন্দ্র ‘রাজসিংহ’কেই তাঁহার একমাত্র ঐতিহাসিক উপন্যাস বলিয়াছেন। আচাৰ্য্য যদ্যনাথ সরকার ইহার দীর্ঘ ভূমিকায় (১৬ পইেঠা)। এ কথার সম্যক বিচার করিয়াছেন। তাঁহার বিবেচনায় ঐতিহাসিক উপন্যাসের আধনিক ব্যাখ্যান যায়ী বঙ্কিমচন্দ্রের আরও কয়েকখানি উপন্যাস এ পয্যায়ে পড়ে। এ বিষয়ে বিশেষ করিয়া আচাৰ্য্য যদ্যনাথ লিখিত পরিষৎ-সংস্করণের ‘আনন্দমঠ”, “দেবী চৌধরাণী’ ও ‘সীতারামের ঐতিহাসিক ভূমিকা বিশেষ মাল্যবান। প্রথমে “বঙগদশ্যনে” রাজসিংহ উপন্যাসখানি ধারাবাহিকভাবে বাহির হয় (চৈত্র ১২৮৪— ভাদ্র ১২৮৫)। কিন্তু পস্তকখানি অসমাপত থাকিয়া যায়। বঙিকমচন্দ্র কোন বন্ধর পরামশে এখানি সম্পপণ করিয়া প্রকাশ করা বন্ধ রাখেন। শ্ৰীশচন্দ্র মজমিদার ‘রাজসিংহ’। প্রকাশ সম্বন্ধে এইরাপ লিখিয়াছেন : “আমি প্রিয় সহৃৎ বাব, নগেন্দ্রনাথ গপ্ৰেতর সঙ্গে মাঝে মাঝে তাঁর [ বঙ্কিমচন্দ্রের ] কাছে যাইতাম। উদভ্ৰান্ত-প্রেম’ প্রণেতা বােব চন্দ্রশেখর মখোপাধ্যায়ের সঙ্গে একদিন গিয়াছিলাম।. ‘রাজসিংহ’। তাহার কিছ দিন আগে “বঙ্গদর্শনে’ ক্ৰমশঃ প্রকাশিত হইয়া বন্ধ হইয়া গিয়াছিল। চন্দ্রশেখর বাব জিজ্ঞাসা করিলেন, তাহা সম্পৰ্ণে হইতেছে না কেন ? বঙ্কিমবাব তাঁর কোনও বন্ধর নাম করিয়া বলিলেন, এরা বলেন—আমার সম্ৰাট চরিত্রগলিতে এখনকার ছেলেপলে মাটী হইতেছে। তাই আর ডাকাত মাণিকলালকে আকিতে ইচ্ছা করে না’...চন্দ্রশেখরবাবিতে এবং আমাতে একযোগে বলিলাম, মাণিকলালের মত দই একটা ডাকাতের চিত্র দেশের সম্পমাখে ধাঁরলে উপকার ভিন্ন অপকার হইবে না। এই কথায় বঙ্কিমবাব কি ভাবিয়াছিলেন, বলিতে পারি না, কিন্তু ইহার অলপদিন পরে ‘রাজসিংহের প্রথম সংস্করণ বাহির হইল।” (বঙ্কিম-প্রসওগ, পঃ ১৭৯) প্রথম সংস্করণের বিজ্ঞাপনে বঙ্কিমচন্দ্র পক্‌বেকার আপত্তিকারী বন্ধদের উদ্দেশ করিয়াই যেন এই কথা কয়টি লেখেন: “এ অবস্থাতে গ্রন্থ পনিমাদ্রিত করাতে অনেকেই আমার উপর বাগ করবেন। একবার মনে করিয়াছিলাম, এই বিজ্ঞাপনে তাঁহাদিগের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করিব। কিন্তু দেখিতেছি, যাহাতে তাঁহাদের রাগ না হয়, এমন একটা সহজ উপায় আছে। তাঁহারা গ্ৰন্থখানি না পড়িলেই হইল।” ‘রাজসিংহের প্রথম সংস্করণ প্রকাশিত হয় ১৮৮২ সনে। তখন ইহার পাঠা সংখ্যা ছিল মাত্র ৮৩, দ্বিতীয় সংস্করণে বাড়িয়া ৯o পন্ঠা হয়। কিন্তু চতুর্থ সংস্করণে (১৮৯৩) ইহার কলেবর প্রায় পাঁচগণ বন্ধিত হইল, পল্ঠা সংখ্যা হইল ৪৩৪। ‘রাজসিংহ’কে একখানি পরিপর্ণ ঐতিহাসিক উপন্যাস করিবার মানসেই বণ্ডিকম। এইরপ পরিবত্তান ও পরিবদ্ধন করিয়াছিলেন। OS