পাতা:বঙ্গবিজেতা.djvu/১৪৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙ্গবিজেতা । '\సి বিমলার নিদ্র হইল না,—সৈ রাত্রিতে বিমলার যাতনা কে বর্ণনা করিতে পারে? যে ভীষণ বাত্যায় তাহার হৃদয় আলোড়িত হইতেছিল, তাহা ক্ষণকাল পরে নীরব হইল ; কিন্তু শাস্ত, নীরব, অথচ মৰ্ম্মভেদী শোকের প্রবাহ থামিল না । হৃদয়ে যে ক্রোধের উদ্রেক হইয়াছিল, সরলার শান্ত বদনমণ্ডল ও মুদিত নয়নের দিকে দেখিতে দেখিতে তাহা ক্রমে লীন হইয়৷ গেল । “ এই নির্দোষী বালিকা—এই নিরাশ্রয় অনাথt, ইহার কি দোষ, ইহার উপর কি আমি রাগ করিতে পারি। আমরাই সরলাকে অনাথ৷ করিয়াছি, আমরাই মহাশ্বেতাকে বিধবা করিয়াছি, আমরাই তাহাদিগকে গ্রামে গ্রামে ভিখারিণীর মত বাস করিতে ও ভিক্ষা করিয়া জীবনধারণ করিতে বাধ্য করিয়াছি। সেই গ্রামে বাস করিয়া যে সরল এত কষ্ট্র সহ করিয়াছে,—করিয়া জীবন ধারণ করিয়া আছে, সে কেবল একমাত্র আশায়,—সে প্রেমের আশা । দরিদ্রাবস্থায় সেই পল্লীগ্রামে যে রত্ন পাইয়াছে, ভিখারিণীর সে রত্ন কি আমি কাড়িয়া লইতে পারি ?— “ ভিখারিণী কে ?—আমাকেই হৃদয়েশ্বর ভিখারিণী বলিয়া জানেন, সরল, তুমিই সে ভিখারিণীর রত্ন কড়িয়া লইতেছ। সরল, তোমাদের মান, সন্ত্রম, সম্পত্তি, জমাদারী তামরা কাড়িয়া লইয়াছি, সে সকল ফিরাইয়। লও,-আরও চাহ, তারও তামোদিগের বাহা কিছু আছে কাড়িয়া লও, সকল সহ্য হইবে ;–কিন্তু ভিখারিণীর এ রত্ব কড়িয়া লইও না,—এরত্ন কড়িয়া লইলে হৃদয় বিদীর্ণ হইবে।” বিমলা দুঃখে অভিভূত হইয়। দুঃখিনীর ক্ৰন্দন কান্দিতে লাগিলেন,—দরবিগলিত আশ্রধারায় শয্যা সিক্ত করিলেন । আজি বথার্থই তাহার হৃদয় বিদীর্ণ হইতেfছল । তিনি শোকের প্রবাহে, যাতনায় অস্থির হইয়াছিলেন ;–“ হৃদয়েশ্বর ! তুমি কাহার হইবে ? সরলা ! তোমার নিকট আমি কড়িয়া লইব না,—পাপে অমিদের বংশ পরিপূর্ণ আছে, আজি হৃদয়-রত্ব তোমাকে দিয়া সে পাপের, প্রায়শ্চিত্ত করিব —হার! বৃথা চেষ্টা, এ রত্ব হৃদয়ের অংশ হইয়াছে, এ প্রেম উৎপাটন করিলে হৃদয় উৎপাটিত হইবে।” পুনরায় অবিরল অশ্রুধারায় শয্যা সিক্ত করিলেন । আবার ভাবিতে লাগিলেন, “ সরল ! এ রত্ন তুমি কোথায় পাইয়াছিলে ? দরিদ্র হইলে কি এ রত্ন পাওয়া যায় ? পল্লীগ্রামে কুটীরে বাস করিলে কি এ রত্ন পাওয়া যায় ? ভিক্ষা করিয়া জীবনধারণ করিলে কি