পাতা:বনবাণী-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.djvu/১৭০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

বনবাণী

গােপনে এসে গেলে,
দেখি নাই আঁখি মেলে।
আঁধারে দুঃখডােরে
বাঁধিলে মােরে,
ভূষণ পরালে বিরহবেদন-ঢালা॥

 হে বনস্পতি শাল, অবসানের অবসাদকে তুমি দূর করে দিলে। তোমার অক্লান্ত মঞ্জরীর মধ্যে উৎসবের শেষবেলাকার ঐশ্বর্য, নবীনের শেষ জয়ধ্বনি তোমার বীরকণ্ঠে। অরণ্যভূমির শেষ আনন্দিত বাণী তুমি শুনিয়ে দিলে যাবার পথের পথিককে, বললে ‘পুনর্দর্শনায়’। তোমার আনন্দের সাহস বিচ্ছেদের সামনে এসে মাথা তুলে দাঁড়ালো।

ক্লান্ত যখন আম্রকলির কাল,
মাধবী ঝরিল ভূমিতলে অবসন্ন,
সৌরভধনে তখন তুমি হে শাল,
বসন্তে করাে ধন্য।
সান্ত্বনা মাগি দাঁড়ায় কুঞ্জভূমি,
রিক্তবেলায় অঞ্চল যবে শূন্য।
বনসভাতলে সবার ঊর্ধ্বে তুমি,
সব-অবসানে তােমার দানের পুণ্য॥

 এইবার শেষ দেওয়া-নেওয়া চুকিয়ে দাও। দিয়ে যাও তোমার বাহিরের দান, উত্তরীয়ের সুগন্ধ, বাঁশির গান, আর নিয়ে যাও আমার অন্তরের বেদনা নীরবতার ডালি থেকে।

তুমি কিছু দিয়ে যাও
মাের প্রাণে গােপনে গাে-

১৭০