পাতা:বহুবিবাহ.pdf/৪৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বহুবিবাহ।

অবিবাহিত অবস্থায় কন্যার ঋতুদর্শন ও ঋতুমতী কন্যার পাণিগ্রহণ এক্ষণকার কুলীনদিগের গৃহে সচরাচর ঘটনা। কুলীনেরা, দেবীবরের কপোলকল্পিত প্রথার আজ্ঞাবর্ত্তী হইয়া, ঘোরতর পাতকগ্রস্ত হইতেছেন। শাস্ত্রানুসারে বিবেচনা করিতে গেলে, তাঁহারা বহু কাল পতিত ও ধর্ম্মচ্যুত হইয়াছেন[১]

 কুলীনমহাশয়েরা যে কুলের অহঙ্কারে মত্ত হইয়া আছেন, তাহা বিধাতার সৃষ্টি নহে। বিধাতার সৃষ্টি হইলে, সে বিষয়ে স্বতন্ত্র বিবেচনা করিতে হইত। এ দেশের ব্রাহ্মণেরা বিদ্যাহীন ও আচারভ্রষ্ট হইতেছিলেন। যাহাতে তাঁহাদের মধ্যে বিদ্যা, সদাচার প্রভৃতি গুণের আদর থাকে, এক রাজা তাহার উপায়স্বরূপ কুলমর্য্যাদা ব্যবস্থা, এবং কুলমর্য্যাদা রক্ষার উপায়স্বরূপ কতকগুলি নিয়ম সংস্থাপন, করেন। সেই রাজপ্রতিষ্ঠিত নিয়ম অনুসারে বিবেচনা করিয়া দেখিলে, কুবিবাহাদি দোষে বহু কাল কুলীনমাত্রের কুলক্ষয় হইয়া গিয়াছে।


  1. যদিও, অবিবাহিত অবস্থায় কন্যার ঋভুদর্শন ও ঋতুমতী কন্যার পাণিগ্রহণ শাস্ত্রানুসারে ঘোরতপাতকজনক; কিন্তু, কুলাভিমানী মহাপুরুষেরা উহাকে দোষ বলিয়া গ্রাহ্য করেন না। দোষ বোধ করিলে, অকিঞ্চিৎকরকুলাভিমানের বশবর্ত্তী হইয়া চলিতেন না, এবং কন্যাদিগকে অবিবাহিত অবস্থায় রাখিয়া নিজে নরকগামী হইতেন না, এবং পিতা, পিতামহ, প্রপিতামহ এই তিন পূর্ব্বপুরুষকে পরলোকে বিষ্ঠাকুণ্ডে নিক্ষিপ্ত করিতেন না। হয়ত, তাঁহারা,

    কামমামণাতিগৃেহে কন্যর্ত্তুমত্যপি।
    নচৈবৈং প্রস্থে গুণহীনায় কহির্চিচৎ॥ ৯। ৮৯॥

    কন্যা ঋতুমতী হইয়া মৃত্যুকাল পর্য্যন্ত বরংগৃহে থাকিবেক, তথাপি তাহাকে কদাচ নির্গুণ পাত্রে প্রদান করিবেক না।

    এই মানবীয় ব্যবস্থা অবলম্বন করিয়া চলেন বলিয়া ভাবিয়া থাকেন। মনু নির্গুণ পাত্রে কন্যাদান অবিধেয় বলিয়া নির্দেশ করিয়াছেন। কিন্তু, ইদানীন্তন কুলাভিমানীমহাশয়েরা সর্ব্বাপেক্ষা নির্গুণ; আচার, বিনয়, বিদ্যা প্রভৃতি গুণে তাঁহারা একবারে বর্জ্জিত হইয়াছেন। সুতরাং, তাঁহাদের অভিমত শাস্ত্র অনুসারে বিবেচনা ঝরিতে গেলে, এক্ষণকার কুলীন পাত্রে কন্যাদান করাই সর্ব্বতোভাবে অবিধেয় বলিয়া নিঃসংশয়ে প্রতিপন্ন হইবেক।