পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৪১৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

389 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বিতীয় খন্ড উপনিবেশবাদের বিরোধিতা করে ততক্ষণ জনগণের সাথে একটা মিত্রতার সম্পর্কও রয়েছে। বুর্জোয়া শ্রেণীর তৃতীয় অংশ জাতীয় বুর্জোয়াদের সাথে জনগণের শত্রতার সম্পর্ক ছাড়াও তারা যতক্ষণ উপনিবেশবাদ ও সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী সংগ্রাম করে ততক্ষণ একটা মিত্রতার সম্পর্কও রয়েছে। বর্তমানে জাতীয় সংগ্রামের নেতৃত্বে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ সমর্থক দালাল বুর্জোয়াদের হাতে। এ নেতৃত্বেও অবসান তিন প্রকারে হওয়া সম্ভবঃ (ক) সর্বহার শ্রেণীর রাজনৈতিক পার্টি দৃঢ়ভাবে জাতীয় পতাকা উর্ধ্বে তুলে ধরে কৃষক-জনতাকে উপনিবাশবাদ সামন্তবাদ বিরোধী সশস্ত্র সংগ্রামে উদ্বুদ্ধ করলে; (খ) উপনিবেশিক শক্তি মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের নিকট আত্মসমর্পণ করে চীন বিরোধী কমিউনিষ্ট বিরোধী জোট কমিউনিষ্ট স্থাপন করলে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ, সোভিয়েত সামাজিক সাম্রাজ্যবাদ ও ভারতীয় সম্প্রসারণবাদের সাহায্য ও সমর্থনে দালাল বুর্জোয়াদের জাতীয় সংগ্রাম ধংশ করতে সক্ষম হবে; (গ) ঔপনিবেশিক শাসকশ্রেণী সাম্রাজ্যবাদের দালাল বুর্জোয়াদের সাথে আপোসে আসলে এই দালাল বুর্জোয়াদের আসল তকতা ও গণবিরোধী চরিত্র প্রকাশ পাবে। প্রধান দ্বন্দ্ব উপরোক্ত দ্বন্দ্বগুলো ছাড়াও পূর্ববাংলার সমাজে আরো দ্বন্দ্ব রয়েছে। কিন্তু এই চারটি মূল দ্বন্দ্ব। সভাপতি মাও বলেছেন, “কোনো প্রক্রিয়াতে যদি কতকগুলো দ্বন্দ্ব থাকে তবে তাদের মধ্যে অবশ্যই একটা প্রধান দ্বন্দ্ব থাকবে যা নেতৃস্থানীয় ও নির্ণায়ক ভূমিকা গ্রহণ করে। অন্যগুলো গৌণ ও অধীনস্থ স্থান নিবে। তাই দুই বা দুয়ের অধিক দ্বন্দ্ববিশিষ্ট কোন জটিল প্রক্রিয়ার পর্যালোচনা করতে গেশে আমাদের অবশ্যই তার প্রধান দ্বন্দ্বকে খুঁজে পাবার জন্য সর্বপ্রকার প্রচেষ্টা চালাতে হবে। এই প্রধান দ্বন্দ্বকে আকড়ে ধরলে সমস্যাকেই সহজে মীমাংসা করা যায়।” পাকিস্তানী উপনিবাশবাদ বিরোধী জাতীয় সংগ্রামে কৃষক-শ্রমিক, ক্ষুদে বুর্জোয়া মাঝারি বুর্জোয়ার এক অংশ এবং দেশপ্রেমিক ধনী চাষী ও জমিদারদের অর্থাৎ সমগ্র জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করা সম্ভব। কাজেই বর্তমান সামাজিক বিকাশের প্রক্রিয়ায় পূর্ববাংলার জনগণের সাথে পাকিস্তানী উপনিবেশবাদীদের জাতীয় দ্বন্দ্ব প্রধান দ্বন্দ্ব। কিন্তু উপনিবাশবাদ বিরোধী জাতীয় সংগ্রাম একটা নির্দিষ্ট স্তরে পৌঁছালে পাকিস্তানী ঔপনিবেশিক একযোগে অথবা আলাদাভাবে নিজেদের সৈন্য দ্বারা পূর্ববাংলার জনগণের সংগ্রামকে নস্যাৎ করার প্রচেষ্টা চালাবে। এ অবস্থায় পাকিস্তানী উপনিবেশবাদ গণসংগ্রাম বিরোধীর প্রধান ভূমিকা থেকে গৌণ ভূমিকা গ্রহণ করবে। পক্ষান্তরে, মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ, সোভিয়েত সামাজিক সাম্রাজ্যবাদ, ভারতীয় সম্প্রসারণবাদ পূর্ববাংলার গণবিরোধী সংগ্রামের গৌণ পূর্ববাংলার ভূমিকা থেকে ক্রমশঃ মুখ্য ভূমিকা গ্রহণ করবে। পক্ষান্তরে, মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ, সোভিয়েত সামাজিক সাম্রাজ্যবাদ, ভারতীয় সম্প্রসারণবাদের সাথে পূর্ববাংলার জনগণের জাতীয় দ্বন্দ্ব প্রধান দ্বন্দ্বে পরিণত হবে। এই প্রধান দ্বন্দ্বের ভিত্তিতে নতুন করে ঐক্যফ্রন্ট প্রতিষ্ঠা করে জনগণকে সঠিক মুক্তিসংগ্রামের পথে পরিচালিত করতে হবে। পূর্ববাংলার বিপ্লব ও তার চরিত্র পূর্ববাংলার বুর্জোয়া ও সামন্তবাদীরা নিজেদের বিকাশের জন্য পাকিস্তানে যোগ দেয়। কিন্তু পাকিস্তানী ঔপনিবেশিক শ্রেণী পূর্ববাংলার বুর্জোয়া বিকাশের জন্য যে সুবিধা প্রয়োজন তা নিজেদের বিকাশে ব্যবহার করে। ফলে এদেশের বুর্জোয়া বিকাশ ব্যাহত হয়। তাই বুর্জোয়া বিকাশের প্রয়োজনীয় অবস্থার সৃষ্টি অর্থাৎ সামন্তবাদ ও উপনিবাশবাদদের অবসান প্রয়োজন। সামন্তবাদের অবসান সম্ভব গণতান্ত্রিক বিপ্লবের মাধ্যমে এবং ঔপনিবেশিক শাসনের অবসান সম্ভব জাতীয় বিপ্লবের মাধ্যমে। কাজেই, পূর্ববাংলার বিপ্লব হবে জাতীয় গণতান্ত্রিক বিপ্লব।