পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/১৪৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

))ひ বাংলায় ভ্রমণ কাটোয়া একটি জংশন স্টেশন। ইহা বৰ্দ্ধমান-কাটোয়া ও আহম্মদপুর-কাটোয়া নামক ছোট মাপের লাইট রেলওয়ে রেলপথের সংযোগস্থল। কাটোয়া হইতে বৰ্দ্ধমানের দিকে এই রেলপথে শ্ৰীখণ্ড, কৈচর ও নিগন উল্লেখযোগ্য স্টেশন। কাটোয় জংশন হইতে শ্ৰীখণ্ড ৫ মাইল দূর। ইহা একটি বদ্ধিষ্ণু ভদ্রপল্লী ও প্রসিদ্ধ বৈষ্ণব শ্রীপটি। শ্রীচৈতন্যদেবের প্রিয় পার্ষদ নরহরি সরকার ঠাকুর এবং অনুরক্ত ভক্ত রঘুনন্দন ও মুকুন্দ শ্ৰীখণ্ডের অধিবাসী ছিলেন। “ নরহরি গৌর-লীলার পদ রচনার প্রবর্তক বলিয়া বৈষ্ণব সমাজে আদৃত।” এই স্থানে সরকার ঠাকুরের শ্রীপাটে গৌরাঙ্গদেবের বিগ্রহের নিত্য পূজা হয়। নরহরি নাগরীভাবের উপাসক ছিলেন। কবি কর্ণপুর তৎকৃত গৌরগণোদেশ দীপিকায় নরহরিকে ব্রজের মধুমতী সখীর অবতার বলিয়া উল্লেখ করিয়াছেন। প্রতি বৎসর কাত্তিক মাসের কৃষ্ণ-দ্বাদশী তিথিতে নরহরি সরকার ঠাকুরের তিরোভাব উপলক্ষে শ্ৰীখণ্ডে “ মধুমতী উৎসব ” নামে একটি মেলা হয়। ১৪৭৮ খৃষ্টাব্দে তাহার জন্ম ও ১৫৪৩ খৃষ্টাব্দে তাহার মৃত্যু হয় । শ্ৰীখণ্ড পণ্ডিতপ্রধান স্থান। কাটোয় জংশন হইতে কৈচর ১০ মাইল দূর। এই স্থানে নামিয়া ৩ মাইল দূরবর্তী পীঠস্থান ক্ষীরগ্রামে যাইতে হয়। ক্ষীরগ্রামে দেবীর দক্ষিণ চরণের অঙ্গুষ্ঠ পড়িয়াছিল, দেবীর নাম যোগদ্যা, ভৈরব ক্ষীরথওক। দেবীপ্রতিমা সারা বৎসর ধরিয়া একটি দীঘির জলে ডুবানো থাকে। বৈশাখ-সংক্রাস্তির দিন জল হইতে দেবীকে তুলিয়া মহাসমারোহে পূজা করা হয় ও তদুপলক্ষে একটি মেলা বসে। যোগদ্যার মাহাত্ম্য সম্বন্ধে বহু কিংবদন্তী আছে। কথিত আছে একবার দেবী যোগাদা একটি কুমারীর বেশ ধারণ করিয়া জনৈক শাখারির নিকট হইতে শাখা পরিধান করেন এবং পরে জলমধ্যে হইতে শঙখশোভিত হস্ত উত্তোলন করিয়া শাখারি ও স্থানীয় ধনী সেবাইতকে উহা দেখান। এই কাহিনী অবলম্বনে বিখ্যাত মহিলা কবি তরু দত্তের একটি সুন্দর ইংরেজী কবিতা আছে। প্রবাদ পূবেব যোগদ্যার পূজার দিন প্রতি বৎসর তাহার নিকট একটি করিয়া নরবলি হইত । কাটোয় জংশন হইতে নিগন ১৩ মাইল দূর। এখানে নামিয়া ৫ মাইল পশ্চিমে অবস্থিত বৰ্দ্ধমান জেলার অন্যতম প্রাচীন স্থান মঙ্গলকোটে যাইতে হয়। মঙ্গলকোটে কয়েকজন মুসলমান ফকীরের সমাধি ও কয়েকটি পুরাতন মসজিদ আছে। এই ফকিরগণের মধ্যে পীর দানেশমন্দের নাম উল্লেখযোগ্য। ইহার মৃত্যু তিথি বা উৰ্বস্ উপলক্ষে মঙ্গলকোটে মুসলমানদের একটি মেলা হয়। মঙ্গলকোটের নিকটবৰ্ত্তী উজানি গ্রাম শ্ৰীমন্ত সদাগরের জন্মস্থান বলিয়া কথিত। পূবর্বকালে এখানে বিক্রমকেশরী নামে এক রাজা ছিলেন বলিয়া প্রবাদ আছে। এখানে পীঠস্থানও আছে। উজানিতে সতীর দক্ষিণ কনুই পড়িয়াছিল, দেবীর নাম সবৰ্বমঙ্গলা, ভৈরব কপিলাম্বর। সর্বমঙ্গলা বা মঙ্গলচণ্ডীর মৃত্তি পিত্তল নিৰ্ম্মিত, দেবী দশভূজসমন্বিত ও সিংহবাহিনী ; কপিলাম্বর ভৈরব পলতোলা কষ্টি পাথরের দ্বারা নিৰ্ম্মিত। উজনির মহাশ্মশানের এক পার্শ্বে খড়গমোক্ষণ নামে একটি তীর্থ আছে। - প্রবাদ, বেতালসিদ্ধ রাজা বিক্রমাদিত্য জনৈক সন্ন্যাসীর শিরশেছদ করায় তাহার হস্তে খড়গ আবদ্ধ হইয়া যায়। বহু তীর্থ ভ্রমণের পর উজানির মহাশ্মশানে আসিয়া তাহার হস্ত হইতে খড়গ খসিয়া পড়ে। সেই হইতে এই স্থানের নাম হয় খড়গমোক্ষণ তীর্থ। এখানে প্রতি বৎসর পৌষ সংক্রাস্তিতে মেলা হয়। উজানিতে “ ভ্রমরার দহ ” ও “ শ্ৰীমন্তডাঙ্গা ” প্রভৃতি প্রাচীন স্থানও বিশেষ দ্রষ্টব্য। উজনির নিকটবর্তী কোগ্রাম বিখ্যাত “চৈতন্য মঙ্গল ”