পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/১৬৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

(ঘ) খান জংশন—সঁইথিয়া—নলহাটি—বারহাড়োয়৷ (সাহেবগঞ্জ লুপ শাখ) গুসকরা—খান জংশন হইতে ১২ মাইল দূর। ইহা বৰ্দ্ধমান জেলার একটি প্রসিদ্ধ গ্রাম ও বাণিজ্যপ্রধান স্থান। এখানে ধান্য ও চাউলের খুব বড় কারবার আছে। প্রতি মঙ্গল ও শুক্রবারে এখানে খুব বড় হাট হয় এবং ঐ হাটে ধান্য ও চাউল ক্রয় বিক্রয়ের জন্য বহু দূর হইতে লোক আসে। এখান হইতে ৭ মাইল দূরে মাহত গ্রাম পূবেৰ্ব সংস্কৃত চচর্চার জন্য খ্যাত ছিল। মাঘ মাসে এখানে গোবিন্দ জীউর মন্দিরে একটি মেলা বসে। বোলপুর—খানা জংশন হইতে ২৪ এবং হাওড়া হইতে ৯৯ মাইল দূর। ইহা বীরভূম জেলার অন্তর্গত একটি বিখ্যাত বাণিজ্য কেন্দ্র। এখানে একটি মুনসেকী আদালত আছে। আধুনিক কালের শ্রেষ্ঠ কবি রবীন্দ্রনাথ ও তাহার আশ্রম শাস্তি-নিকেতনের জন্য বোলপুরের নাম জগৎবিখ্যাত হইয়াছে। বোলপুর স্টেশন হইতে এক মাইল পশ্চিমে এই আশ্রম অবস্থিত। পূবেৰ্ব এই স্থান অনুবর্বর প্রান্তর ছিল। রবীন্দ্রনাথের পিতা মহৰ্ষি দেবেন্দ্ৰ নাথ ঠাকুর এই স্থানের নির্জনত ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য দশনে মুগ্ধ হইয়া ১৮৬৩ খৃষ্টাব্দের মাচর্চ মাসে এখানকার একখণ্ড জমি ক্রয় করেন এবং তথায় একটি মন্দির ও অতিথিশালা নিৰ্মাণ করেন। ১৮৮৭ খৃষ্টাব্দে মহমি শাস্তিনিকেতন আশ্রমের প্রতিষ্ঠা করিয়া উহা সবৰ্বসাধারণের ঈশ্বর আরাধনার জন্য উৎসগ করেন। কোনও ধৰ্ম্ম সম্প্রদায়ের নিন্দা বা আমিষ আহার এই আশ্রমে নিষিদ্ধ। মহৰ্ষি যে দুইটি ছাতিম (সপ্তপণ) গাছের তলায় ধ্যান ও আরাধনা করিতে ভালবাসিতেন তাহা আজও বর্তমান আছে। একটি মৰ্ম্মর প্রস্তরে মহধির নিম্নলিখিত প্রার্থনাটি উৎকীর্ণ আছে, আমার প্রাণের আরাম আত্মার শাস্তি ।” ১৯০১ খৃষ্টাব্দে রবীন্দ্রনাথ ব্ৰহ্মচৰ্য্যাশ্রম নাম দিয়া সম্পূণ নূতন আদশে এখানে একটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। প্রাচীন ভারতের গুরুগৃহের ন্যায় শহরের কোলাহল ও কৃত্রিমতা হইতে দূরে যুক্ত আকাশের তলে স্বাভাবিক পরিবেষ্টনীর মধ্যে যাহাতে সহজে স্বাধীনভাবে ছেলে মেয়ের গড়িয়া উঠিতে ও শিক্ষালাভ করিতে পারে ইহাই হইল কবির স্বপু ও সাধনা। যতদূর সম্ভব এখানে খোলা আকাশের তলে যুক্তবায়ুতে উদ্যানের মধ্যে অধ্যাপন করা হয়। প্রতিষ্ঠাতার একাগ্র সাধনা ও পরিশ্রমের ফলে বিদ্যালয়টি বড় হইয় উঠে এবং পৃথিবীর নানাস্থানের মূনীষী ও চিন্তাশীল বিদু সমাজের দৃষ্ট আকর্ষণ করে। ১৯২২ খৃষ্টাব্দের ১৬ই মে কবি এই বিদ্যালয়ের কৰ্ম্মক্ষেত্র বিস্তৃত ও পুনর্গঠন করিয়া বিশ্বভারতী নাম দিয়া একটি সত্যকার আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা করেন। ইহার প্রধান উদ্দেশ্য হইতেছে প্রাচ্য ও প্রতীচ্যের সংস্কৃতির বিভিন্ন ধারা বিষয়ে শ্রদ্ধা ও সহানুভতির সহিত অনুশীলন ও গবেষণা করা এবং তাঁহাদের ঐক্য ও মিলনের সাহায্যে জগৎ হইতে আস্তর্জাতিক হিংসা ও বিদ্বেষ নিৰ্ম্ম ল করিয়া মানবতার বিজয় গৌরব ঘোষণা করা। এখন এই শিক্ষায়তনে শিশুশ্রেণী হইতে আরম্ভ করিয়া উচচতম গবেষণার নানারূপ ব্যবস্থা রহিয়াছে। পাঠভবন (স্কুল) শিক্ষাভবন (কলেজ) কলাভবন (আর্ট স্কুল) সঙ্গীতভবন, বিদ্যাভবন গবেষণা মন্দির ও নিকটস্থ স্বরুল গ্রামে শ্রীনিকেতন (আদর্শ পল্লী গঠন ও কৃষি প্রভৃতি বিষয়ক শিক্ষাকেজ)