পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পূর্বববঙ্গ রেলপথে বাংলাদেশ సిJ) দাস। দরগাহের নিকটে ইষ্টক নিৰ্ম্মিত একটি ছোট মসজিদ ও একটি মক্তব আছে। মসজিদটি মুঘল বাদশাহ ফৰ্ব-দুখ-শিয়রের রাজত্বকালে ১৭১২ খৃষ্টাব্দে নিৰ্ম্মিত। দরগাহের অঙ্গনে অনেকগুলি কৰর আছে, ইহার মধ্যে কতকগুলি কবর শাহ সুলতানের অনুচরগণের এবং অপর কতকগুলি দরগাহের খাদেমগণের সমাধি। দরগাহের প্রবেশ দ্বারের নিকট বৃহৎ গৌরীপটি এবং পুরোহিতের প্রস্তরাসন দৃষ্ট হয়। দরগাহের পশ্চাৎ দিকে অবস্থিত একটি বড় কুপকে স্থানীয় লোকে রাজা পরশুরামের জীয়ৎকুণ্ড বলিয়া নির্দেশ করে। প্রাচীন দুর্গের প্রাকার ইষ্টক নিৰ্ম্মিত ও মৃত্তিক আচ্ছাদিত। ইহার পূর্ব দিকে করতোয়া নদী ও অপর তিনদিকে বিস্তৃত পরিখার চিহ্ন দেখা যায়। দক্ষিণ দিকের পরিখা বারাণসী খাল, পশ্চিমের পরিখা গিলাতলা খাল ও উত্তর দিকের পরিখা কালীদহ সাগর নামে পরিচিত। কালীদহ সাগর মহাস্থানের উত্তরে অবস্থিত একটি বিল বিশেষ। বৰ্ত্তমানে দুর্গের পূর্ব দিকে দোরাব সাহের দরজা ও শীলাদেবীর ঘাটের দরজা নামে দুইট, উত্তর দিকে ঘাঘোর দুয়ার নামে একটি ও পশ্চিম দিকে তাম্র দরজা ও আর একটি ফটকের চিহ্ন আছে। উত্তর দিকের দরজা হইতে সনাতন সাহেবের গলি নামক একটি রাস্ত গড়ের ভিতর দিয়া গোবিলের দ্বীপ পর্য্যন্ত গিয়াছে। দুর্গের অভ্যস্তরে শাহ সুলতানের দরগাহের নিকটে “ খোদার পাথর ” ও .” মানকালীর কুণ্ড” নামক দুইটি ধ্বংস স্তুপ আছে। এই স্থানে পূর্বে দুইটি মন্দির ছিল বলিয়৷ অনুমিত হয়। ইহার চতুদিকে ইষ্টক ও প্রস্তরখণ্ড প্রভৃতি নিক্ষিপ্ত রহিয়াছে। খোদার পাথর নামক প্রস্তর খণ্ডটির দৈর্ঘ্য ১১ ফুট ও বেড় প্রায় ৩ ফুট ; ইহা কোন দেব মন্দিরের চৌকাঠ ছিল বলিয়া মনে হয়। খোদার পাথরের চারিদিকে খনন করিয়া প্রচীন মন্দিরের পাথরের মেঝে ও কয়েকটি প্রস্তর খণ্ড পাওয়া গিয়াছে; একটি প্রস্তরখণ্ডে চারিটি ধ্যানী বুদ্ধমুক্তি ও একটি ভক্তের মুক্তি খোদিত আছে। ইহা রাজশাহীতে বরেন্দ্র অনুসন্ধান সমিতির চিত্রশালায় রক্ষিত আছে। ইহা একটি বৌদ্ধ মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ বলিয়া পণ্ডিতেরা অনুমান করেন। উত্তর দিকস্থ পথ সনাতন সাহেবের গলি দিয়া অগ্রসর হইলে বৈরাগীর ভিটা ও গোবিলের ভিটা প্রভৃতি ধংসাবশেষ দেখিতে পাওয়া যায়। প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ কর্তৃক খননের ফলে এই সকল স্থানেও মৃত্তিকামধ্যে প্রাচীন মন্দিরের ভিত্তি ও কয়েকটি কক্ষ আবিষ্কৃত হইয়াছে। কক্ষ সংলগ্ন ইষ্টকে পাহাড়পুর স্তুপের ন্যায় বহু দেবদেবী, জীবজন্তু ও পুষ্পলতাদির চিত্র উৎকীর্ণ আছে। - গোবিদের ভিটা নামক স্তুপটির প্রাচীন নাম গোবিন্দ দ্বীপ। ইহা করতোয় নদীর ঠিক উপরেই অবস্থিত। পূবেৰ্ব ইহার চারিদিকে করতোয় বহিত। এখনও একটি প্রাচীন ঘাটের চিহ্ন রহিয়াছে। প্রত্নতাত্ত্বিক গণের মতে এই স্থানেই প্রাচীন মহাস্থানের সুপ্রসিদ্ধ গোবিন্দ বা বিষ্ণুমন্দির প্রতিঠিত ছিল। ইহার পার্ব দিয়া একটি ক্ষুদ্র খাল করতোয় নদীতে গিয়া পড়িয়াছে। এই খালটি কালীদহ সাগর হইতে উঠিয়া আসিয়াছে। গোবিদের ভিটার সংলগ্ন ঘাট বিশেষ পবিত্র বলিয়া বিবেচিত হয়। আজিও প্রতিবৎসর বাৰুণী ও পৌষসংক্রাস্তির দিনে উত্তরবঙ্গের বহু স্থান হইতে আগত যাত্ৰিগণ মহাস্থানের শীলাদেবীর ঘাট ও গোবিন্দদ্বীপের ঘাটে করতোয়ায় স্নান করিয়া থাকেন। পৌষ সংক্রাস্তির সহিত ? নারায়ণী যোগ " সংঘটিত হইলে ভারতের নানাস্থান হইতে আগত যাত্রীর সংখ্যা প্রায় লক্ষ পর্য্যন্ত হয়। সাধারণত: প্রতি ১২ বৎসর অন্তর একবার “ পৌষ নারায়ণী যোগ ’ হইয়া থাকে। মহাস্থান দুর্গের পশ্চিমভাগে তাম্রদরজ হইতে দুগের বাহিরে বাজ পাওয়ামের প্রাগাদ ও সভাবাটী অবস্থিত। এই স্থানেও খননের দ্বারা গৃহভিত্তি, প্রাচীর ও কক্ষাদি আবিষ্কৃত