পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/২৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আসাম বাংলা রেলপথে פטל কুমিল্লা শীতলপাটি, হক এবং বঁশি ও বেতের জন্য প্রসিদ্ধ। ময়নামতীর তীতের “ চারখান৷ ” কাপড়েরও যথেষ্ট খ্যাতি আছে। কুমিল্লা হইতে ত্রিপুরা রাজ্যের অন্তগত ৫১ মহাপীঠের অন্যতম ত্রিপুরাসুন্দরীর পীঠে যাইতে হয়। এখানে সতীর দক্ষিণ চরণ পতিত হইয়াছিল। ত্রিপুরাসুন্দরীর ভৈরবের নাম ত্রিপুরেশ । কুমিল্লা হইতে ২৮ মাইল দূরবর্তী রাধাকিশোরপুর নামক গ্রামে উদয়পুরে এই মহাপীঠ অবস্থিত। কুমিল্লা হইতে এই স্থানে মোটর বাস যোগে যাইতে হয়। (সীতাকুণ্ড দ্রষ্টব্য)—প্রতিবৎসর পেম মাসে ও শিবচতুর্দশীর সময় এই স্থানে বিরাট মেলা বসে যাত্ৰিগণের সুবিধার জন্য ত্রিপুরারাজ বিশেষ ব্যবস্থা করিয়াছেন। লালমাই—আখাউড়া জংশন হইতে ৩৬ মাইল দূর। স্টেশনের নিকটেই লালমাই পাহাড় অবস্থিত। এই পাহাড় উত্তর-দক্ষিণে প্রায় ১০/১১ মাইল বিস্তৃত। লাকসাম জংশন-আখাউড়া হইতে ৪৪ মাইল দূর। ইহা আসাম বাংলা রেলপথের একটি বড় জংশন। এখান হইতে চাঁদপুর ও নোয়াখালি এই দুইটি শাখা লাইন বাহির হইয়াছে। চাদপুর শাখার উপর লাক্সাম জংশন হইতে ১২ মাইল দূরে মেহার কালীবাড়ী। স্টেশনের নিকটেই সিদ্ধসাধক সববানন্দ ঠাকুরের সাধনপীঠ মেহারের কালীবাড়ী অবস্থিত। এই স্থানটি নির্জন ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের আধার। এখানে “ সবর্বানন্দ মঠ” নামে একটি মঠ আছে। প্রতি বৎসর পৌষ মাষের সংক্রাস্তিতে এখানে একটি মেলা হয় । প্রবাদ, যে ঠাকুর সবর্বানন্দ তাদৃশ শিক্ষিত ছিলেন না। কিন্তু বাল্যকাল হইতে দেবীর প্রতি তাহার অচলা ভক্তি ছিল। বিশ্বস্ত ভূত্য পূর্ণানন্দের সহায়তায় তিনি তান্ত্রিক সাধনায় সিদ্ধি লাভ করিয়া দেবীকে প্রত্যক্ষ দর্শন করেন। একবার অমাবস্যা তিথিকে তিনি ভুল করিয়া পূর্ণিমা বলিয়াছিলেন। ইহাতে সমস্ত লোকে তাহাকে উপহাস করে। কিন্তু সিদ্ধ সাধক সবর্বানন্দ বলেন যে সে দিন নিশ্চয়ই পূর্ণিমা এবং সন্ধ্যাকালে নিশ্চয়ই চন্দ্রোদয় হইবে। ভক্তের মান রক্ষা করিবার জন্য দেবী কালিকা সন্ধ্যার সময় পূবৰ্বাকাশে স্বীয় কঙ্কণ-শোভিত হস্ত উত্তোলন করেন এবং উহার জ্যোতিতে সবর্বত্র চন্দ্রকিরণের ন্যায় জ্যোৎস্নার বিকাশ হয়। সবৰ্বানন্দের অলৌকিক ক্ষমতা সম্বন্ধে এই প্রকার বহু কৃহিনী প্রচলিত আছে। চাঁদপুর শাখা লাইনে লাক্যাম হইতে ১৮ মাইল দূরে ত্রিপুর জেলার অন্যতম বাণিজ্য কেন্দ্র হাজিগঞ্জ স্টেশন অবস্থিত। চাউল ও সুপারির কারবারের জন্য এই স্থানটি প্রসিদ্ধ। চাঁদপুরের দূরত্ব লাক্যাম হইতে ৩২ মাইল। ইহা ত্রিপুর জেলার অন্যতম মহকুমা। শহরটি মেঘনা নদীর তীরে অবস্থিত এবং বাণিজ্যের জন্য বিখ্যাত। এখানে সটীমার স্টেশনের সহিত রেলওয়ের সংযোগ আছে । চাঁদপুর বন্দর হইতে বহু টাকার পাট, সুপারি ও লঙ্কা চালান যায়। নোয়াখালি শাখার উপর লাকসাম জংশন হইতে ১৫ মাইল দূরে সোনাইমুড়ি ও ২২ মাইল দুরে চৌমুহানি স্টেশন অবস্থিত। এই স্টেশনীয় নােয়াখালি জেলার বাণিজ্য প্রধান স্থান। চৌমুহানি সুপারির ব্যবসায়ের জন্য প্রসিদ্ধ।