তাহার প্রমাণ। বাংলায় সে কায়ক নাই, কর্মকাকের মধ্যে তাহা সম্পূর্ণ লুপ্ত। তবু সংস্কৃত ব্যাকরণের নজিরে যদি বাংলা ব্যাকরণে সম্প্রদানকারক জবরদস্তি করিয়া চালাইতে হয়, তবে এ কথাই বা কেন না বলা যায় যে, বাংলায় দ্বিবচন আছে। যদি ‘ধোপাকে কাপড় দিলাম’ কর্ম এবং ‘গরিবকে কাপড় দিলাম’ সম্প্রদান হয়, তবে একবচনে ‘বালক’, দ্বিচনে ‘বালকেরা’ ও বহুবচনেও ‘বালকেরা’ না হইবে কেন। তবে বাংলাক্রিয়াপদেই বা একবচন, দ্বিবচন, বহুবচন ছাড়া যায় কী জন্য। তবে ছেলেদের মুখস্থ করাইতে হয়— একবচন ‘হইল’, দ্বিবচন ‘হইল’, বহুবচন ‘হইল’; একবচন ‘দিয়াছে’, দ্বিবচন ‘দিয়াছে’, বহুবচন ‘দিয়াছে’ ইত্যাদি। ‘তাহাকে দিলাম’ যদি সম্প্রদানকারকের কোঠায় পড়ে, তবে ‘তাহাকে মারিলাম’ সম্ভাড়ন-কারক; ‘ছেলেকে কোলে লইলাম’ সংলালন-কারক; ‘সন্দেশ খাইলাম’ সম্ভোজন-কারক; ‘মাখা নাড়িলাম’ সঞ্চালন-কারক এবং এক বাংলা কর্ম-কারকের গর্ভ হইতে এমন সহ সঙের সৃষ্টি হইতে পারে।
সংস্কৃত ও বাংলায় কেবল যে কারক-বিভক্তির সংখ্যায় মিল নাই, তাহা নহে। তাহার চেয়ে গুরুতর অনৈক্য আছে। সংস্কৃত ভাষায় কর্তৃবাচ্যে ক্রিয়াপদের জটিলতা বিস্তর; এইজন্য আধুনিক গৌড়ীয় ভাষাগুলি সংস্কৃত কর্মবাচ্য অবলম্বন করিয়াই প্রধানত উদ্ভূত। ‘করিল’ ক্রিয়াপদ ‘কৃত’ হইতে, ‘করিব করিবে’ ‘কর্তব্য’ হইতে উৎপন্ন হইয়াছে। এ সম্বন্ধে বিস্তারিত আলোচনা এ প্রবন্ধে হওয়া সম্ভবপর নহে; হ্যর্নলে-সাহেব তাঁহার তুলনামূলক গৌড়ীয় ব্যাকরণে ইহার প্রভূত প্রমাণ দিয়াছেন। এই কর্মবাচ্যের ক্রিয়া বাংলায় কর্তৃবাচ্যে ব্যবহার হইতে থাকায় সংস্কৃত ব্যাকরণ আর তাহাকে বাগ মানাইতে পারে না। সংস্কৃত তৃতীয় বিভক্তি ‘এন’ বাংলায় ‘এ’ হইয়াছে; যেমন, বাঁশে মাথা ফাটিয়াছে, চোখে দেখিতে পাই না ইত্যাদি। বাঘে খাইল, কথাটার ঠিক সংস্কৃত তর্জ্জমা ব্যাঘ্রেণ খাদিতঃ। কিন্তু খাদিত শব্দ বাংলায় খাইল আকার ধারণ করিয়া কর্তৃবাচ্যের কাজ করিতে লাগিল; সুতরাং বাঘ যাহাকে খাইল, সে বেচারা আর কর্তৃকারকের রূপ ধরিতে পারে না। এইজন্য, ব্যাঘ্রেণ রামঃ খাদিতঃ, বাংলায় হইল বাঘে রামকে খাইল; বাঘে শব্দে করণকারকের এ-কার বিভক্তি থাকা সত্ত্বেও রাম শব্দে কর্মকারকের কে বিভক্তি লাগিল। এ খিচুড়ি সংস্কৃত ব্যাকরণের কোনো পর্যায়েই পড়ে না। পণ্ডিতমশায় বলিতে পারেন,