পাতা:বাখতিন - তপোধীর ভট্টাচার্য.pdf/২৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
বছরের শেষে বাড়িতে অন্তরীণ করা হচ্ছে। এসময় এলেনাও চেষ্টার কোনও ত্রুটি করেননি যাতে বাখতিনকে দশ বছরের জন্যে সোলোভেৎস্কি দ্বীপপুঞ্জে নির্বাসিত না করা হয়। শেষ পর্যন্ত, তাঁকে কাজাখস্তানে কুস্তানাই শহরে ছ’বছরের জন্যে নির্বাসিত করা হচ্ছে।
১৯৩০...: বাখতিন স্ত্রীকে নিয়ে কুস্তানাই শহরে উপস্থিত হচ্ছেন। এসময় টলষ্টয়ের তেরো খণ্ডে বিন্যস্ত সমগ্র সাহিত্য-রচনার দুটি খণ্ডের ভূমিকা লিখছেন বাখতিন। এই দুটি রচনায় তাঁর মার্ক্সীয় যুক্তিবিন্যাসের পরিচয় পাওয়া যায়। ঠিক আগের বছর প্রকাশিত ভ্লাদিমির প্রোপের Morphology of the Folkale বইয়ের যুক্তি-বিন্যাস বাখতিনের চিন্তা-প্রণালীকে কিছুটা প্রভাবিত করে থাকবে। সর্বতোভাবে প্রতিকূল পরিবেশে বাখতিন জীবিকার ব্যবস্থা করতে পারেননি কেননা শিক্ষকতার বৃত্তি তাঁর জন্যে নিষিদ্ধ ছিল। স্ত্রী এলেনা নানা ধরনের কাজ করে সংসার চালানোর ব্যবস্থা করছেন।
১৯৩১...: এপ্রিল মাসের শেষে সরকার-নিয়ন্ত্রিত সমবায় কার্যালয়ে বাখতিন হিসাব-রক্ষকের কাজ পাচ্ছেন।
১৯৩৩...: জেলাপর্ষদে পরামর্শদাতার অতিরিক্ত কাজও তাঁকে দেওয়া হচ্ছে। ধীরে ধীরে তাঁর উপর নিয়ন্ত্রণও কিছুটা শিথিল হয়ে আসছে। সাহিত্য ও দর্শন সম্পর্কে বক্তৃতা দেওয়ার সুযোগ না পেলেও অন্যান্য প্রায়োগিক বিষয়ে বক্তৃতা দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। গৃহযুদ্ধের প্রাক্তন যোদ্ধা লালরক্ষীদের মধ্যে জনপ্রিয়তাও অর্জন করতে পারছেন। যৌথখামারের কৃষিজীবীদের মধ্যে নানা বিষয়ে ভাষণ দিয়ে নিঃসন্দেহে বৃহত্তর জীবন সম্পর্কে অভিজ্ঞ হয়ে উঠছেন তিনি।
১৯৩৪...: সোভিয়েত ট্রেড নামক সরকারি পত্রিকায় নবার্জিত অভিজ্ঞতা-নির্ভর একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হচ্ছে। ৪ আগস্ট সরকারিভাবে তাঁর নির্বাসনদণ্ড শেষ হলেও তিনি আরও কিছুদিন কুস্তানাইতে থাকছেন। সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি চিকিৎসার প্রয়োজনে শুধু কিছুদিনের জন্যে লেনিনগ্রাদে যাচ্ছেন। ততদিনে তাঁর দুটি পা-ই পীড়ায় আক্রান্ত।
১৯৩৬...: লেনিনগ্রাদে দু’মাসের জন্যে গ্রীষ্মকালে আসার অনুমতি পাচ্ছেন বাখতিন। আগস্টে আবার মস্কো হয়ে কুস্তানাই-তে ফিরে আসছেন। উপন্যাসের প্রতিবেদন সম্পর্কে তাত্ত্বিক প্রবন্ধ রচিত হয়েছে ইতিমধ্যে। সেপ্টেম্বরের শেষে কুস্তানাই-এর সরকারি সমবায় কার্যালয়ে ইস্তফা দিয়ে তাঁর প্রিয় শিক্ষকতার কাজে যোগ দিচ্ছেন সারান্‌স্ক শহরে। মুখ্যত পাভেল মেডভেডেভ-এর চেষ্টায় সেখানকার মোর্দোভিয়া পেডাগগিক্যাল ইন্‌স্টিটিউট-এ যোগ দিতে পেরেছেন। তখন সোভিয়েত পার্টির মধ্যে বিরাট উথাল-পাথাল শুরু হয়েছে। জিনোভিয়েভট্রটস্কির মতাবলম্বীর বিরুদ্ধে দমনমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সাংস্কৃতিক সাহচর্য সেই পর্যায়ে পাওয়া খুবই কঠিন ছিল, নতুন পরিস্থিতিতে তা আরও দুরূহ হয়ে উঠছে। বিশ্বসাহিত্য বিভাগে বাখতিন একাই পাঠদান করছেন এবং নিজের পছন্দ অনুযায়ী পাঠ্যবস্তুও তিনি নির্বাচন করতে পারছেন।
১৯