পাতা:বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী.djvu/২১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
অসুন্দর

মন সুন্দরের দিকে ফিরে ফিরে চায় অসুন্দরের দিক থেকে বারে বারে সরে আসে—এই জানা কথা বেশি করে জানানো নিম্প্রয়োজন, কিন্তু যারি থেকে মন সরে পড়তে চায় তাই অমুন্দর নাও হ’তে পারে—হয়তে। আমাদের নিজেদের দেখার ভুলে চোখের সামনে থাকতেও সুন্দরকে চিনতে পারলেম না এমনে হওয়া বিচিত্র নয়। মুন্দরে অসুন্দরে একট। পরিষ্কার ভেদাভেদ নির্ণয় করে দেওয়া কঠিন ব্যক্তিগত রুচি ও অরুচির হিসেবে দেখে চল্লে । , বাইরে থেকে মনের মধ্যে সুন্দর যে পথে আসছে অসুন্দরও সেই পথ ধরেই আনাগোনা করছে । বসন্তের হাওয়া গায়ে লাগে, আবার বসন্ত রোগ সেও গায়ে লাগে—দুয়ের বেলাতেই শরীরে কাটাও দিয়ে ওঠে, কিন্তু মন বিচার করে বলে এট। সুন্দর ওটা ভয়ঙ্কর বিশ্রী । দীতের বেদন মুন্দর অবস্থা কেউ বলে না, এখানে ব্যক্তিগত রুচি নিয়ে কথাই ওঠে না, কিন্তু দাতগুলি কেমন তার বেলা রুচিভেদে তর্ক ওঠে। চলিত কথায় মনের উপরে সুন্দর-অসুন্দরের ক্রিয় ভারি সহজে বোঝানো হয়েছে। সুন্দরের বেলায় বলা হ’ল, জিনিষটি কি মানুষটি মনে ধরলো, আর অসুন্দরের বেলায় বল্লেম, মনে ধরলে না । প্রথমে বহিরিন্দ্রিয়ের বিষয় পরে মনের বিষয় হয়ে মনে রয়ে গেল সুন্দর, অসুন্দর বাইরের বিষয় হ’ল, কিন্তু মনে তার স্থান হ’ল না, পরিত্যক্ত হ’ল মন থেকে অসুন্দর, মন মনে রাখতে চাইলে না অসুন্দরকে, এই হ’ল নিয়ম। মনের প্রহরী পাচ ইন্দ্রিয় সুতরাং প্রহরীর ভুলে অনেক সময় সুন্দর দরজা থেকে ফিরে যায় আর অসুন্দর চলে যায় সোজা বাসরঘরে! এটা ঘটতে দেখা গেছে দরোয়ান দূর করে দিলে পরম বন্ধুকে আর সোজা পথ ছেড়ে দিলে চাদা-ওয়ালাকে । “হীরা হিরাইলৱা কিচড়মে।” হীরা কাদার মধ্যে হারিয়ে রইলো, চোখে পড়লে ঝকমকে র্কাচটা, এমন ঘটনাও ঘটে তো ? এবং যাই ঝকঝকে তাই সোনা নয়—একথাও বলতে হয়েছে রসিকদের যার সুন্দরের সম্বন্ধে অন্ধ রইলো তাদের শুনিয়ে ।