পাতা:বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী.djvu/৩৩১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
রূপ

রূপের ভেদাভেদ জ্ঞান ও রহস্য প্রকাশ হ’ল কায আর্টিষ্টের, এই জন্তে আর্টিষ্ট কথার ঠিক প্রতিশব্দ হ’ল ‘রূপদক্ষ । কুঠার ঠিকৰূপে গড়া হ’ল তবেই সে কাটলে ঠিক মতো। প্রথম আর্টিষ্ট যখন কুঠার গড়লে তখন সে কুঠারের বাইরের আকৃতিটা ও মান-পরিমাণ হয়তে এক রকম দিলে, কিন্তু যে ধাতুতে কুঠার গড়লে ঠিক কাটবে কুঠার জলের মভো সেটুকুর জন্যে অনেক দিন ধরে অনেক রূপদক্ষের জন্মানে এবং মরার অপেক্ষা ছিল এ কথা ঠিক। শুধু এই একটি মাত্র কুঠার রূপ নয় নানা প্রহরণ তারি নানা রূপভেদ এও এক এক আর্টিষ্ট এসে দখল করলে যুগে যুগে—ক্ষুরপ্র বাণ অধচন্দ্র বাণ শিলীমুখ কত কি রূপের ভেদ । বাশপাতা গাছের কাটা পাখীর পালক সবাই উপদেশ করলে রূপভেদের । রূপটি ঠিক হ’ল তবেই চললো তীর ঠিক লক্ষ্য স্থান ভেদ করতে। রূপটি এমন হ’ল সে এমন করে বিধলে, অমন হ’ল রূপ বিধিলে তেমন করে । সহজ কথা—মুরটি ঠিক বসলে গলায়, রাগটি পেলে ঠিক রূপটি, ছন্দ পেলে ঠিক কথা, কথা পেলে ঠিক ছন্দ–কবির কল্পিত রূপটি ঠিক ফুটলো তখন । উপযুক্ত রূপ অনুপযুক্ত রূপ এ কথা আর্টে খাটে কিন্তু স্বরূপ কুরূপ বলে স্বতন্ত্র দুটাে রূপ আর্টিষ্টের কাছে নেই ; তার কাছে আছে শুধু নানা রূপ—কোনটা এ কাযে উপযোগী সে কাযে অনুপযোগী এই রকম। যেমন বাকাকে নিয়ে তীর, গড় চল্লেী না, তীরের অনুপযোগী সে, আবার ধনুকের বেলায় বাকাই যত বাকলে ততই দেখতেও হ’ল চমৎকার, কাৰ্যও দিলে সুন্দর। তীর সোজ ধনুক বাকা–সোজাতে বাকাতে মিলন, একই ক্ষেত্রে রূপের ভেদ ও অভেদ। এমনি ভেদাভেদ সে সঙ্গীতে সে কবিতায় রূপ ধরে প্রকাশ পায় কথার মারপেচ মুরের ঘোরপেচ নিয়ে। বাকী দিলে এক রূপ, সোজা দিলে অন্ত, বাকায় বাকায় মিলে এক রূপ, সোজায় বাকায় মিলে অন্ত,—এমনি নানা ভেদ রূপের । মেঘের উপরে ইন্দ্রধমু—সে একটি মাত্র রঙীন আলোর বাক, তার সঙ্গে আর একটা উপযুক্ত রকম সোজ তাঁর তো জোড়া হ’ল না, শুধু আলো অন্ধকার রৌদ্র ও মেঘের ভেদাভেদ