বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:বাঙ্গলার ইতিহাস-অষ্টাদশ শতাব্দী-নবাবী আমল.pdf/৪৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩২ বাঙ্গলার ইতিহাস । ১ম অ । তাহার শাজাদার হস্তীর নিকটবৰ্ত্তী হইলে যুবরাজের শরীররক্ষী সৈন্যগণ পৃষ্ঠপ্রদর্শন করিল। এই বিষম অবস্থায় হামিদ খ৷ কোরেসী নামক জনৈক সাহসী সেনানী দূর হইতে সমস্ত ব্যাপার প্রত্যক্ষ করিয়া সবেগে রহিমের দিকে অশ্ব সঞ্চালন করিয়া বলিলেন, “আমি আজিমুম্বান,সাহস হয় ত আমার সহিত দ্বন্দ্বযুদ্ধে প্রবৃত্ত হও। রহিম তখন হস্তীর শৃঙ্খলকৰ্ত্তনে নিযুক্ত ছিলেন ; হামিদ এক বাণে বৰ্ম্মধারী রহিমের ও শরীর ভেদ করিলেন । সঙ্গে সঙ্গেই দ্বিতীয় বাণ রহিমের অশ্বের মস্তকে দারুণ আঘাত করিল। অশ্ব চকিত হইয়া উল্লম্ফন দ্বারা রহিমকে ভূতলশায়ী করিল। হামিদ খাঁ বিদ্যুদ্বেগে অশ্বপুষ্ট হইতে অবতরণ করিয়া স্বীয় শাণিত কৃপাণে রহিমের শিরচ্ছেদন করিয়া বর্ষার উপরে তুলিয়া ধরিলেন। নেতার মৃত্যুই সেকালে যুদ্ধকার্যের শেষ করিত। বিদ্রোহিগণ দলপতির দুর্দশ দর্শনে ত্রস্ত হইয়া পলায়নপর হইল ; অবিলম্বে যুদ্ধক্ষেত্র শত্ৰুশূন্য হইয়া গেল। বিদ্রোহী-শিবিরের অনেক ধনরত্ন বাদশাহী সৈন্যের হস্তগত হইল। দলপতির অভাবে বিদ্রোহিদল ছিন্ন ভিন্ন হইয়া ষে যেখানে পারিল, সরিয়া পড়িল। বৰ্দ্ধমান অঞ্চলে এতদিনে শান্তি স্থাপিত হইল। নিরীহ প্রজাবৃন্দ নিশ্বাস ফেলির বাচিল ( ১৬৯৮)। বিদ্রোহিগণ অতঃপর অভয়দানের ও বাদশাহী-সৈন্ত মধ্যে নিয়োগের প্রার্থনা করিলে আজিমুশ্বান সাধারণ ক্ষমা প্রচার করিলেন । বাদশাহ-সমীপে বিজয়বাৰ্ত্ত জ্ঞাপন করিয়া আজিমুশ্বান কিছু দিন বদ্ধমানে থাকিরা শান্তি-স্থাপনের প্রয়াস পাইলেন। বিদ্রোহিগণের অধিকৃত জমিদারী, জায়গীর, আয়ম প্রভৃতি পূৰ্ব্বাধিকারিগণকে প্রদান করিয়া কুত্রাপি বা নুতন বন্দোবস্ত করিয়া যুবরাজ প্রভূত অর্থসঞ্চয় করিলেন। বৰ্দ্ধমান অঞ্চল এইরূপে নিরুপদ্রব হইলে ঢাকা হইতে রণতরী আনাইয়া আজিমুশ্বান মহাসমারোহে সদলে ঢাকা যাত্রা করিলেন। বিপ্লবে বিপৰ্য্যস্ত দেশের সুব্যবস্থার জন্য এই সময়ে মনস্বী আরঙ্গজেব সুবিখ্যাত রাজস্ববিখ মুর্শিদকুলী থাকে দেওয়ান নিযুক্ত করিয়া বঙ্গে প্রেরণ করিলেন।