পাতা:বাঙ্গলার পরিচিত পাখী.djvu/১৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
বাঙ্গলার পরিচিত পাখী

দোয়েল-পত্নীও বেশ দূরে থাকে। কিন্তু পতিগতপ্রাণা দোয়েলজায়া পুরুষদোয়েলকে একেবারে ত্যাগ করিয়া যায় না, কিঞ্চিৎ ব্যবধান রক্ষা করিয়া সঙ্গে সঙ্গেই ফেরে। স্ত্রী-দোয়েলের দেহবর্ণে পুরুষদোয়েলের মত জৌলুস নাই। তবে স্ত্রী-পাখীর দেহের কালো অংশ ফিকে। দোয়েলজায়ার আদর বাড়িয়া যায় বসন্তকালে, কেন না সেই সময়টা প্রায় বেশীর ভাগ পাখীর মত এদেরও প্রজনন ঋতু। তখন দোয়েল মহাশয়ের মনে পড়ে যে সারা শীতকাল যে নীরব সঙ্গিনী ছায়ার মত পিছনে পিছনে ফিরিয়াছে তাহার মনোরঞ্জন করা কর্ত্তব্য। এবং তখন এই কর্ত্তব্যটি সে খুবই নিষ্ঠার সহিত পালন করে। কণ্ঠে তখন তার সুরের ধারা উচ্ছ্বসিত হইয়া উঠে; শাখা হইতে শাখান্তরে উড়িয়া পুচ্ছখানি গর্ব্বভরে বিস্তার করিয়া বেড়ায়। জীবন-সঙ্গীর রূপলালিত্যে ও কণ্ঠমাধুর্য্যে আত্মহারা হইয়া নীড়োপবিষ্টা দোয়েলপত্নী ডিম ফুটানোর একঘেয়ে কাজের অবসাদ ভুলিয়া থাকে। পুরুষ দোয়েলই সুরসিদ্ধ, স্ত্রীপাখীটির কণ্ঠে ধ্বনি নাই।

 স্ত্রী ও পুরুষ দোয়েল পরস্পরের জীবন-সঙ্গীই বটে। এক জোড়া পাখীর একটির মৃত্যু না ঘটিলে অপরটি আর অন্য সঙ্গী গ্রহণ করে না।—ইহা আমার শোনা কথা, নিজের অভিজ্ঞতালব্ধ নহে।

 বাগানের বৃক্ষশ্রেণীর নীচে যেখানে আলোছায়ার অনবরত লুকোচুরি চলে, সেইখানে দোয়েল সারাদিন বিচরণ করে। তাহার দেহের সাদাকালো বর্ণ সেই আলোছায়ার সঙ্গে খাপ খায়। চুপ করিয়া স্থিরভাবে যখন সে কোনও শাখাগ্রে বসিয়া থাকে, চট্‌ করিয়া সে নজরে ধরা পড়ে না। প্রকৃতি এইরূপেই তার সৃষ্ট জীবের জন্য শত্রুর হাত হইতে আত্মগোপনের ব্যবস্থা করিয়াছেন।

 দিবসের পূর্ব্বাহ্নেই দোয়েলের কণ্ঠকাকলী উচ্চগ্রামে থাকে।