পাতা:বাঙ্গলার পরিচিত পাখী.djvu/২৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
শামা
১১

 স্বাধীন অবস্থাতে দোয়েল মানুষের আশেপাশে স্বচ্ছন্দে বিচরণ করে, গান গায়, খাদ্য অন্বেষণ করে। শামা স্বাধীন অবস্থায় অত্যন্ত ভীরু। হয়তো ঘন পত্রবীথী মধ্যে বসিয়া প্রাণ ঢালিয়া গান করিতেছে, একটু কোথাও শব্দ হইল, অমনি অর্দ্ধপথে সঙ্গীত থামাইয়া শব্দের বিপরীত দিকে অন্ধের মত ছুট দেয়। অথচ এই পাখী যখন মানুষের গৃহে আসিয়া খাঁচার মধ্যে আশ্রয় পায়, তখন মানুষের সান্নিধ্যে একটুও বিচলিত হয় না। ইহাদের স্ত্রীপাখিটিও পতির নিঃশব্দ সঙ্গিনী। প্রজনন-ঋতুতে পুরুষশামা অপর পুরুষশামা কাছে দেখিলে অগ্নিশর্মা ও মারমুখো হইয়া উঠে। শ্রীযুক্ত সত্যচরণ লাহার পক্ষীগৃহে অনেক সময় আমরা প্রবেশ করিয়া শামাকে আহার দিতাম, খড়কুটা আগাইয়া দিতাম নীড় রচনার জন্য। সেই সময় আমি শামার শীষ অনুকরণ করিতাম: আমার শীষ শুনামাত্র পুরুষপাখী চঞ্চল হইয়া উঠিত। সে মনে করিত যে স্ত্রীশামাটির আর একজন বুঝি প্রণয়প্রার্থী আসিয়াছে। শেষে যখন বুঝিত যে আমারই শরীর অভ্যন্তর হইতে এই ধ্বনি উত্থিত হইতেছে তখন এই ঈর্ষান্বিত পাখী ভয় ত্যাগ করিয়া আমার মস্তকে ছোঁ মারিয়া চঞ্চুপুটে আঘাত হানিত।

 আশ্চর্য্যের বিষয় গভীর জঙ্গলবাসী এই পাখী, পক্ষিগৃহে নীড় রচনা ও সন্তান উৎপাদন করে। মুক্ত অবস্থায় বৃক্ষকোটরে নীড় রচনা করে। ভূমি হইতে দুই ফুট হইতে কুড়ি ফুট উর্দ্ধ পর্য্যন্ত ইহার নীড় তৈরী করে। অনেক সময় অন্য পাখীর পরিত্যক্ত কোটরও ইহারা বাছিয়া লয়। গর্ত্তটিতে তিন ইঞ্চি পুরু শুকনা পাতার গদি তৈয়ারী করিয়া তদুপরি ছোট ছোট কাঠি পাতিয়া তৃণদ্বারা আস্তৃত করিয়া নীড় তৈরী করে। তদুপরি গোটা চারেক ডিম্ব দেখিতে পাওয়া যায়। এই ডিমগুলি ক্ষুদ্র, সম্পূর্ণ গোলাকৃতি নয়—ডিমের রঙ ফিকে সবুজের