পাতা:বাঙ্গলার পরিচিত পাখী.djvu/৩৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
২২
বাঙ্গলার পরিচিত পাখী

তাহার জননী ভগিনী তাহাকে চক্ষু মুদ্রিত করিতে বলিয়া কাককে আহ্বানপূর্ব্বক, সে লইয়া যাইবে এই ভয় দেখাইয়া অন্ন গলাধঃকরণ করান। যতই বয়স বাড়িতে থাকে পাখিটির চৌর্য্যকুশলতায় ততই বিরক্ত হইতে থাকি। সহরের বালক যখন অনেক কান্নকাটি-লব্ধ পয়সার বিনিময়ে ঠোঙাভরা রসমুণ্ডি লইয়া উৎসাহে গৃহপানে ধাবিত হয়, তখন এই খেচর সহসা ছোঁ মারিয়া বালকের সব আনন্দ উৎসাহ ধূলিসাৎ করিয়া দেয়।

 আমাদের এই অতি-পরিচিত নিত্য সহচর পাখীকে আমরা যে শুধু ঘৃণা করি তাহা নহে, জগতের সৃষ্টিপ্রকরণে ইহাকে একটা অনাবশ্যক অত্যুক্তি বলিয়া বিবেচনা করি। এবং “যাকে দেখতে পারি না তার চলন বাঁকা” এই হিসাবে কাকের কণ্ঠ-ধ্বনিতে ভাবি অমঙ্গলের আশঙ্কা আরোপ করি।

 তাচ্ছিল্য, ঘৃণা ও অনবরত তাড়নায় পাখী দূরে থাক, সহজ মানুষই ধূর্ত্ত ও চোর হইয়া উঠে। বিরুদ্ধ পারিপার্শ্বিকের সহিত যুঝিয়া তাহাকে আত্মরক্ষা করিতে হয় বলিয়া কাক চোর, লোভী, ধূর্ত্ত, দুর্ম্মুখ। শুধু এই সকল দোষের জন্য কাককে পক্ষিসমাজের চণ্ডাল রূপে নির্দ্দেশ করা উচিত হইবে না। বিহঙ্গ পিনালকোডে চৌর্য্য আদৌ অপরাধ বলিয়া গণ্য নহে। বিশেষতঃ মানুষের সম্পত্তি অপহরণ করা পক্ষি সমাজে প্রশংসার কার্য্য। যেমন অনেক পাশ্চাত্য জাতির বিশ্বাস যে তাঁহাদের সুবিধার্থেই প্রাচ্য জগতের সৃষ্টি, নহিলে প্রাচ্য দেশবাসীর অস্তিত্বের কোনও ন্যায্য কারণ থাকে না—তেমনি পশুপক্ষিগণের মধ্যে বহু দার্শনিক মনে করে যে মানুষ তাহাদেরই সুবিধার জন্য সৃষ্ট হইয়াছে এবং সেই সুবিধাগুলি আদায় করিতে গেলে চতুরতা এবং চৌর্য্য অবলম্বন করিতেই হইবে।

 কাককে আমরা অবজ্ঞা ও অবহেলা করি বলিয়া ইহার জীবনের