বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:বিচিত্র জগৎ - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২২২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পানামা খাল ও অরণ্য ააwტ সে বলিল-মোটরবোট ও জিনিসপত্র এখানেই থাক, এদেশে চোর নাই, আসুন আমার সঙ্গে আমার কুটারে । আপনার ক্যামেরাটা আনুন, আমার একটা করাতের কারখানা আছে, তার ফটােগ্ৰাফ লাইবেন । নিবিড় জঙ্গলের মধ্যবৰ্ত্তী সুড়িপথ ধরিয়া দুজনে চলিলাম। সমস্ত পথ লোকটি তাহার করাতের কারখানার গল্প করিতে লাগিল। তাহার না কি খুব বড় কারখানা, এ অঞ্চলে এত বড় কারখানা নাই। বড় বড় দুটো স্কচ বয়লার বসাইতে তাহার বহু টাকা ব্যয় হইয়াছে, জাৰ্ম্মানি হইতে করাত আনান হইয়াছে-এই সব সংবাদ । এই সব জঙ্গল দুপুর বেলায় প্ৰায় নিস্তব্ধ ছিল। কিন্তু এখন বহু প্ৰকার জীবজন্তুর আওয়াজে মুখরিত হইয়া উঠিয়াছে। রাত্ৰি প্ৰায় দশটার কাছাকাছি। জঙ্গলের মধ্যে একটা ফাকা জায়গায় লোকটির ঘর। কাঠের দেওয়াল, কাঠের ছাদ । এদেশে সাধারণতঃ এ ধরণের ঘরই বেশী । হঠাৎ জঙ্গলের মধ্যে একটা কৰ্কশ ধ্বনি শুনিয়া জিজ্ঞাসা করিলাম-ওটা কোন জন্তুর রব ? লোকটির কাছে ও সব শব্দ নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপারের মধ্যে গণ্য। সে তাচ্ছিল্যের সুরে কছিল-ও কিছু না, পুমা কিংবা জাগুয়ার । তাহার স্ত্রী একটি কুকুট মারিয়া মাংস রাধিল । খাইবার সময় দেখিলাম, গৃহকত্রী রন্ধনকাৰ্য্যে বেশ পটু। তবে, ভোজ্যগুলির একটিও মার্কিন বা ইউরোপীয় ধরণে প্ৰস্তুত নয় । মাংসের কোল, কোলে নানা প্রকার শাকসব্জি ভাসিতেছে, টাটকা ফল, দুধ, নদীর মাছ, মিষ্টি আলু সিদ্ধ, কালো কাফি । খুব বড় বড় কয়েকটি পিয়ার খাইলাম, লণ্ডনে যার প্ৰত্যেকটির দাম পাচ শিলিং। আহারাদি শেষ করিয়া আমরা দুজনে কেরোসিন তৈলের লন্ঠনের সামনে বসিয়া গল্প-গুজব করিতে লাগিলাম। বৃদ্ধ কেবলই করাতের কারখানার গল্প করিতে পানামা ; জন্ম চায়, আমি অন্য কথা পাড়িয়া তাহা চাপা দিই। তাহার করাতের কারখানার একঘেয়ে গল্প শুনিতে শুনিতে আমার কােণ ঝালাপালা হইয়া গেল । পরদিন সকালে উঠিয়াই বৃদ্ধ বলিল-চলুন, আমার কারখানার ফটােগ্ৰাফ লাইতে হইবে। ঘণ্টাখানেক আবার চলিলাম নিবিড় জঙ্গলের পথে। পরে একটা জায়গায় পৌছিলাম, দেখিয়া মনে হইল, একটা লোহার কারখানা এরোপ্লেন হইতে বোমা ফেলিয়া চুৰ্ণ করিয়া দিয়াছে, এমনি তাহার ছন্নছাড়া মুক্তি। লোকটি গর্বের সহিত সেই ভাঙ্গাচোরা লোহার রাশি আঙ্গুল দিয়া দেখাইয়া বলিল-এই দেখুন। আমার করাতের কারখানা। কেমন বলুন লক্ষ্য করিয়া দেখিয়া মনে হইল, ১৯০০ সালে এই স্থানটি নিশ্চয়ই একটি করাতের কারখানা ছিল । তবে এখন তাহার বিশেষ কোন চিহ্ন নাই-দুটি মরিচা-ধর বয়লার ছাড়া । আর এক রাশ লোহা । তারপর কারখানার গল্পটা শুনিলাম।