বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:বিচিত্র জগৎ - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৮২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

হাওয়াই হইতে স্তানফ্রান্সিসকো ዓ $ সমুদ্রে আমার এরোপ্লেন যদি পড়ে যেত, কয়েকদিন জলের উপর ভেসে থাকতে পারি। তার ব্যবস্থা করেই হনোলুলু থেকে রওনা হই। এরোপ্লেনের পুচ্ছের দিকে যেখানে পেট্রোল ট্যাঙ্ক বসানো তার পেছনে একটা রবারের ভেলা আটকানো ছিল। কাৰ্বণ ডায়োক্সাইড গ্যাসভার টিউবের সাহায্যে ভেলাটা এক মিনিটের মধ্যে ফোলান যেত। ভেলার মধ্যে একটা মুখাৰ্মাটা। থলির মধ্যে টোমাটোর রস, চকোলেট, জমাট দুধের বড়ি, স্যাণ্ডউইচ ৪ 西司传可日 সমুদ্রে পড়লে এরোপ্লেন যদি না ডুবে যেত, এই রবারের ভেলায় চড়ে সমুদ্রে আমায় ভাসতে হ’ত। অন্য এরোপ্লেন বা জাহাজের দৃষ্টি আকৃষ্ট করবার জন্যে আমার কাছে লাল ও সবুজ হাউই ছিল। এ ছাড়া অনেকগুলো ছোট বেলুনে লাল রেশমের নিশান বাধা ছিল, শক্ত দড়ি দিয়ে বেঁধে এগুলো অনেক উঁচুতে উঠিয়ে দিলে লোকের দৃষ্টি अङ्किप्टे श्वांझ जस्त्रावना । আমি জানি অকূল সমুদ্রে এসবেও কিছু হয় না। বিপদ যখন আসবার হয়, সহস্র উপকরণেও তাকে এড়ানো যায় না। মানুষ জল না খেয়ে কতদিন বেঁচে থাকতে পারে আর আমার ছোট রবারের ভেলাতে কতটুকু জলই বা ধরে । দু' তিন দিনের মধ্যে কারো মনোযোগ আকর্ষণ করতে সক্ষম না হলে মৃত্যু ছিল অনিবাৰ্য্য। আকাশপথে এই আঠার ঘণ্টার মধ্যে আমি কি খেয়েছিলাম। এ প্রশ্ন আমায় অনেকে করেছেন । এইখানে প্ৰথমেই একটা কথা বলি। যে কোনও দায়িত্বপূর্ণ ও শ্রমসাধ্য কাজ করবার সময় বেশী কিছু খাওয়া উচিত নয়, একথা যদি সত্যি হয়, আকাশপথে বহুদূরে উড়ে যাওয়ার সময় যে খুব কিছু খাওয়া উচিত নয়, এটা আরও বেশী সত্যি । t আমি খেয়েছিলাম সামান্য একটু টােমাটাের রস, একটা ডিমসূিদ্ধ এবং থার্লোবােতলে আনীত এক পেয়ালা গরম কোকো। পৃথিবীপৃষ্ঠ হতে ৮০০০ ফুট উৰ্দ্ধে প্ৰশান্ত মহাসমুদ্রের ওপর ঘনীভূত মেঘ ও কুয়াসার মধ্যে বসে এক পেয়ালা গরম কোকো খাওয়ার অভিজ্ঞতা আমার কাছে সৰ্ব্বাপেক্ষা অদ্ভুত বলে মনে হয়েছে। এ সব আয়াসীসাধ্য কাজের সময় প্রকৃতই খাদ্যের বিশেষ কোন দরকার হয় না। খাওয়ার কথা মনেই থাকে না, মন সম্পূর্ণ অন্য চিন্তায় ব্যাপৃত থাকে। অতিরিক্ত আহারে এ অবস্থায় চিন্তাশক্তির জড়তা আসে। আমার এরোপ্লেনখানা তিন বছরের পুরানো। এর মধ্যে দুজন যাত্রীর বসবার স্থান ছিল, কিন্তু দূর ভ্রমণের জন্যে ঐ যাত্রীদের আসনের বদলে সেখানে পেট্রোলের ট্যাঙ্ক বসিয়ে নেওয়া হয়েছিল। তিন বছর আগে এই এরোপ্লেনেই আমি আটলান্টিক পার হই। কুড়ি ঘণ্টা চলাবার উপযুক্ত পেট্রোল ভরে নেওয়ার যায়গা আছে এতে। এই এরোপ্লেনেই এক বার সমগ্ৰ পৃথিবী ভ্ৰমণ করবার ইচ্ছা করেছি, যদিও জানি না সেটা কতদূর সম্ভব হয়ে ॐव !