পাতা:বিচিত্র প্রবন্ধ-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৭২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
১৫৮
বিচিত্র প্রবন্ধ

ভদ্রলোকেরই মতো বোধ হচ্চে। যুগল ক্যাবিনের অধীশ্বর হয়ে খুসি আছি। পূব ক্যাবিনে দিন কাটে পশ্চিম ক্যাবিনে রাত্রি অর্থাৎ আমার আকাশের মিতার পন্থা অবলম্বন করেছি—পূর্ব্বদিগন্তে ওঠা পশ্চিমদিগন্তে পড়া। আমার সহচরত্রয় ভালোই আছে—ত্রিবেণীসঙ্গমের মতো উত্তর প্রত্যুত্তর হাস্য প্রতিহাস্যের কলধ্বনি তুলে তাদের দিন বয়ে চলেছে। আমি আছি ঘরে, তারা আছে বাইরে। আমার অভিভাবক স্থানীয় সঙ্গীটি মনে করছে এখানে আমার যা-কিছু সুযোগ সুবিধা সমস্তই তার নিজের ব্যবস্থার গুণে। আমি তার প্রতিবাদ করিনে—প্রতিবাদের অভ্যাসটা খারাপ—স্থানবিশেষে সংসারে ছোটো ছোটো অসত্যকে যারা মেনে নিতে পারে না, তারা অশান্তি ঘটায়। এই জন্যেই ভগবান মনু বলেছেন—সে কথা থাক্।


২৩ ফাল্গুন, ১৩৩৫

 জাহাজ জিনিষটাই আগাগোড়া চলে, কিন্তু আর সব চলাকেই সে সীমাবদ্ধ ক’রে রেখেছে। এই বাসাটুকুর বেড়ার মধ্যে সময়ের গতি অত্যন্ত মন্দবেগে। সময়ের এই মন্দাক্রান্তা ছন্দে যে সব ঘটনা অত্যন্ত প্রধান হয়ে প্রকাশ পায় অন্যত্র ছন্দের বেগে সেগুলো চোখেই পড়তে চায় না। এই মুহূর্ত্তেই ডাঙার মানুষ যে সব খেলা খেল্‌ছে তা প্রচণ্ড খেলা-জীবনমরণ নিয়ে ছোড়াছুড়ি। এখানে দুই পক্ষের খেলোয়াড় বিড়ে নিয়ে ছোঁড়াছুঁড়ি করছে। তাতেই উৎসাহ উত্তেজনার অন্ত নেই। এই সব দেখ্‌লে একথা স্পষ্ট ক’রেই বোঝা যায় যে স্থানান্তরকে লোকান্তর বলে না। বিশেষ বিশেষ বেড়া বেঁধে সময়ের গতির মধ্যে