পাতা:বিচিত্র প্রবন্ধ-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৯০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
১৭৬
বিচিত্র প্রবন্ধ

লাগবার সম্বন্ধ নানা প্রকার রূপকে নিয়ে ভাবকে নিয়ে গভীর হয়ে ছড়িয়ে পড়েছে, একে অবজ্ঞা করা চলে না। এ যে কেবল সুখের, আরামের তা নয়, এর মধ্যে কঠোরতা আছে, বেসুর আছে, দ্বন্দ্ব আছে। সব সুদ্ধ জড়িয়ে এ আমাদের চৈতন্যকে জাগিয়ে রেখেছে, নানা রঙে রঙিয়ে রেখেছে। এই যেমন প্রকৃতির সঙ্গে আমাদের রসবোধের সম্বন্ধ মানুষের সঙ্গেও তেমনি। সে আরো বিপুল, আরো গভীর, তার সুখদুঃখের তীব্রতা আরো প্রবল, তার মধ্যে পদে পদে অভাবনীয়তা, তার ঘাতপ্রতিঘাত আমাদের সমস্ত দেহমন প্রাণকে নাড়া দিয়ে তোলে। এই নিয়ে আমাদের চৈতন্যের বিচিত্র অভিজ্ঞতা। সেই অভিজ্ঞতার মূল্য অনুসারে আমাদের ব্যক্তিস্বরূপ সম্পদবান হয়ে উঠেছে। মানুষের এই বহুবিচিত্র প্রাণবান অভিজ্ঞতার শ্রেষ্ঠ মূল্য প্রকাশ পাচ্চে তার সাহিত্যে তার কলাবিদ্যায়। এই অভিজ্ঞতা রসের অভিজ্ঞতা, যাকে ইংরেজিতে বলে Emotion। এ বুদ্ধির অভিজ্ঞতা নয়, প্রয়োজনের অভিজ্ঞতা নয়।

 শক্তির প্রকাশ দেখলেও মানুষের বিস্ময়মিশ্রিত আনন্দ হয়, সার্কাসে ঘোড়ার উপর ডিগবাজি খেলা দেখলে হাততালি দিয়ে ওঠে। এর একটা হেতু আছে, সেই হেতুটা হচ্চে দুঃসাধ্যসাধন; তাসের খেলার ভোজবাজির মধ্যেও সেই হেতু আছে, কী ক’রে কী হোলো বোঝা গেল না ব’লে মজা লাগ্‌ল। কিন্তু আমার পলাশ গাছে যখন ফুল ফোটে তখন সে কোনো শক্তির ডিগ্‌বাজির ধাক্কায় আমাদের চৈতন্যকে তরঙ্গিত করে না। “Love is enough” ভালোবাসা ভালোলাগা আপনাতেই আপনি পর্য্যাপ্ত।

 মানুষের সব-কিছুর মতে এই ভালোলাগারও একটা চর্চ্চা আছে, একটা বিদ্যা আছে। বিশ্বপ্রকৃতি থেকে মানবপ্রকৃতি থেকে বাছাই ক’রে সাজাই ক’রে মানুষ আপনার একটি বিশেষ আনন্দ-লোক আপনি সৃষ্টি করে তুলছে। দেশে দেশে কত কাব্য কত ছবি কত মূর্ত্তি কত মন্দির