পাতা:বিচিত্র প্রবন্ধ-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৯৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
চিঠির টুক্‌রি
১৮১
শান্তিনিকেতন
১৮আশ্বিন, ১৩৪০


 শরৎকালের আলোয় ছুটির আমন্ত্রণ আকাশে আকাশে। কোনো কাজ না করবার মতো মেজাজে আছি, অথচ কাজ এসেছে ভিড় ক’রে। মন ক্লান্ত হয়ে আছে অথচ কলমের বিশ্রাম নেই।

 আমি মাটির মানুষ, তার মানে এ নয় যে ভালোমানুষ আমি। তার মানে এই যে, ধরণীর মাটির পাত্র থেকেই আমি অমৃত পান করি-জলস্থল আকাশে আমার মনের খেলাঘর। মেয়েরা শ্বশুর ঘরের উপর বিরক্ত হোলেই বাপের ঘরে চলে যায়। তেমনিতরো মনের ভাব নিয়েই মানুষ দৌড় মারতে চায় বৈকুণ্ঠের দিকে—এই মর্ত্ত্য পৃথিবীর উপর আমার যদি তেমন বিতৃষ্ণা হোত আমিও তাহোলে বৈকুণ্ঠের প্রতি বিশ্বাসকে আঁকড়ে ধরতুম। দরকার হয়নি ব’লে কল্পনাও করিনে। আনন্দরূপমমৃতং যদ্বিভাতি—আমার কাছে এই মর্ত্যের রূপই আনন্দরূপ অমৃতরূপ—একে অবজ্ঞা করি এত বড়ো ধৃষ্টতা আমার নেই। এর চেয়ে আরো কিছু উঁচু আছে বলে যে মনে করে, তার নিজের চোখে দোষ আছে। আমার এই উত্তরের দিকের জানলা দিয়ে নীল আকাশ ঢেলে দিচ্চে তার আলোকসুধা, পূর্ব্বদিকের খোলা দরজার সামনে উদার পৃথিবী তার শ্যামল আমন্ত্রণ প্রসারিত করে ধরেছে—আমি এই সোনার ধারা সবুজধারার মোহনায় ব’সে দুই চক্ষুকে ছাড়া দিয়েছি, বেলা যাচ্ছে কেটে—আর কী চাই আমার বুঝতেই পারিনে যতসব হতবল মন্ত্র। এতবড়ো সুস্পষ্টতার মধ্যেও উপলব্ধি যদি না হয় তবে কিছুতেই হবে না।