পাতা:বিচিত্র প্রবন্ধ-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
২০
বিচিত্র প্রবন্ধ

সংক্ষিপ্ত সৌরজগৎ আশ্চর্য্য। আরম্ভ বৃহৎ, পরিণাম ক্ষুদ্র। আবর্ত্তের মুখ অতি বৃহৎ, অবর্ত্তের শেষ বিন্দুমাত্র। সুবিশাল জগৎ ঘুরে ঘুরে এই ক্ষুদ্রত্বের দিকে বিন্দুত্বের দিকে চলে। কেন্দ্রের মহৎ আকর্ষণে পরিধি সংক্ষিপ্ত হয়ে কেন্দ্রত্বে আত্মবিসর্জ্জন করতে যায়।

 যত বৃহৎ হই তত দেশকালের অধীন হোতে হয়। আয়তন নিয়ে আমাদের নিরন্তর যুদ্ধ। কার সঙ্গে? দানব কাল ও দানব দেশের সঙ্গে। দেশকাল বলে—আয়তন আমার; আমার জিনিষ আমাকে ফিরিয়ে দাও। অবিশ্রাম লড়াই ক’রে অবশেষে কেড়ে নেয়। শ্মশানক্ষেত্রে তার ডিক্রিজারি।

 কিন্তু আমরা জানি আমরা মৃত্যুকে জিতব। অর্থাৎ দেশকালকে অতিক্রম করব। মনুষ্যের অভ্যন্তরে এক সেনাপতি আছে। সে যুদ্ধ করছে। প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ মরছে কিন্তু যুদ্ধের বিরাম নেই। আমরা সংহতিকে অধিকার ক’রে ব্যাপ্তিকে জিতব—মনুষ্যত্বের এই সাধনা।

 সংহতিকে অধিকার করাই শক্ত। আমাদের হৃদয় মন বাপের মতো। চারদিকে ছড়িয়ে আছে। হু হু ক’রে ব্যাপ্ত হয়ে পড়া যেমন বাপের স্বাভাবিক গুণ, আমরাও তেমনি স্বভাবতই চারদিকে বিক্ষিপ্ত হয়ে পড়ি। অভ্যন্তরে সুদৃঢ় আকর্ষণশক্তি না থাকলে আপন হয়ে আমরা পর হয়ে যাই। আপনাকে বিন্দুতে নিবিষ্ট করাই শক্ত। যোগীরা এই বিন্দুমাত্রে স্থায়ী হবার জন্য বৃহৎ সংসারের আশ্রয় ছেড়ে সূচ্যগ্রস্থানের জন্যই লড়াই করেন। তাঁরা বিন্দুর বলে ব্যাপককে অধিকার করবেন। সঙ্কীর্ণতার বলে পরিকীর্ণতা লাভ করবেন।

 সংহত দীপশিখা তার আলোকে সমন্ত গৃহ অধিকার করে। কিন্তু সেই শিখা যখন প্রচ্ছন্ন উত্তাপ আকারে গৃহের কড়িতে বরগায় তার উপকরণে ব্যাপ্ত হয়ে থাকে তখন গৃহই তাকে বন্ধ ক’রে রাখে, সে