পাতা:বিচিত্র প্রবন্ধ-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
৪৬
বিচিত্র প্রবন্ধ

 —আমি একটুখানি নড়িয়া-চড়িয়া পাশবালিশ আর একটু সবলে জড়াইয়া ধরিয়া কহিলাম, তার পরে?

 দিদিমা কহিলেন, তার পরে ছেলেটি পুঁথি-হাতে প্রতিদিন পাঠশালে যায়।

 এমনি করিয়া গুরুমহাশয়ের কাছে নানা বিদ্যা শিখিয়া ছেলেটি ক্রমে যত বড় হইয়া উঠিতে লাগিল ততই তাহার সহপাঠীরা তাহাকে জিজ্ঞাসা করিতে লাগিল, ঐ যে সাতমহল বাড়িতে তোমাকে লইয়া থাকে সেই মেয়েটি তোমার কে হয়?

 ব্রাহ্মণের ছেলে তো ভাবিয়া অস্থির—কিছুতেই ঠিক করিয়া বলিতে পারে না মেয়েটি তাহার কে হয়। একটু একটু মনে পড়ে একদিন সকালে রাজবাড়ির দ্বারের সম্মুখে শুকনা কাঠ কুড়াইতে গিয়াছিল—কিন্তু সেদিন কী একটা মস্ত গোলেমালে কাঠকুড়ানো হইল না। সে অনেক দিনের কথা, সে কি কিছু মনে আছে? এমন করিয়া চারি-পাঁচ বৎসর যায়। ছেলেটিকে রোজই তাহার সঙ্গীরা জিজ্ঞাসা করে, আচ্ছা ঐ যে সাতমহলা বাড়িতে পরমারূপসী মেয়েটি থাকে ও তোমার কে হয়?

 ব্রাহ্মণ একদিন পাঠশালা হইতে মুখ বড়ো বিমর্ষ করিয়া আসিয়া রাজকন্যাকে কহিল, আমাকে আমার পাঠশালার পোড়োরা প্রতিদিন জিজ্ঞাসা করে—ঐ সাতমহলা বাড়িতে যে পরমা সুন্দরী মেয়েটি থাকে সে তোমার কে হয়? আমি তাহার কোনো উত্তর দিতে পারি না। তুমি আমার কে হও বলো!

 রাজকন্যা বলিল, আজিকার দিন থাক্‌ সে কথা আর এক দিন বলিব।

 ব্রাহ্মণের ছেলে প্রতিদিন পাঠশালা হইতে আসিয়া জিজ্ঞাসা করে, তুমি আমার কে হও?