পাতা:বিদ্যাসাগর-প্রসঙ্গ.pdf/১৫০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১১৬
বিদ্যাসাগর-প্রসঙ্গ

দৃঢ়চিত্ততার আর একটি উদাহরণ। দেশের সমগ্র রক্ষণশীল শক্তি সংহত হইয়াও তাঁহাকে দমাইতে পারে নাই। জীবন বিপন্ন হইয়াছে, কিন্তু সঙ্কল্প টলে নাই। পাশ্চাত্য ভাবাপন্ন কোনো ইংরেজীওয়ালা এই সংস্কারে হাত দিলে তেমন কিছু বলিবার থাকিত না। কিন্তু একজন অধ্যাপক পণ্ডিতের পক্ষে এরূপ কার্যে অগ্রণী হওয়া সত্যই আশ্চর্য্যের বিষয়। এই কাজটিকে তিনি জীবনের শ্রেষ্ঠ কাজ বলিয়া মনে করিতেন। পুত্র নায়ণচন্দ্রের বিবাহ উপলক্ষে তিনি এক পত্রে ভ্রাতা শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্নকে লিখিতেছেন,—

“বিধবা-বিবাহের প্রবর্ত্তন আমার জীবনের সর্ব্ব প্রধান সৎকর্ম্ম, জন্মে ইহার অপেক্ষা অধিক আর কোন সৎকর্ম করিতে পারিব, তাহার সম্ভাবনা নাই; এ বিষয়ের জন্য সর্বস্বান্ত করিয়াছি এবং আবশ্যক হইলে প্রাণান্ত স্বীকারেও পরাঙ্মুখ নই।[১]...আমি দেশাচারের নিতান্ত দাস নহি, নিজের বা সমাজের মঙ্গলের নিমিত্ত যাহা উচিত বা আবশ্যক বোধ হইবেক, তাহা করিব; লোকের বা কুটুম্বের ভয়ে কদাচ সঙ্কুচিত হইব না।”

 বিদ্যাসাগর যাহা ধরিতেন তাহা ঐকান্তিকভাবে সম্পন্ন করিতেন। বাধা-বিঘ্ন, বিরোধ, অভাব তিনি গ্রাহ্য করিতেন না। সংস্কৃত কলেজের অধ্যক্ষতার গুরুভার যখন তিনি স্কন্ধে বহন করিতেছেন, নিজের দায়িত্বে তখন তিনি গ্রামে গ্রামে বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করিতে পশ্চাৎপদ হন নাই। ভারত-সরকারের শেষ সম্মতির জন্য অপেক্ষা করিয়া বসিয়া থাকিবার লোক তিনি ছিলেন না। সরকার এবিষয়ে তাঁহার ঋণ


  1. বিধবা-বিবাহ ও বাল্য-বিবাহ সম্বন্ধে বাদশাহ আকবর বলিতেন—শৈশব বিবাহ ভগবানের চক্ষে অপ্রীতিকর, কেননা বিবাহের মূল উদ্দেশ্যই দূরে রহিল। তদ্বাতীত ইহা ক্ষতিকর। যে-ধর্মে বিধবা বিবাহ নিষিদ্ধ, সেখানে কষ্ট গভীর।” "Harpy Sayings of Akbar,” Ain-i-Akbari, iii. 397.