বিপক্ষ প্রতিবাসিবর্গ উহাদের প্রতি নানারূপ অত্যাচার করিয়াছিল। অতঃপর অত্যাচার না হইতে পারে, তদ্বিষয়ে রাজপুরুষগণ সতর্ক হইয়াছিলেন। বিদ্যাসাগর মহাশয়ও উহাদিগকে বিপক্ষের অত্যাচার হইতে রক্ষার জন্য, অকাতরে যথেষ্ট অর্থব্যয় করিয়াছিলেন। তৎকালীন জাহানাবাদের ডেপুটী মাজিষ্ট্রেট মৌলবি আবদুল লতিব খাঁন বাহাদুর সম্পূর্ণরূপ আনুকূল্য করেন; তিনি পুলিশ দ্বারা সাহায্য না করিলে, প্রতিবাসীরা বিবাহসময়ে বিস্তর অনিষ্টসাধন করিতে পারিত; একারণ, আমরা কস্মিকালেও উক্ত মহাত্মা মৌলবী আবদুল লতিব খাঁন বাহাদুরের নাম বিস্মৃত হইতে পারিব না। ১২৬৬ সাল হইতে ১২৭২ সাল পর্যন্ত ক্রমিক বিস্তর বিধবা কামিনীর বিবাহকার্য্য সমাধা হয়। ঐ সকল বিবাহিত লোককে বিপদ্ হইতে রক্ষার জন্য, অগ্রজ মহাশয়, বিশেষরূপ যত্নবান্ ছিলেন; উহাদিগকে মধ্যে মধ্যে আপনার দেশস্থ ভবনে আনাইতেন। বিবাহিতা ঐ সকল স্ত্রীলোককে যদি কেহ ঘৃণা করে, একারণ জননীদেবী ঐ সকল বিবাহিতা ব্রাহ্মণজাতীয় স্ত্রীলোকের সহিত একত্র একপাত্রে ভোজন করিতেন। মধ্যে মধ্যে ঐ সকল স্ত্রীলোেক আমাদের বাটীতে আসিলে, জননীদেবী এবং বাটীর অপরাপর স্ত্রীলোকেরা উহাদের সহিত একত্র সমভাবে পরিবেশনাদি করিয়া, ব্রাহ্মণদিগকে ভোজন করাইত।
সন ১২৭০।৭১।৭২।৭৩ সালে জেলা মেদিনীপুর মহকুমায় গড়বেতার অন্তঃপাতী রায়খা, বাছুয়া, লেদাগমা, কেশেডাল, রসকুণ্ডু, শ্রীরামপুর প্রভৃতি গ্রামে বহুসংখ্যক কায়স্থজাতীয় বিধবা-কন্যার বিবাহ-কার্য্য সমাধা হয়। ঐ সময়েই বর্দ্ধমান জেলার অন্তঃপাতী যৌগ্রামের নিমাইচরণ সিংহের সহিত জাহানাবাদ মহকুমার অন্তঃপাতী যদুপুর গ্রামের রামকৃষ্ণ বসুর বিধবা-তনয়ার কলিকাতায় বিবাহ হয়। অগ্রজ মহাশয়, উহাদের সাংসারিক-ক্লেশ নিবারণের জন্য যথাসাধ্য আনুকূল্য করিয়া আসিয়াছেন। বিদ্যাসাগর মহাশয়ের জীবনের প্রধান উদ্দেশ্য, স্ত্রীজাতির কষ্ট-নিবারণ। তদ্বিষয়ে তাহাকে যথাসর্বস্ব ব্যয় করিতেও কখন কাতর বা কুষ্ঠিত হইতে দেখা যায় নাই।