তুমি বৃথা কেন ভ্রমণ করিতেছ? স্বদেশে যাও, তোমার বংশে এক সুপুত্র জন্মগ্রহণ করিয়াছেন, তিনি তোমার বংশের তিলক হইবেন। তিনি সাক্ষাৎ দয়ার সাগর ও অদ্বিতীয় পণ্ডিত হইয়া, নিরন্তর বিদ্যাদান ও নিরুপায় লোকদিগের ভরণপোষণাদির ব্যয়নির্ব্বাহ দ্বারা তোমার বংশের অনন্তকালস্থায়িনী কীর্ত্তি স্থাপন করিবেন। রামজয়, পাহাড়ের মধ্যে নিশীথসময়ে এরূপ অসম্ভব স্বপ্ন-দর্শন করিয়া চিন্তা করিতে লাগিলেন যে, আমি বহুদিন অতীত হইল সংসারাশ্রমে জলাঞ্জলি দিয়া, নিভৃত স্থানে ঈশ্বরারাধনায় মনপ্রাণ সমর্পণ করিয়া কালাতিপাত করিতেছি। এক্ষণে তাহারা কি করিতেছে ও কে আছে না আছে, তাহাও জানি না। এবম্বিধ চিন্তায় নিমগ্ন হইয়া পুনর্ব্বার নিদ্রাভিভূত হইলে, কে যেন বলিয়া দিল, তুমি পরিবারগণের নিকট প্রস্থান কর, আর বিলম্ব করিও না; তোমার প্রতি ঈশ্বর সদয় হইয়াছেন। নিদ্রাভঙ্গ হইলে, নানা প্রকার ভাবিয়া চিন্তিয়া, রামজয় স্বদেশাভিমুখে যাত্রা করিলেন। অনবরত ৬ মাস পদব্রজে গমন করিয়া, বীরসিংহায় সমুপস্থিত হইয়া শুনিলেন, তাঁহার পুত্র ঠাকুরদাস কলিকাতায় বিষয়কর্ম্মে নিযুক্ত থাকিয়া সংসার প্রতিপালন করিতেছেন। জ্যেষ্ঠপুত্র ঠাকুরদাসের ও কনিষ্ঠ কালিদাসের বিবাহ কার্য্য সম্পন্ন হইয়াছে এবং জ্যেষ্ঠপুত্র ঠাকুরদাসের পত্নী গর্ভবতী হইয়া অবধি উন্মাদগ্রস্তা হইয়াছেন। অনন্তর রামজয় দেশে আগমন করিয়াছেন, এ সংবাদ কলিকাতায় পুত্রদ্বয়কে লেখা হইল। সংবাদ-প্রাপ্তিমাত্রেই বহুকালের পর পিতৃসন্দর্শনার্থে ঠাকুরদাস ও কালিদাস কলিকাতা হইতে বীরসিংহায় আগমন করিলেন।
পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/১৭
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
উপক্রমণিকা।
১৩