বন্যার জলে প্লাবিত হওয়ায়, ধান্য জন্মে নাই। কয়েক বৎসর বন্যায় ধান্য না হওয়ায়, প্রজাবৰ্গ নিতান্ত নিঃস্ব হইয়াছে; বিশেষতঃ ধান্যের ভূমি সকল বন্যায় বালুকাময় স্থান হইয়াছে। সুতরাং ক্রমশঃ গ্রামবাসীর মধ্যে অনেকেই পৈতৃক বাসস্থান পরিত্যাগপূর্বক, স্থানান্তরে বাস করিতে লাগিলেন। সন ১২৮৯ সাল হইতে ৯৭ সালের আশ্বিনমাস পর্য্যন্ত এই আট বৎসর কাল, উক্ত গ্রামবাসী জ্ঞাতি শ্রীঅধরচন্দ্র ভট্টাচার্য্য, শ্রীষজ্ঞেশ্বর ভট্টাচার্য্য, শ্রীনবরাম ভট্টাচার্য্য, মৃত হারাধন বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিবারসমূহ নিরুপায় হইয়া, প্রতিবৎসর বন্যার সময় প্রায় চারি মাস কাল কলিকাতায় দাদার বাটীতে অবস্থিতি করেন। দাদা, বিপদাপন্ন ও স্বয়ং-সমাগত ঐ সকল ব্যক্তিদিগকে সমাদরপূর্ব্বক গ্রহণ করিয়া, উহাদের মধ্যে প্রায় পচিশ জনকে নিজ বাটীতে রাখিয়া, ভরণপোষণ করিতে লাগিলেন; অবশিষ্ট লোকদিগকে কিছু কিছু নগদ টাকা দিতেন, তদ্ব্বরা তাঁহারা অপর স্থানে ভোজন করিতেন। বন্যায় ভগ্ন-ভবন পুনঃ-সংস্করণ জন্য অনেককেই টাকা দিতেন। ক্রমিক চারি মাসকাল প্রত্যত দুই বেলা প্রায় পঞ্চাশ জন লোককে বাটীতে ভোজন করাইতেন।
নিকট-জ্ঞাতি হারাধন বন্দ্যোপাধ্যায়, কয়েকটি নাবালক পুত্র ও কুমারী কন্যা, বিধবা ভগিনী ও ভাগিনেয় রাখিয়া লোকান্তরিত হন। তাঁহার পরিবারবর্গের প্রতিপালনের কিছুমাত্র সংস্থান ছিল না; এজন্য অগ্রজ মহাশয়, মাসে মাসে ১৫৲ টাকা মাসহরা দিতেন। ৭০০৲ টাকা দিয়া ইহাঁর কন্যার বিবাহকার্য্য সমাধা করেন, এবং নুতন বাটী প্রস্তুত জন্য ১০০৲ টাকা প্রদান করিয়াছিলেন।
দাদা দুগ্ধ পান করিতেন না; কিন্তু প্রতি মাসে উপরি লোক ও বাটার অপরাপর লোকের জন্য প্রায় ৮০৲ টাকার দুগ্ধ ক্রয় করিতেন। ভোজনের সময় প্রায় দেখি, যাহারা অপর স্থানে চাকরি করিতেছেন, তাহারা ভোজনের সময় দুই বেলা আসিয়া ভোজন করেন; কতকগুলি ছেলেকেও দেখিতে পাই, তাহারা দাদার বাটীতে আহার করিয়া; বিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করিয়া থাকে।