অর্দ্ধরাত্র সময়ে ভগবান্ ত্রিলোকনাথ দেবকীর গর্ভ হইতে আবির্ভূত হইলেন। তৎকালে দিক্ সকল প্রসন্ন হইল, গগনমণ্ডলে নির্ম্মল নক্ষত্রমণ্ডল উদিত হইল, গ্রামে নগরে নানা মঙ্গল বাদ্য হইতে লাগিল। নদীতে নির্ম্মল জল ও সরোবরে কমল, প্রফুল্ল হইল। বন উপবন প্রভৃতি মধুর মধুকরগীতে ও কোকিলকলকলে অমোদিত হইল এবং শীতল সুগন্ধি মন্দ মন্দ গন্ধবহ বহিতে লাগিল। সাধুগণের আশয় ও জলাশয় সুপ্রসন্ন হইল। দেবলোকে দুন্দুভিধ্বনি হইতে লাগিল। সিদ্ধ, চারণ, কিন্নর, গন্ধর্ব্বগণ গীতিস্তুতি করিতে লাগিল। বিদ্যাধরীগণ অপ্সরাদিগের সহিত নৃত্য করিতে লাগিল। দেব ও দেবর্ষিগণ হর্ষিতমনে পুষ্পবর্ষণ করিতে লাগিল। মেঘসকল মন্দ মন্দ গর্জ্জন করিতে লাগিল।”
কেবল সংস্কৃত-ভাযাভিজ্ঞ পণ্ডিতের রচিত বাঙ্গালা ভাষায় এ পরিপাটী কি কম প্রশংসনীয়। সংস্কৃতে অভিজ্ঞ হইলেই যে এরূপ বাঙ্গালা ভাষা লিখিবার শক্তি হয়, এ কথা বলিতে পারিনা। রাজা রামমোহন রায়, রাজা রাজেন্দ্রলাল মিত্র ও পাদরী কৃষ্ণ মোহন বন্দ্যোপাধ্যায় তো সংস্কৃত ভাষায় অল্প-বিস্তর অধিকার লাভ করিয়াছিলেন। তাঁহারা বাঙ্গালা গদ্য-সাহিত্যের পুষ্টিসাধন জন্য সামান্য প্রয়াস পান নাই। বাঙ্গালা ভাষার পুষ্টিসাধনকল্পে তাঁহারাও কম সহায় নহেন। সে জন্য তাঁহারা বিদ্যাসাগর মহাশয়ের ন্যায় চিরস্মরণীয় হইবার যোগ্যপাত্র, সন্দেহ নাই।[১]
- ↑ বিদ্যাসাগর মহাশয়ের পাঠ্যাবস্থায় ১৮৩৩ খৃষ্টাব্দের ২৭শে সেপ্টেম্বর রাজা রামমোহন রায় বিলাতে ব্রিষ্টলসহরে ৬১ বৎসর বয়সে মানবলীলা সংবরণ করেন। রাজা রাজেন্দ্রলাল মিত্র ও পাদরী কৃষ্ণমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়, বিদ্যাসাগরের সময়ে বাঙ্গালা সাহিত্যের প্রসারে প্রবৃত্ত ছিলেন। ইঁহারা উভয়ে