বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র - প্রফুল্লরঞ্জন রায় - শ্যামদাস বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র
১৩

যাপন করেন। সন্ধ্যাসধর্ম্মের এই দুরবস্থা দেখিয়া সুভাষচন্দ্র বীতশ্রদ্ধ হইয়া গৃহে ফিরিলেন। সুভাষচন্দ্রের জীবনীকার লিখিয়াছেন, “মহাত্মা গান্ধী তখন পর্য্যন্ত কৌপিন মাত্র অবলম্বন করেন নাই——তরুণ ব্যারিষ্টার হইয়া অর্থোপার্জ্জনের স্বপ্ন দেখিতেছেন, যুবক জওহরলাল তখন হ্যারো এবং ক্যাম্ব্রিজে টেনিস খেলায় মত্ত, যমুনালাল বাজাজ তখনও রাও বাহাদুর উপাধি বর্জ্জন করেন নাই—তখনও তিনি অর্থ সঞ্চয়ের চিন্তায় মগ্ন—বাঙ্‌লার ছেলে সুভাষচন্দ্র ঠিক এই সময়ে সন্ন্যাসীর বেশে কী এক আধ্যাত্মিক প্রেরণায় নিরুদ্দেশের পথে ঘুরিয়া বেড়াইতেছিলেন!

 বাপ মায়ের অঞ্চলের নিধি সুভাষচন্দ্র আবার গৃহে ফিরিলেন। আত্মীয় স্বজন সকলেই মহা উৎকণ্ঠিত। শত খোঁজখবর করিয়াও তাঁহার কোন সন্ধান পান নাই। পিতামাতার সহিত সুভাষচন্দ্রের পুনর্ম্মিলনের দৃশ্যটি অত্যন্ত করুন ও মর্ম্মস্পর্শী। এই সম্বন্ধে সুভাষচন্দ্রের একখানি চিঠি হইতে কিয়দংশ উদ্ধৃত করিতেছি। “ট্রাম হইতে নামিয়া বুক উঁচু করিয়া বাড়ীতে ঢুকিলাম। মামা ও অপর একজন পরিচিত ভদ্রলোকের সহিত বাহিরের ঘরে দেখা হয়। তাঁহারা একটু আশ্চর্য্য হইলেন। মার কাছে খবর গেল—অর্দ্ধেক পথে তাঁহার সঙ্গে দেখা। প্রণাম করিলাম—তিনি থাকিতে না পারিয়া কাঁদিতে লাগিলেন। পরে এইমাত্র বলিলেন, “আমার মৃত্যুর জন্যই তোমার জন্ম!” বাবার সঙ্গে দেখা। তাঁহাকে প্রণাম করিলে পর তিনি আলিঙ্গন করিয়া নিজের ঘরের দিকে লইয়া চলিলেন। অর্দ্ধেক পথে কাঁদিয়া ফেলিলাম এবং বাবাও অনেকক্ষণ আমাকে ধরিয়া কাঁদিতে লাগিলেন। তিনি শুইয়া পড়িলেন—আমি ধীরে ধীরে পায়ে হাত বুলাইতে লাগিলাম। তারপর জিজ্ঞাসা করিলেন, কোথায় গিয়াছিলাম। সমস্ত খোলাখুলি বলিলাম। কেবল বলিলেন, একখানা চিঠি দেও নাই কেন?”